ক্যাপাসিটর
তৃতীয় কিস্তি লিখতে এত দেরি করার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে শুরু করছি। এই কিস্তিতে ক্যাপাসিটর নিয়ে লিখব বলেছিলাম। শুরু করা যাক।
আমার বুঝামতে ক্যাপাসিটর জিনিষটা হচ্ছে রাস্তায় গর্ত বা খানা খন্দের মত। রাস্তা দিয়ে পানি গড়িয়ে যাবার সময় একটা গর্ত পড়লে পানি সামনে এগোনর বদলে গর্তে জমা হতে থাকে।
গর্ত ভর্তি হয়ে গেলে তখন পানি উপছে আবার সামনে গড়ানো শুরু করে। ঠিক একইভাবে কোন বর্তনীতে ইলেক্ট্রন উচ্চতর ভোল্টেজ এর দিকে যেতে যেতে সামনে যদি কোন ক্যাপাসিটর পায়, তবে তার মাঝে জমা হতে থাকে, যতক্ষন না তার ধারনক্ষমতা পূর্ণ না হয়। একে বলা হয় ক্যাপাসিটর চার্জড হওয়া। গর্তে কতখানি পানি জমা হবে এটা যেমন নির্ভর করে গর্তের আয়তনের উপর, এবং ঐ পরিমাণের চেয়ে বেশি পানি জমা হতে পারবে না। তুলনা করলে বলা যায় যে, ক্যাপাসিটর এর ধারনক্ষমতা নির্ভর করে এর আকারের উপর এবং, যতই চার্জ আসুক না কেন তার ধারনক্ষমতার চে বেশি চার্জ সে ধারন করতে পারবে না।
গর্ত পানি দিয়ে ভরতে যেমন কিছু সময় লাগে, ক্যাপাসিটর চার্জ হতেও তেমন সময় লাগে এবং তা নির্ভর করে তার ধারনক্ষমতার উপর। যে সময়টুকু গর্ত ভরতি হতে থাকে, সে সময়ই শুধু গর্তের মাঝে পানি প্রবাহিত হতে থাকে। ক্যাপাসিটর এও শুধুমাত্র চার্জ হওয়ার সময়ই কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
চিত্র ৩,১ঃ ক্যাপাসিটর আর পানির গর্তের তুলনা।
কিন্তু ক্যাপাসিটর কেন চার্জ ধরে রাখে? এটা বুঝার জন্য ক্যাপাসিটর এর চিহ্নটা খেয়াল করা যাক।
চিত্র ৩,২ কঃ ক্যাপাসিটর এর চিহ্ন।
এই চিহ্নের সমান্তরাল লাইন দুটা দিয়ে বুঝায় দুটা সমান্তরাল ধাতব পাত। এর সাথে লম্বালম্বিভাবে যে দুটা কাঠি আছে, সেগুলা হল ক্যাপাসিটর কে বাকি বর্তনীর সাথে যুক্ত করার পথ। ক্যাপাসিটর এর বাস্তবিক গঠনও এরকম। ক্লাব স্যান্ডুইচের মত।
চিত্র ৩,২ খঃ দুই স্লাইস রুটির (ধাতব পাত) এর মাঝে খানিকটা হাবিজাবি (ডাইইলেক্ট্রিক পদার্থ)দিয়ে একটা কাঠি (দুই প্রান্তের সংযোগকারী তার) গেঁথে দেয়া। এই ডাইইলেক্ট্রিক পদার্থের কারনে ক্যাপাসিটর চার্জ ধরে রাখতে পারে। কেন? কারন ডাইইলেক্ট্রিক পদার্থের দু প্রান্তে ভোল্টেজ দেয়া হলে এর ভিতরে ইলেক্ট্রন আর হোল আলাদা হয়ে গিয়ে দু ভাগে ভাগ হয়ে যায়। ৩.৩ নং ছবি দেখলে কিছুটা ধারনা পাওয়া যেতে পারে কি ঘটছে।
চিত্র ৩,৩ঃ
ইলেক্ট্রন আর হোল আলাদা হয়ে যাওয়ার ফলে ক্যাপাসিটর এর দু প্রান্তে পজিটিভ আর নেগেটিভ চার্জ জমা হয়।
যদি দু প্রান্তের সাথে ভোল্টেজ সংযোগ দেয়া হয় তাহলে ভোল্টেজ সোর্স থেকে ইলেক্ট্রন এসে ক্যাপাসিটর এর প্রান্তে এসে জমা হয়। ক্যাপাসিটর এর প্রান্তে যতগুলো পজিটিভ চার্জ থাকে ক্যাপাসিটর ঠিক সেই পরিমাণ নেগেটিভ চার্জ ধারণ করতে পারে। চার্জ জমা হওয়ার ফলে ক্যাপাসিটর এ ভোল্টেজ তৈরি হয়। যত ক্ষন না ক্যাপাসিটর এর ভোল্টেজ সোর্স ভোল্টেজ এর সমান না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইলেক্ট্রন এসে জমা হতে থাকে অর্থাৎ কারেন্ট প্রবাহ চলতে থাকে।
ক্যাপাসিটর এ চার্জ জমা থাকা অবস্থায় যদি একে বর্তনী থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় তবে ক্যাপাসিটর ঐ চার্জ ধরে থাকবে, যতক্ষন সে চার্জ ছেড়ে দেবার কোন পথ পায়।
ধরা যাক এরকম একটা চার্জড ক্যাপাসিটর এর সমান্তরালে একটা রোধ বা রেজিস্টর দিয়ে মাটির/গ্রাউন্ডের সাথে সংযোগ দেয়া হলো। এখন ক্যাপাসিটরটি ঐ রোধের মধ্য দিয়ে চার্জগুলো মাটিতে পাঠিয়ে দেবার চেষ্টা করবে। মাটির ভোল্টেজ হচ্ছে শূন্য, তাই যতক্ষণ না ক্যাপাসিটর এর ভোল্টেজ শুন্য হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কারেন্ট প্রবাহ চলতে থাকবে। এই প্রক্রিয়াকে সাধারনত বলা হয় ডিসচার্জ। চার্জ এবং ডিসচার্জ এর সময় ক্যাপাসিটর এর সমান্তরালে ভোল্টেজ এবং এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট এর পরিবর্তনের গ্রাফ দেখাবে অনেকটা চিত্র নং-৩,৪ এর মত।
চিত্র৩,৪ঃ
একই সোর্স ভোল্টেজ এর জন্য ক্যাপাসিটর চার্জ এবং ডিসচার্জ হতে কত সময় লাগবে তা নির্ভর করবে ক্যাপাসিটর এর ধারণক্ষমতা এবং যে পথে কারেন্ট প্রবাহিত হচ্ছে তার রোধের উপর। শুরুতে যদি ক্যাপাসিটর এর ভোল্টেজ হয় V0, রোধ আর ক্যাপাসিটর এর মান হয় যথাক্রমে R ও C, এবং সোর্স ভোল্টেজ হয় Vs, তাহলে ক্যাপাসিটর চার্জ হবার হার হিসেব করা যায় নিচের ১ নং সূত্র দিয়ে। আর ডিসচার্জের হার হিসেব করা যায় ২নং সূত্র দিয়ে।
Vcap = (Vs-V0)*[1-exp(-t/RC)] --- (১)
Vcap = V0*exp(-t/RC)] ---(২)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।