আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আন্ডামারার যদু-কাগু (১০০% কপিরাইটেড রূপকথা)

মারে মামা মারে

চোদ্দ হাজার পুরুষ আগেকার কথা। দক্ষিন এশিয়ার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে সবুজ শ্যামল একটা গ্রাম আন্ডামারা। গ্রামের প্রধান ফসল তরমুজ। আর কোন ফসলের চাষবাস শেখেনি ওরা। ফলে তরমুজের বিনিময়েই চাল ডাল সহ অন্যান্য জিনিসপত্র যোগাড় করতো গ্রামবাসী।

ওখানে এত হাজারে হাজারে তরমুজ ফলতো যে বেশীরভাগ মাটিতেই গলে পচে যেত। অথচ কয়েক ক্রোশ দূরের বাজারে তরমুজের খুব চাহিদা। সেখানে তরমুজের বিনিময়ে অনেক ভালো জিনিস পাওয়া যেত, সোনা রূপায় সংসার ভরে যেত। গ্রামের লোকদের ভাগ্য বদলে যেত কদিনেই। কিন্তু যাবার পথ দুর্গম জঙ্গলময় হওয়াতে মাথায় করে অত বড় তরমুজ নিয়ে যাওয়া সম্ভব না।

সেই যুগে গাড়ী ঘোড়া দুরে থাক, চাকাও আবিষ্কার হয়নি। ফলে আন্ডামারার সুস্বাদু তরমুজের স্বাদ খুব বেশী দূরে যায়নি। সেই আন্ডামারায় ছিল যদু কাগু নামে এক বাঁশের কারিগর। বাঁশের তৈরী নানা রকম জিনিস বানাতে ওস্তাদ লোকটা। একদিন সে দারুণ একটা জিনিস আবিষ্কার করে বসে।

একটা অভিনব বাঁশের মাচা। সেটাকে দুটো গরুর সাথে বেঁধে দিয়ে তাতে চড়ে বসলো সে। গরু হাঁটলে জিনিসটাও চলতে শুরু করে। তাকে আর কষ্ট করে হাঁটতে হয় না। জিনিসটা তাকে আরামের সন্ধান দিল।

নতুন আবিষ্কারের নাম দিল যদু-মাচা। সেই যদু-মাচায় করে একদিন কিছু তরমুজ নিয়ে গেল কয়েক দূরের বাজারে এবং তরমুজের বিনিময়ে বেশ কিছু চাল ডাল ভর্তি করে গ্রামে ফিরে এলো সন্ধ্যেবেলা। কিছুদিন পর লোকজন খেয়াল করলো কয়েকদিন পরপর সে বাজারে যায় আর ফিরে আসে নানা রকম পণ্য নিয়ে। তা দেখে চমৎকৃত গ্রামবাসী অনুরোধ করলো তাদের জন্যও যদু -মাচা তৈরী করে দিতে। কিন্তু লোকটি জানায় ওটা বানানো খুব কঠিন, সবার জন্য বানানো সম্ভব নয়।

তবে চাইলে তার যদুমাচা ব্যবহার করতে পারে স্বল্পদুরত্বে। বাজারে আর কারো পণ্য নিতে অনাগ্রহী কাগু। তখনকার দিনে টাকা পয়সার চল হয়নি। সবকিছু বিনিময়ের মাধ্যমে চলতো। উপায় না দেখে গ্রামবাসী কমিশনের বিনিময়ে যদুমাচায় করে কেবল কাছাকাছি এলাকায় পন্য আনা নেয়া শুরু করলো এবং অল্পদিনের মধ্যেই যদুমাচা খুব জনপ্রিয় হয়ে গেল।

বাজারে পণ্য বিক্রির সুযোগ না পেয়েও গ্রামবাসীর কাছাকাছি যাতায়াতের সমস্যার সমাধান করলো বলে গ্রামের গর্ব হয়ে গেল লোকটা। সুনাম ছড়িয়ে গেল আশেপাশের গ্রামেও। অতঃপর স্বচ্ছলতার সাথে সুখে শান্তিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করতে লাগলো সে। গল্পটা এখানে শেষ হয়ে যেতে পারতো! কিন্তু দিন সমান যায় না। একদিন আন্ডামারার এক কাঠুরিয়া পুত্র মধু জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কাটতে গিয়ে দেখলো একটা কাঠের গুড়ির অবশিষ্টাংশ রয়ে গেছে যা লাকড়ি হিসেবে কোন কাজে আসবে না।

চাঁদের মতো গোলাকার খন্ডটা সে গড়িয়ে কাছের জলাশয়ের দিকে চালান করে দিল সে। কাঠের গোলাকার খন্ডটি গড়িয়ে যাবার দৃশ্যটা হঠাৎ তার মাথায় একটা দুষ্টবুদ্ধির যোগান দিল। সে একই রকম আরো একটা চাকতি বানিয়ে দুটো একসাথে লাঠি দিয়ে জোড়া দিয়ে গড়াতে গড়াতে বাড়ী ফিরলো। একটা মজার খেলনা পেয়ে আহ্লাদিত কাঠুরিয়া পুত্র। [মধু কাঠুরের সেই সামান্য খেলনা আবিষ্কার যে সুদূর ভবিষ্যতের মানব সভ্যতার ভিত রচনা করে ফেলেছে তা বোঝার ক্ষমতা তখনকার কোন মানুষের ছিল না।

সেটা ছিল সভ্যতারই চাকা, যা কয়েক হাজার বছর পরে গিয়ে চুড়ান্ত উৎকর্ষতায় নিয়ে যাবে মানবজাতিকে। ] কদিন বাদে খেলনাটাকে আরো একটু কায়দা করলো মধু। চাকার উপরিভাগে কায়দা করে কাঠের তক্তা বসিয়ে তার সাথে দড়ি বেঁধে লাকড়ি আনা নেয়ার কাজ করতে লাগলো বন থেকে। তার সেই বাহনের নাম দিল মধু-মাচা। একদিন মধু-মাচার সাথে সে একটা গরু জুড়ে দিয়ে দেখলো গরু লাগানোর পর দারুন গতি পেয়েছে তার বাহন।

একবার সাহস করে সেই বাহনে করে বাজারেও চলে গেল। দেখা গেল দুপুরের আগেই ফিরে এসেছে সে বাজার ঘুরে। গ্রামবাসী চমৎকৃত হলো তার কীর্তিতে। গ্রামের কেউ কেউ তার মধু-মাচায় করে বাজার ঘুরে আসতে লাগলো শখের বশে। কেউবা পন্যও আনা নেয়া শুরু করলো।

যদিও বেশীরভাগ লোক যদু-মাচায় অভ্যস্ত তবু কিশোর তরুনদের কাছে মধু-মাচা বেশ জনপ্রিয়তা পেল। তারা যখন তখন বাজারে যায় আসে। মধু সরল সোজা ছেলে। কারো কাছে কমিশন চায় না তার মধু-মাচায় চড়ার বিনিময়ে। একেবারে বিনামূল্যে আসা যাওয়া করা যায় বলে বড়রাও নজর দিতে শুরু করলো মধু-মাচার দিকে।

ভাবলো এটাতে করে যদি নিয়মিত তরমুজ আনা নেয়া করা যায় তাহলে সময় অনেক বেঁচে যায়। বাজারে তরমুজ বিক্রি করা যায়। মধুমাচার প্রতি গ্রামবাসীর আগ্রহ যদু কাগুকে ভাবনায় ফেললো। একটা ফন্দী বের করলো সে। একদিন গ্রামের মোড়ল মাতব্বর সবাইকে তার বাড়ীতে দাওয়াত দিয়ে খাসী জবাই করে খাওয়ালো।

খাওয়াদাওয়া শেষে আসল কথাটা পাড়লো, "ভাইসব, নিশ্চয় খেয়াল করছেন, দিনকাল কেমন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কলিযুগ এসে গেল বলে। আমাদের যুগে আমরা কখনো গ্রামের বাইরে বাজারে যেতাম না কিশোর বয়সে। এখনকার ছেলেপেলে বেয়াদপ হয়ে গেছে, মুরব্বী মানে না, অনুমতি ছাড়া যখন তখন গ্রাম ছেড়ে সেই দুরের বাজারে গিয়ে আড্ডা দেয়। এসব অনাচার বন্ধ করতে না পারলে গ্রামে ইজ্জত সম্মান নিয়ে থাকা যাবে না।

" মুরব্বীরা তখন কাগুর খাসির গোসত খেয়ে ফুর্তিতে আছে। যদুকাগুর কথায় এক বাক্যে সায় দিল। "ঠিক বলছেন ভাইসাব। এই অনাচার চলতে পারে না দেশে। কি করতে হবে এখুনি ঠিক করেন।

আপনি জ্ঞানী মানুষ আপনিই বলেন কি করতে হবে। " যদু কাগু তখন বললো, "আমি জানি কি করে অনাচার বন্ধ করা যাবে। যত নষ্টের মূল ওই কাঠুরিয়ার ছাওয়াল মধু, সে কি একটা দুষ্ট জিনিস বানাইছে আমার গরু-মাচা থেকে নকল কইরা। নাম নাকি মধু-মাচা। কত্তবড় বেয়াদব।

সেই মধু-মাচা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে আন্ডামারা গ্রামে। তাতে কেউ চড়লে তাকে দশটি করে বেত্রদন্ড দেয়া হোক। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এরকম দুঃসাহস দেখাতে না পারে। " গ্রামের মোড়ল মাতব্বর সবাই হৈ হৈ করে একবাক্যে রাজী হলো। নিষিদ্ধ করা হলো মধু-মাচা।

যত্তোসব অনাচার দুর হোক। এই বলে সভা সমাপ্ত করে বাড়ী ফিরে গেল সবাই। খবরটা গেল মধুর কানে। সে বুঝলো যদু-মাচা কেন তার বিরূদ্ধে লেগেছে। যদি মধুমাচা নিষিদ্ধ হয় তাহলে সবাই কাগুর বাহনে করে বাজারে পণ্য আনা নেয়া করতে বাধ্য থাকবে।

কাগুর একচেটিয়া কামাই অব্যাহত থাকবে। তাই সে তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে গোঁ ধরলো মধু-মাচা বন্ধ করবে না। কিন্তু গ্রামের মুরব্বী সমাজ কঠিন। তাকে এক ঘরে করে দেয়া হলো। কুলিয়ে উঠতে না পেরে সে একরাতে গ্রাম ছেড়ে পালালো তার মধু-মাচা নিয়ে।

পালিয়ে অনেক দুরের সমুদ্রতীরের ঠাডারা গ্রামে গিয়ে আস্তানা গাড়লো। ঠাডারা থেকে ভেলা নিয়ে ভাসতে ভাসতে গিয়ে পৌছালো মরুভুমির এক বিরান নগর মরুগঞ্জে। সেখানে মধুকে এবং মধু-মাচাকে সাদরে বরন করে নিল সবাই। কয়েক বছরের মধ্যে মধু-মাচার ব্যাপক প্রসার ঘটলো সমগ্র মরু অঞ্চলে। ঘোড়ার সাথে বেধে মরুভুমিতেও ঘুরে আসা যায় আধুনিক এই বাহনে।

ঘরে ঘরে মধু-মাচা আছে সেখানে। সবাই ব্যবসা করছে ধুমিয়ে। ফলে মরুগঞ্জের মানুষ স্বচ্ছল হয়ে উঠলো খুব তাড়াতাড়ি। শীঘ্রই মরুগঞ্জ হয়ে গেল আশেপাশের মধ্যে সবচেয়ে ধনী গ্রাম। অন্যদিকে আন্ডামারার কি হলো? সেখানে এখনো ধীরগতির যদু-মাচায় করে পন্য আনা নেয়া করে মানুষ।

বেশীরভাগ লোক হত দরিদ্র। রোগ শোক অভাব অনটনে দিন কাটে। তবে সমগ্র গ্রামের মধ্যে প্রকট দারিদ্র্য ছড়িয়ে থাকলেও একজন মানুষ খুব স্বচ্ছলতা অর্জন করেছেন ক'বছরে। গ্রামে মাটির ঘর তুলেছেন, পুকুর কাটিয়েছেন, সিন্ধুক বানিয়েছেন। গোলা বানিয়েছেন, সোনাদানার স্তুপ গড়েছেন।

তিনি হলেন মোড়ল সমাজের বুদ্ধিপতি ‘যদু-কাগু’। [পাদটীকাঃ এই গল্পের কোন হেতু নাই, কেবল কপিরাইট আছে) কপিরাইট ভঙগ করে কপি পেস্ট মারছি গুরু মাফ চাই এত ভালো লেখা কপি না করে পারলাম না মুল লেখার লিঙক http://www.sachalayatan.com/hrrh69/32493 লিখেছেন নীড় সন্ধানী ভাই সচলায়তনের

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.