আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংঘাত আরো সংঘাত বাড়ায়



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে অস্ত্র সংবরণ করে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার জন্য বিডিআর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গতকাল জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছেন, ‘অন্যথায় আমি দেশবাসীর স্বার্থে যেকোন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো। আমাকে সে পথে যেতে বাধ্য করবেন না। ’ তিনি বিডিআর, পুলিশ, আনসার ও সশস্ত্র বাহিনীকে যেকোন স্বার্থান্বেষী মহলের উস্কানিমূলক প্ররোচনা থেকে নিজেদের বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে ‘পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করার জন্য বিশেষ মহল তৎপর’ সে বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে বলেন, ‘কোন মতেই নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। চেইন-অব-কমান্ড মেনে চলতে হবে। ’ তিনি দেশের স্বার্থে, নিজের স্বার্থে এবং নিজের পরিবারের স্বার্থে সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানান।

শেখ হাসিনা সকলের উদ্দেশে বলেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা যে কত কঠিন তা আমার থেকে কেউ বেশি উপলব্ধি করতে পারে না। যারা স্বজন হারিয়েছেন আমি জানি কত ব্যথা-বেদনা আপনাদের মনে। এমনি অবস্থায়ও আমি আশা করবো আত্মঘাতী সংঘাতের পথ আপনারা বেছে নেবেন না। ’ তিনি এই আত্মঘাতী পথ পরিহারের জন্য সকলকে অনুরোধ করেন। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার প্রশ্ন আপনারা কার বুকে গুলি চালাবেন।

এরা আপনাদেরই ভাই। ভাই হয়ে ভাইয়ের বুকে গুলি চালাবেন না। আপনার বোনকে বিধবা করবেন না। পিতা-মাতাকে সন্তানহারা করবেন না। ’ তিনি আত্মঘাতী সংঘাত বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আপনাদের সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।

অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি। আপনারা আমাকে সাহায্য করুন। ’ তিনি বলেন, এমন কোন পথ বেছে নিবেন না যে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের স্বার্থে আমাকে কঠিন পথ বেছে নিতে বাধ্য করবেন না। মনে রাখবেন, সংঘাত আরো সংঘাত বাড়ায়।

আপনারা সংযত হউন, অস্ত্র সমর্পণ করুন, আপনাদের কোন ক্ষতি হবে না। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা যাদের হারিয়েছি দেশের জন্য তা অপূরণীয় ক্ষতি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তাদের পরিবারের। এ ক্ষতি পূরণ হবার নয়।

কিন্তু এর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আরো বেশি ক্ষতি হোক সেটাও আমি চাই না। ’ তিনি দেশ ও জাতির স্বার্থে সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘জনগণের স্বার্থে শান্তি বজায় রাখুন। ’ তিনি বিডিআর-এর সমস্যা সমাধানের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধান করে কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে বলেন, ‘তারা আপনাদের সমস্যা খতিয়ে দেখে বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠাই আমাদের দায়িত্ব। ’ এই দায়িত্ব পালনে তিনি জনগণের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘গণতন্ত্র ছাড়া অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা সম্ভব নয়।

অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া দেশবাসী উন্নত জীবন পেতে পারে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে সকলের জীবন উন্নত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। জনগণের উন্নতির লক্ষ্যে যখন আমাদের সরকার কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে ঠিক তখনই কিছু অবাঞ্ছিত ঘটনা পরিবেশকে নষ্ট করছে। দল-মত-নির্বিশেষে সকলের কাছে আমার অনুরোধ জাতির স্বার্থে এমন কোন বক্তব্য-মন্তব্য বা জনগণের নিরাপত্তা বিঘিœত হয় এমন কোন কার্যক্রম হাতে নেবেন না, যা পরিস্থিতিকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। ’ তিনি বলেন, ‘গতকাল ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে যে অনাকাঙিক্ষত ঘটনা ঘটেছে তার জন্য আমি মর্মাহত।

এই আত্মঘাতী হানাহানিতে জীবন দিতে হয়েছে আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তাকে। জীবন দিতে হয়েছে বিডিআর ও বেসামরিক নাগরিককে। ’ তিনি নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বলেন, ‘যারা এই ঘটনায় আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তা নিজেই তদারক করছেন। ’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘটনার সাথে সাথেই সমস্যা সমাধানে প্রচেষ্টা চালানো হয়।

আমাদের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, সংসদ সদস্য তাৎক্ষণিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং সেখানে যান। বিডিআর-এর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। বিডিআর-এর একটি দল আমার সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। তারা ঘটনার জন্য সাধারণ ক্ষমার আবেদন করেন। আমি তাদের সমস্যাগুলো গভীর মনোযোগের সঙ্গে শ্রবণ করে আত্মঘাতী এই সংঘাত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অনুরোধ করি।

সাধারণ ক্ষমার কথাও ঘোষণা করি। ’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আটক পরিবারগুলোকে মুক্ত করার জন্য তাদের অনুরোধ জানাই। তারা আমার কথা মেনে নেয়। আমি শক্তি প্রয়োগ নয়, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা ছাড়াও তাদের অন্যান্য দাবি ও পেশাগত সমস্যা পর্যায়ক্রমে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছি।

’ শেখ হাসিনা তাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনার জন্য জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের অর্জিত এই স্বাধীনতা। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করাই আমাদের মূল কর্তব্য। ’ প্রধানমন্ত্রী বিগত বছরগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনগণের চরম দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তার সরকার দ্রব্যমূল্য কমানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে। চাল-ডাল, তেল, সার, ডিজেল ইত্যাদির মূল্য ইতিমধ্যে কমিয়ে আনা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য সহনশীল পর্যায়ে পৌঁছেছে।

’ তিনি জনগণের কল্যাণে তার সরকারের গৃহীত ব্যবস্থার উল্লেখ করে সমস্যা সমাধানে দেশবাসীর সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।