দেশ-দুনিয়ার শান্তিকামী মানুষ বাংলাদেশের বর্তমান শ্বাসরুদ্ধকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবসান চায়। মুক্তি চায় অপশাসনের কবল থেকে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতার কাঙালরা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। এ ব্যাপারে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ও সংঘর্ষপ্রবণ। আগামী নির্বাচন কোন ব্যবস্থায় অর্থাৎ কোন ধরনের সরকারের অধীনে হবে তা নিয়েই বিরোধ এখন তুঙ্গে।
ক্ষমতাসীন লীগ সরকার তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো, দেশের চিন্তাশীল মানুষ, সর্বোপরি আমজনতার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা ও মনোভঙ্গির কোনো তোয়াক্কা না করে নিজেদের সুবিধার্থে সংবিধানই পাল্টে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও নামধারী বামদের তুমুল রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মুখে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে প্রবর্তিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেই সরকার সংকট ঘনীভূত করে দিয়েছে। দোহাই দেওয়া হচ্ছে উচ্চ আদালতের এ-সংক্রান্ত রায়ের। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ ঘোষণার বিষয় ছিল রায়ের একটি অংশ। রায়ে এ-ও বলা হয়েছে, 'ডকট্রিন অব নেসেসিটি'তে আরও দুটি সংসদ নির্বাচন সংসদের অনুমোদনক্রমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় করা যেতে পারে।
বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, যে রায়ের দোহাই দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা ওলট-পালট করে দেওয়া হলো, শাসক লীগ সংসদে ব্রুট মেজরিটির জোরে তা করে ফেলে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই। এমনকি পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতিদের স্বাক্ষর তখনো হয়নি। আরও বিস্ময়কর হচ্ছে, সাবেক প্রধান বিচারপতি রায়ে স্বাক্ষর করেছেন তার পূর্ণাঙ্গ অবসরের পর (এলপিআর পিরিয়ড শেষেরও বেশ পরে)। দুনিয়ার কোথাও এমন দ্বিতীয় নজির নেই। সাবেক প্রধান বিচারপতিকে অতি সম্প্রতি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করার পর ওই রায় নিয়ে নানা কথা উঠতে শুরু করেছে।
কথা উঠেছে এ কারণে যে, সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতি চালু করা হলেও এ পর্যন্ত পালাক্রমে যারা দেশ চালাচ্ছেন তারা নিজ দলে ও সরকারে গণতন্ত্রের নূ্যনতম চর্চাও করেননি। চালিয়ে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাচার শাসন। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার 'রাজত্বকালে' বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে তো বটেই, এমন কি সাংবিধানিক পদগুলোতেও দলানুগত, নিদেনপক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত, অনুগত ও অনুগ্রহভাজন ব্যক্তি ছাড়া দলনিরপেক্ষ কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার মনোনীত ব্যক্তিদের 'আমলনামা' পর্যালোচনা করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে নিয়োগ দেওয়ায় জনমনে সন্দেহ জাগা অস্বাভাবিক নয় যে, বিচারপতি খায়রুল হকও লীগ সরকারের অনুগত কি? এমন প্রশ্নও জেগেছে, পদটি কি দুই বছর তার জন্যই খালি রাখা হয়েছিল? এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করা দরকার, বিরোধী দলসহ জনগণের মধ্যে রায়ে স্বাক্ষরদাতা অন্য বিচারপতিদের সম্পর্কে কিন্তু কোনো সমালোচনা শোনা যায় না।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্তি গ্রহণ না করলে হয়তো বিচারপতি খায়রুল হকও এমন সমালোচনার মধ্যে পড়তেন না, এভাবে বিতর্কিত হতেন না। তাদের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ের প্রতিও সম্মান দেখায়নি শাসক লীগ। রায় অনুযায়ী সংসদের সম্মতিতে আরও দুটি সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেত। সেখান থেকে সরে গিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার লীগ সরকার মারাত্দক রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এখন বিভিন্ন সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থারও দোহাই দিচ্ছেন উচ্চ আদালতের রায়ের অসত্য দোহাই দেওয়ার মতো।
কিন্তু গণতন্ত্রের অন্যতম সূতিকাগার বলে বিবেচিত গ্রিসসহ কিছু দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গ্রহণের কথা তিনি ঘুণাক্ষরেও উল্লেখ করছেন না। আমাদের খুব কাছের দেশ পাকিস্তান ও নেপালের উদাহরণও টানছেন না। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে অচলায়তন ভাঙার জন্য তারাও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিয়েছে। আগামী নির্বাচনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে, দেশের রাজনৈতিক সংকটও তত ঘনীভূত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ চাইছে, অনিশ্চিত পরিস্থিতির অবসান হোক; মানুষ শান্তি পাক, স্বস্তিতে থাক।
দেশের দায়িত্বশীল মহল, সুশীল সমাজ ও সিনিয়র সিটিজেনরা বার বার বলছেন, এই সংকট নিরসন করতে পারেন বর্তমানে দেশের প্রধান দুই দলের দুই নেত্রী প্রধানমন্ত্রী ও লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বন্ধু বিদেশি রাষ্ট্রগুলো এবং উন্নয়ন সহযোগীরাও দুই নেত্রীর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার কথা বলছে। যে দেশ অন্য দেশের বিষয়ে মাথা ঘামায় না, নাক গলায় না, সেই গণচীনও এবার বাংলাদেশের ব্যাপারে মুখ খুলেছে। বোঝা যাচ্ছে, তারাও এতটা শংকিত যে, কথা না বলে আর পারছে না। ২০ আগস্ট বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের দুই নেত্রীকে একসঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে একটা সমঝোতায় আসার পরামর্শ দিয়েছেন।
রাষ্ট্রদূত লি জুন বলেছেন, 'একটি উন্নয়নশীল দেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি জানি দেশের উন্নতির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কতটা জরুরি। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য দুই রাজনৈতিক দলকে সমঝোতা করতে হবে। বাংলাদেশের দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসানোর জন্য দুই দলের বন্ধুদের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়েছি। যদিও নিজেদের সমস্যা নিজেরা মিটিয়ে ফেলার মতো প্রজ্ঞা তাদের আছে বলেই আমার বিশ্বাস। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণকেই তাদের সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হতে হবে।
' কিন্তু ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি সবার প্রত্যাশা, সুপারিশ-পরামর্শকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বলেছেন, 'সংবিধান থেকে একচুলও সরব না', ব্যাস। অপরদিকে ১৯ আগস্ট জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া জবাবে বলেছেন, 'আন্দোলনের বাতাসে সব চুলই উড়ে যাবে। ' প্রধানমন্ত্রী চাইছেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রী থেকে তার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধি এবং তার পছন্দের কিছু লোক নিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনটা সেরে ফেলতে। বিরোধী দল তা চাইছে না। তারা আগামী নির্বাচন চায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে।
তাদের রাজনৈতিক অবস্থানের পেছনে বেশ কিছু সবল যুক্তি আছে। প্রথমত. পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে বর্তমান সংসদ বহাল রেখে। সংবিধানের ১২৩(৩) (ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, 'মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। '
এতে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর জন্য নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে না। সরকারি দলের বর্তমান ২৬০ জন প্রার্থী নির্বাচন করবেন (ধারণা করা যায় সামান্য কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া বাকি সবাই দলীয় মনোনয়ন বাগাতে সক্ষম হবেন) সংসদ সদস্য পদে বহাল থেকে।
অন্যরা করবেন নন-এমপি হিসেবে। কাজেই এমপিরা আইনানুযায়ী যে প্রটোকল পাবেন তা নিশ্চয়ই ব্যবহারও করবেন, অন্যরা সে সুযোগ পাবেন না। দ্বিতীয়ত. নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা-থানা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব প্রশাসন সবকিছু পছন্দমতো সাজিয়ে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের কোনো জেলায় একটা ডিসি, এসপি কিংবা এমন কোনো থানায় ইউএনও-টিএনও-ওসি কি খুঁজে বের করা যাবে যার বর্তমান সরকার ও সরকারি দলের প্রতি আনুগত্য নেই! প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকারের সুইট ডিজায়ার অনুযায়ী বর্তমান প্রশাসনিক বিন্যাস অটুট রেখে বিরোধী দল নির্বাচনে যাওয়ার অর্থ তো 'জেনেশুনে বিষ পান করা'। তাতে সম্মত না হওয়ায় বিরোধী দলকে কোনো অবস্থায়ই দোষারোপ করা যায় না।
ফলে ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রিত সংসদে পাস করা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ব্যাপারে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যে অটল মনোভাব প্রকাশ করেছেন এবং তার 'হিজ মাস্টার্স ভয়েস'রা সে অনুযায়ী 'কলের গান' বাজিয়ে চলেছেন এবং অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার নেতৃত্বাধীন জোটও যে কঠোর অবস্থান নিয়ে ফেলেছে তা-ই ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছে দুই নেত্রীর সাম্প্রতিক হুংকার-পাল্টা হুংকারে। তারা দুজন দেশে আবার অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘাত-হানাহানিকেই উসকে দিয়েছেন।
বোঝাই যাচ্ছে, কোনো পক্ষই স্ব স্ব অবস্থান থেকে সরতে নারাজ। এমতাবস্থায় সংবিধান নির্ধারিত সময়ে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কী করে? প্রধান বিরোধী দল বলছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের আয়োজন না করলে তারা সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। শুধু তাই নয়, সে নির্বাচন করতেও দেওয়া হবে না।
১৯ আগস্টের বক্তৃতায়ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া তার দলের এই কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তার দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে সংঘাতময় পরিস্থিতির দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হয়। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় না পেঁৗছলে অর্থাৎ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে একটা ফায়সালা না হলে সংঘাত অনিবার্য। সংঘাত যে হবে নেতা-নেত্রীরাই বলছেন।
নির্বাচন করে ফেলার ব্যাপারে সরকার এখনো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তারাও সংঘাত-সংঘর্ষের পথ পরিহার করার কথা ভাবছেন বলে মনে হয় না। তারা দুই ধরনের কৌশল নিয়েছেন বলে তাদের আচরণ-উচ্চারণে বোঝা যায়। তারা মনে করছেন, বিএনপি শক্তিপ্রয়োগ করে নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না, কেননা শক্তি সরকারের হাতে বেশি। দলীয় শক্তি ছাড়াও তাদের আছে প্রশাসনিক শক্তি, মামলা-মোকদ্দমায় জড়ানোর শক্তি, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি। অপরদিকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বলছেন বিএনপিও নির্বাচনে আসবে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ও বলেছেন বিএনপি নির্বাচনে আসবে। কিসের ভিত্তিতে তারা এসব কথা বলছেন? গত সপ্তাহের লেখায় জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তাদের তলে তলে একটা সমঝোতা প্রয়াসের কথা উল্লেখ করেছিলাম। নেতাদের প্রাণরক্ষা ও দলের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তারা তা করতে পারে বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই বিশ্বাস করেন। কিন্তু বিএনপির কথা তারা বলছেন কিসের ভিত্তিতে? দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বক্তব্য কিন্তু আওয়ামী লীগের আশাবাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে কি সরকার দুই বিএনপি নীতি গ্রহণ করেছে? বাজারে গুঞ্জন আছে, দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে সরকারি প্রভাবশালী মহলের দেনদরবার চলছে।
এ ব্যাপারে সরকারি কোনো কোনো সংস্থাকেও সরকার কাজে লাগিয়ে থাকতে পারে। যাদের 'আমলনামা' অতিশয় খারাপ বলে ওয়ান-ইলেভেনের পর জানা গিয়েছিল এবং দুর্নীতির অভিযোগে জেল খেটেছেন, তাদের দুর্নীতির মামলায় পুনরায় জেল খাটানোর ভয়-ভীতি দেখিয়ে বিএনপি ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বাজারে একটা গুজব আছে। বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন ১৯ আগস্টের বক্তৃতায় তেমন একটি ইঙ্গিতই দিয়েছেন বলে ধারণা করা যায়। তিনি এরশাদের আমলে অনেক সিনিয়র নেতা দল ত্যাগ করার পর ছাত্র-যুব-তরুণদের নিয়ে সংগ্রাম করে দলকে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, প্রয়োজনে আবারও তিনি তরুণদের নিয়েই একই কাজ করবেন। তার এ বক্তব্য অর্থহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এর আগেও তিনি একবার বলেছেন, বেইমানদের এবার আর ক্ষমা করা হবে না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দল ভেঙে আরেকটা বিএনপি খাড়া করে সেই বিএনপি ও জামায়াতকে নিয়ে নির্বাচন করেও পার পাওয়া যাবে না। এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা যেদিকে থাকবেন সেটাই আওয়ামী লীগ আর বেগম খালেদা জিয়া যেদিকে দাঁড়িয়ে থাকবেন সেটাই বিএনপি। জনগণের সমর্থনধন্য তৃতীয়-চতুর্থ বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে না ওঠা পর্যন্ত এটাই বাস্তবতা। কাজেই এই ধরনের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে বলে মনে হয় না।
এতে হিংসা-প্রতিহিংসা আরও বাড়বে, সংঘাত-সংঘর্ষ আরও তীব্র হবে। সে আশঙ্কাই করছে জনগণ। শুধু চিন্তাশীল মানুষের মধ্যেই নয়, উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম-গ্রামাঞ্চলে, প্রতিটি ঘরে ঘরে। সর্বত্র একই দুশ্চিন্তা, নিকট ভবিষ্যতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কী জানি কী হয়!
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
ই-মেইল :kazi.shiraz@yahoo.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।