http://farm5.staticflickr.com/4084/5106907209_d4c9a50a8b_z.jpg
প্রয়োজন ফুরিয়েছে তো ওই জিনিসের আর মূল্য রইল না। অপ্রয়োজনীয় জিনিসটার নাম একরকম বাতিল বা পুরনোর খাতায় লেখা হয়ে যায় যেন। ঠিক তেমনি ঠিক তেমনি রেফারেন্সের জন্যই বলুন আর দামের দিক দিয়েই বলুন, পুরনো বইয়ের তুলনা মেলা ভার। যাদের বইয়ের প্রতি অত্যুগ্র আগ্রহ আছে, ফুটপাত দিয়ে যাওয়ার পথে তাদের কিছুক্ষনের জন্য হলেও থরে থরে সাজানো বইগুলোর ওপর যেন চোখ বুলিয়ে নিতেই হয়। কেনার ভাবনাটা সময়ের জন্য তুলে রাখা থাক।
টাকাটা হাতে এলেই সুযোগ বুঝে বগলদাবা করা যাবে কাঙ্খিত বইটি। এ রকম ভাবনা কমবেশি আমাদের সবার মাথায়ই থাকে। পুরনো বইয়ের বাজারে অতীতের সেই জৌলুস না থাকলেও এখনো পুরোপুরি মিইয়ে যায়নি তার আবেদন।
সব ধরনের বইয়ের সম্ভার
সব ধরনের বইয়ের ছোটোখাটো সম্ভার বলা যায় পুরনো বইযের দোকানগুলোকে। সেই ৬০-৭০ বছর আগের সংস্করণের বই থেকে শুরু করে মার্কেটে নেই এমন বইও একটু সময় করে খোঁজ করলে এখনো পাওয়া যায় শহরের বাংলাবাজার, নীলক্ষেত ও পল্টনের পুরনো বইয়ের বাজারে।
একাডেমিক, গবেষনাধর্মী, গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস, শিশুসাহিত্য, ইংরেজি অনুবাদ বই, পত্রিকা, ম্যাগাজিন, বাংলা ও ইংরেজি অভিধান সব ধরনের প্রকাশনার মেলবন্ধন এসব পুরনো বইয়ের দোকান।
কীভাবে সংগৃহীত হয়
বিভিন্ন হাত হয়ে আসে এসব পুরনো বই। ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে যে বইগুলো পিস হিসেবে কিনে নেয় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীরা, সেগুলোকেই আবার মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে কেনেন বই ব্যবসায়ীরা। অনেক সময় বইয়ের পাতা ছেড়া থাকতে পারে। সেজন্য ব্যবসায়ীরা সরাসরি ভাঙ্গারি দোকান, ফেরিওয়ালা বা বইয়ের সবচেয়ে পুরনো ও বড় মার্কেট বাংলাবাজার তেকে খুজেঁ বই নিয়ে আসেন।
কোনো কোনো সময় খুব প্রয়োজন হলে পাঠকরাও সরাসরি বই বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন এসব মার্কেটে। এমনও হয়েছে, স্কুল-কলেজপড়ুয়া কোনো ছাত্র হাত খরচের জন্য নিজেরই সংগৃহীত বইটি বিক্রি করেছে। পরে ওই বইটি সে আবার কিনে নিয়েছে এখান থেকে। জানালেন বাংলাবাজারের বই বিক্রেতা ফজলুল হক।
যারা ব্যবসাটি টিকিয়ে রেখেছেন এখনো
সাধারণত দোকান নয়, ফুটপাতই হলো পুরনো বইয়ের আস্তানা।
পৈত্রিক ব্যবসা; তাই অন্য কোনো ব্যবসা বা কাজে না গিয়ে অনেকে এখনো এ ব্যবসা ধরে রেখেছেন। যারা একসম বইয়ের দোকানে কাজ করতেন বা পত্রিকা বিকিকিনিতে জড়িত ছিলেন, তারাই এ ব্যবসায় আসেন। মোট কথা, যাদের বই বিক্রি নিয়ে মোটামটি ধারণা আছে, তারাই শত কষ্টেও এ ব্যবসার সাথে জড়িয়ে আছেন এখনো। নীলক্ষেতের বই ব্যবসায়ী জাকির হোসেন ৩০ বছর ধের বইয়ের ব্যবসার সাথে জড়িত। এ ব্যবসা দিয়ে কোনো রকম খেয়ে-পরে বেঁচে আছেন।
সুবিধা হলো, কর্মচারীর বেতন দিতে হয় না। বই রাখার জন্য কয়েকজন মিলে গোডাউনের ভাড়া দিলেই হলো। বিক্রির মৌসুম অর্থাৎ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে গড়ে ১২ হাজার টাকারও বই বিক্রি হয়। বাকি সময় বিক্রি হলেও রোজার মাসে বিক্রিতে ভাট পড়ে। পাইরেসি ও ফটোকপির বইয়ের ধাক্কা সমরিয়ে এখনো কোনো রকম দাড়িয়ে আছে পুরনো বইয়ের দোকানগুলো।
যারা ক্রেতা
পুরনো বই যত পুরনোই হোক না কেন, এর কদর সব সময়। রেফারেন্স বা পুরনো সংস্করনের দুর্লভ কোনো বইয়ের জন্য পুরনো বইয়ের ডাক পড়বে সবার আগে। ভারতীয় বাংলা বইয়ের দাম দ্বিগুন হওয়ায় বইপ্রেমী অনেক পাঠকই পুরনো বইয়ের দিকে ঝুকে থাকেন। দুর্লভ কিছু বই, যা পরে আর ছাপা হয়ে আসেনি, এমন অনেক বইযের খোঁজ পাওয়া যায় এখানে। জানান বই কিনতে আসা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মতিউর রহমান।
পুরনো বই দামের দিক দিয়ে যেমন নতুনের চেয়ে অর্ধেক, তেমনি একটু সন্ধান করলেই হাতের নাগালে চলে আসবে বহুদিনের প্রত্যাশিত বইটি। অঙ্কের নমুনার জন্য ৪-৫ টা বই দেখতেই হয়। সেগুলো দোকান থেকে একসঙ্গে কিনতে গেলে নিজ সামর্থ্যের কথাও মাথায় রাখতে হয়। তাই ঘুরেফিরে এখানে আসা। জানান বেসরকারি স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক ফিরোজ আহমেদ।
কোথায় মিলবে এসব বই
নীলক্ষেত, বাংলাবাজার, শাহবাগ ও পুরানা পল্টনে পাওয়া যাবে পুরনো বই। স্থানভেদে দামেরও হেরফের আছে। যে বই শাহবাগে পাওয়া যায় ২০ এবং নীলক্ষেতে ৩০ টাকায়, সেই বই বাংলাবাজারে পাওয়া যায় ১৫ টাকায়। তার মধ্যে বাংলাবাজার পুরনো বইয়ের সবচেয়ে বড় মার্কেট। এখান থেকেই পুরনো বইয়ের ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম,রাজশাহী ও বরিশালের মতো বিভিন্ন জেলা ও শহরগুলোতে বই নিয়ে যান।
শাপলা বড়ুয়া
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।