বইয়ের নতুন ঠিকানা
সরসিজ আলীম
আমরা নতুন শ্লোগান দিচ্ছি. “ বইয়ের নতুন ঠিকানা ”। আমাদের দেশে বইয়ের ঠিকানা আদৌ কখনো ছিলো? বাংলা বাজার গাইড বইয়ের জন্য প্রসিদ্ধ আস্তানা। ওপারের দাদাদের কিছু সৃজনশীল, মননশীল জনপ্রিয় ধারার বই অবৈধভাবে কপি করে বাজারে বিকিয়ে দিয়ে পকেটে মালকড়ি ভরার প্রচেষ্টা। এ যাত্রায় পুরোমাত্রায় সফল হয়েছেন। বেশ কিছু দিন যাবত দু’একজন জনপ্রিয় ধারার কথালেখক পয়দা করা গেছে. যাদের পকেটে দুটো টাকা ঠেলে দিয়ে ২০০ টাকা ফায়দা করা যায়।
এটা আমাদের বাংলা বাজারের কারিশমা। আর যারা একটু ভিন্ন মত-পথের আর সৃজনের দেমাগ নিয়ে আজিজ মার্কেটে উঠলো তাদের কিছু। আর কিছু ঢাকা শহরের সর্বত্রই কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলো। এরা আন্তরিকভাবে, সৎভাবে আমাদের কিছু সাহসী লেখকদের ধারালো লেখনী নিয়ে নতুন ক্ষেত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার চেষ্টা করতে থাকলো। কিন্তু সস্তা বইয়ের বিজ্ঞাপনের আড়ালে ঢাকা পড়েই চলেছে দেমাগী প্রকাশক, দেমাগী লেখক।
তাদের না আছে একটা মানের একটা সংখ্যার পাঠকের দৃষ্টির সীমানায় হাজির হবার সাধ্য। না আছে পাঠেকর হাতের নাগালে তাদের বইগুলো পৌঁছে দেবার সাধ্য। সারাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোতেও তাদের একটা বিপনন কেন্দ্রও গড়ে উঠলো না। তারা পারলো না। এখন তাদের এই দেমাগ ভেঙ্গে তাদেরকে নতুন নতুন লেখকদের সামনে হাত ফেলাতে হয়! তাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন আর বইটা বের করে দিচ্ছেন শুধু।
বেচা-বিক্রির দায়িত্বও লেখকের। এখন একটা প্রকাশক শুধু ছাপাখানার ম্যানেজারের দায়িত্বটুকুই পালন করছেন। এতে করে প্রকাশনাটা শিল্প হিসেবে গড়ে উঠছে না। নতুন আন্দোলনের কোনলেখক, অনুপ্রাণিত হবার মতো কোন পাঠক তৈরি হচ্ছে না।
আজিজে বইয়ের প্রকাশনা, বইয়ের দোকান খুলে যারা পাও মেলিয়ে বসার চেষ্টা করছিলেন, তাদের বলা হলোÑ_ পা-টা গুটিয়ে বসেন।
তারপর বলা হলোÑ_ সরে বসেন। তারপর বলা হলোÑ_ উঠে যান। এবার এইসব নিবাসহারা মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে কাঁটাবনের “কনকর্ড এম্পোরিয়াম শপিং কমপ্লেক্সে” আসতে শুরু করলেন। আসতেছেন। তারা এখানে নতুন শ্লোগান দিলেন “ বইয়ের নতুন ঠিকানা ”।
এই ঠিকানায় আজিজ থেকে বাংলা বাজার থেকে অন্যত্র থেকেও প্রকাশক ও বই বিক্রেতারা সমবেত হচ্ছেন। অনেকে আবার এখানে বসেই নতুন প্রকাশনা গড়ে তোলার জন্য আসছেন।
কনকর্ড এম্পোরিয়ামের বেইজমেন্ট ও প্রথম তলায় যারা সমবেত হয়েছেন প্রথম কাতারে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছে: অগ্রদূত, মধ্যমা, সংহতি, নান্দনিক, মুক্তচিন্তা, সমগ্র প্রকাশন, বইপত্র, বিভাস, ব-দ্বীপ, বৈঠকখানা, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, যেহেতু বর্ষা, ওসডার পাবলিকেশন্স, সংঘ প্রকাশন, বর্ষাদুপুর, গদ্যপদ্য, কিশোরমেলা প্রকাশনী, তক্ষশিলা. ঋত্বিক, বলাকা, পাঠসূত্র, গতি প্রকাশন, যুক্ত, শ্রাবণ প্রকাশনী ও পড়ুয়া।
এই কমপ্লেক্সের সামনে রয়েছে খোলা চত্বর। এই চত্বরে গত বর্ষায় হয়েছে বর্ষার বইমেলা।
এই কিছুদিন হলো প্রতি শুক্রবার বসছে সাপ্তাহিক ”বইয়ের হাট”। ইতিমধ্যে ৫টি সফল হাট অতিবাহিত হয়েছে। বই প্রেমিক পলান সরকারের উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে এই হাট। প্রতি হাটেই একজন প্রধান অতিথি থাকেন। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে ছিলেন অসীম সাহা, আনু মুহাম্মদ।
এই হাটে সৃজনশীল-মননশীল বই, শিশুদের বই থাকার কারণে শিশুসহ বিভিন্ন বয়েসী বিপুল সংখ্যক পাঠকের সমাগম হচ্ছে। সেই সাথে কবি লেখক শিল্পী সাহিত্যিকদের জমজমাট আড্ডায় মুখরিত থাকে হাট প্রাঙ্গণ। এই হাটের সফলতাকে কাজে লাগিয়ে সারাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেবার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
আর সারা সপ্তাহ জুড়েই বই ক্রেতাদের ভীড় বাড়ছে এই মার্কেটে। নতুন বই প্রকাশের ব্যাপারে লেখকদের আনাগোনাও বাড়ছে।
বইয়ের নতুন ঠিকানায় দাঁড়িয়ে এখানকার প্রকাশক, বই বিক্রেতারা নিজস্ব শক্তি নিয়ে কোমর সোজা করে দাঁড়াবার সাহস পাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। তারা খুঁজে পাক তাদের নিজস্ব জমিন। প্রকাশনা এগিয়ে যাক নিজস্ব শিল্প নির্মাণের লক্ষ্যে। নতুন শিল্প সম্ভাবনায় আন্দোলিত হোক পাঠক সমাজ। নতুন ধারার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকায় থাকুক সৃজনশীল মানুষেরা।
বিজ্ঞাপন:
কাঁটাবন কনকর্ড এম্পোরিয়াম শপিং কমপ্লেক্সের বেইজমেন্টের ৩২ নস্বর স্টল অগ্রদূতের। অগ্রদূতের এই স্টল হতে শিশুদের বইসহ সকল ধরণের বই পাওয়া যাচ্ছে। দুই বাংলার লিটলম্যাগও পাওয়া যায়।
আরো পাওয়া যাচ্ছে:
আলতাফ শেহাবের কবিতার বই: নুন আগুনের সংসার। আন্না পুনমের কবিতার বই: নেফারতিতির গান।
আন্না পুনমের শিশুতোষ গল্পের অনুবাদ: মিঃ ম্যাজাইকা। গাজী তানজিয়ার এবারের আনন্দ-আলো পুরস্কারপ্রাপ্ত উপন্যাস: জাতিস্মর।
আসুন বইয়ের নতুন ঠিকানায়। ২৫৩-২৫৪, এলিফ্যান্ট রোড, কাঁটাবনের এই আস্তানায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।