আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাতে ইলেক্ট্রনিক্স শেখা...১



-------------------------------------------------------------------- হুমমমম!!! আমার মত অধমের পোস্টও দেখি ১২ জন লোকে পড়েছেন, যদিও কিছুই লিখি নাই আগের পোস্টটায়। সেভাবে এই পোস্টটাও যদি ২-৪ জন মানুষ পড়ে ফেলেন, তাই আগেই বলে দিই, জ্ঞানী ভাব ধরার উদ্দেশ্যে এইরকম কঠিন বিষয় নিয়ে লিখতে বসি নাই এর পিছনের কারণ গুলা হইল, ১। অনেক শখ নিয়ে আমেরিকা দেশে পড়তে আসছিলাম, যে এনালগ ইলেক্ট্রনিক্স শিখব। আজকাল সবার হাতে মোবাইল, কম্পিউটার আরো কত সব আজিব জিনিস দেখি, ভিতরে নাকি মাইক্রোচিপ নামে এক বস্তু থাকে এই সব জিনিসকে চালায়, সেই জিনিষটা কেমনে কেমনে কাজ করে সেটা শেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এখন সেই রাস্তা ফেলে অন্য রাস্তায় জ্ঞানের সন্ধানে যাইতেছি ডিগ্রী লাভের ধান্দায়, কিন্তু ইলেক্ট্রনিক্স শেখার শখটা এখনো মরে নাই।

একটা কিছু তখনি ভাল ভাবে শেখা হয় যখন আপনি অন্য কাউকে সেটা খুব সহজ ভাবে শেখাতে/ বুঝাতে/ বলতে পারবেন। কাজেই নিজের শিক্ষাকে ঝালাই করবার উদ্দেশ্য নিয়ে লিখছি। ২। প্রথম আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেক্ট্রনিক্স পড়তে গিয়ে বুঝলাম, বুয়েট থেকে কিছু না শিখেই একখান ডিগ্রী পেয়ে গেছি, কেউ যদি সহজ করে বাংলায় বুঝায় দিত, এইরকম হাবার মত হাবুডুবু খেতে হতো না। লেখে না কেন কেউ? যাই হোক, আমার ইচ্ছা ইলেক্ট্রনিক্স আমি যা বুঝি তা এমন ভাবে বুঝিয়ে লেখার চেষ্টা করে যাতে আমার সুগৃহিনী আম্মাও বিনা কষ্টে ব্যাপারটা বুঝে ফেলতে পারেন।

আগেই বলেছি, আমি ইলেক্ট্রনিক্স পারি না, বুঝি না, নিজে বুঝে তারপর লিখব, যদি জ্ঞানী-গুনী মানুষেরা যারা আমার চে অনেক ভাল বুঝেন এইসব জিনিস, তাদের চোখে এই লেখা পড়ে, তবে ভুল-ভ্রান্তি শুধরে দিবেন। -------------------------------------------------------------------- ইলেক্ট্রনিক্স ব্যাপারটার আসল জিনিষটা হচ্ছে ইলেক্ট্রন। এই ইলেক্ট্রন জিনিষটা সব অনু পরমাণুর মধ্যেই আছে, নিজের মনের মত পরমাণুর কেন্দ্রে বসে থাকা প্রোটনের চতুর্দিকে ঘুরছে, মাঝে মাঝে লাফ ঝাপ দিয়ে পাশের পরমাণুতে চলে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে, বা মাঝামাঝি জায়গায় ঝুলে থাকছে, অনেকটা বাদরের মত দু হাতে দুই গাছের ডাল ধরে ঝুলে থাকার মত, তার ফলে দুই গাছের দালে গিট্টু লেগে যাচ্ছে, এভাবে অণু তৈরি হচ্ছে। ইলেক্ট্রনিক্স হলো এই বাদর প্রকৃতির ইলেক্ট্রন কে আমাদের ইচ্ছে মত লাফ ঝাপ করতে শেখানো, যাতে তাকে দিয়ে বাদর নাচ নাচিয়ে আমাদের ২-৪ টা আয় উপকার হয়। ইঞ্জিনিয়ার সাহেবরা সেই ইলেক্ট্রন কে এখন এমন নাচ নাচাচ্ছেন যে তার জোরে দুনিয়া চলছে।

আর ইলেক্ট্রন কে ইচ্ছেমতো নাচাবার ৩টা উপায় হচ্ছে, R- রেসিস্ট্যান্স বা রোধ, C- ক্যাপাসিট্যান্স বা ধারক এবং L- ইন্ডাকটেন্স। ( হুমম, নাহ বাংলা ভালো পরিভাষা পাচ্ছিনা। তবে মাধ্যমিকে জেসব আজগুবি বাংলা পরিভাষা দিয়ে পড়েছিলাম, সেগুলো আমাদের ইলেক্ট্রনিক্স না বুঝার ৪০% কারন। কারন পরে ইংরেজিতে বিশদ পড়তে গিয়ে মেলাতে অনেক ঝামেলা হয়। ) সাধারনত একটি পরমানুর কেন্দ্রে ( যাকে পরমানুর নিউক্লিয়াস বলা হয়) থাকে প্রোটন এবং নিউট্রন ।

এই প্রোটন হলো ধনাত্বক (+) চার্জযুক্ত , নিউট্রন হলো চার্জবিহীন। আর এই নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্রে রেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে নেগেটিভ (-) চার্জ যুক্ত ইলেকট্রন। স্বাভাবিক ভাবে একটা পরমানুর প্রোটন এবং ইলেকট্রন সংখ্যা থাকে সমান সংখ্যক। মানে যত গুলো পজেটিভ চার্জ যুক্ত কণিকা, ঠিক তত গুলোই নেগেটিভ চার্জযুক্ত কণিকা। সেজন্যই সামগ্রিক পরমানু টি কোন চার্জ প্রকাশ করেনা।

এখন কথা হলো , যদি কোন কারণে এই চার্জযুক্ত কণার সংখ্যার হের ফের ঘটে, তবেই পরমানুটি চার্জযুক্ত হয়ে পড়ে। স্বাভাবিক ভাবে, একটি পরমানু থেকে প্রোটন বের হওয়া একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। কেন? পরমানুর কেন্দ্রে প্রোটন থাকে অত্যন্ত শক্তিশালী নিউক্লিয় বল ( প্রকৃতির চারটি বলের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বল) দ্বারা আটকানো। কিন্তু ইলেকট্রন পরমানুতে ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক বল দ্বারা প্রোটনের সাথে আকর্ষনের জন্য আবদ্ধ থাকে। অন্যদিকে, ইলেকট্রনের ভর একটি প্রোটনের ভরের তুলনায় নগন্য।

আবার, যে ইলেকট্রন গুলো নিউক্লিয়াসের যত কাছাকাছি, তার বন্ধন তত শক্ত (কাছে থাকলে টান বাড়ে, মানুষের মতই, নাকি?) এবং দূরের ইলেকট্রন অনেক কম টান বা বল অনুভব করে ,ফলে, নিউক্লিয়াস হতে দূরতর ইলেকট্রনগুলো পরমানুতে থাকে লুজলি বাউন্ড ( হালকা ভাবে আবদ্ধ) এবং খুব সহজেই তা পরমানু থেকে পরমানুতে কোন বহিস্থঃ বল বা প্রভাব যেমন তাপ, চাপ ইত্যাদির প্রভাবে যাতায়াত করতে পারে এবং করে । মানে দাঁড়াল , পরমানু থেকে ইলেকট্রন বেরিয়ে গেলে , তুলনায় সেখানে প্রোটনের সংখ্যা হয় বেশি, ফলে সামগ্রিক পরমানুর চার্জ প্রকাশিত হয় ধনাত্বক। ঠিক উল্টোটি ঘটে যে পরমানুতে এই বেরিয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রনটি প্রবেশ করে। (কৃতজ্ঞতাঃ মতিউর রহমান সাগর) সুতরাং ইলেক্ট্রন নিজে হচ্ছে নেগেটিভ চার্জ। সে যখন পরমানুর চারপাশে ঘোরে তখন কেন্দ্রে মাঝে বসে থাকা প্রোটনের পজিটিভ চার্জের সাথে কাটাকুটি হয়ে গিয়ে আর কোন চার্জ দেখা যায় না।

কিন্তু যেই ইলেক্ট্রন পরমানু ছেড়ে চলে যায়, সে একাকী আবার নেগেটিভ আর পরমাণুটা পজিটিভ হয়ে যায়। তো, কোন একটা ধাতব জিনিসের দু-প্রান্তের মাঝে যদি ভোল্টেজ (বিভব পার্থক্য) তৈরি করা হয়, তবে যেদিকে ভোল্টেজ বেশি ইলেক্ট্রনগুলো সেদিকে দৌড় দেয়। ইলেক্ট্রনের এই দৌড়টাই হলো কারেন্ট। মনে কর, একটা ক্লাসরুমে অনেকগুলো বাচ্চা যার যার চেয়ারে বসে আছে। ঘরে দুইটা দরজা, বাইরে একটা বারান্দাও আছে, এক দরজা দিয়ে বের হলে, বারান্দা দিয়ে ঘুরে এলে অন্য দরজা দিয়ে আবার ক্লাসে ঢুকা যায়।

এখন এক দরজায় এক শিক্ষক হাতে বেত নিয়ে দাঁড়ালেন, বাচ্চারা গেল ভয় পেয়ে, আরেক দরজায় আরেক শিক্ষক দাঁড়ালেন এক প্যাকেট চকলেট হাতে নিয়ে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বাচ্চারা দৌড় দিবে চকলেটঅয়ালা শিক্ষকের দিকে। এখানে বেতওয়ালা আর চকলেটওয়ালা শিক্ষকের মাঝে যে পার্থক্য সেটা হলো ভোল্টেজ, বাচ্চাগুলা হলো ইলেক্ট্রন, আর তারা চকলেট নেবার জন্য যে দৌড়টা দিল সেটা হলো কারেন্ট। আর বাচ্চাগুলো যদি চকলেট নিয়ে দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়, তারপর বারান্দা দিয়ে ঘুরে এসে অন্য দরজা দিয়ে আবার ক্লাসে ঢুকে পড়ে, তবে পুরো ব্যাপারটা হবে একটা ইলেক্ট্রনিক সার্কিট (বর্তনী)। কারন এখানে ইলেক্ট্রন গুলা সেই একই জায়গার মধ্যে ঘুরাফিরা করছে।

বেতওয়ালা শিক্ষক যত ভয়ঙ্কর হবেন, অথবা, চকলেট যত বেশী লোভনীয় হবে, বাচ্চাদের দৌড়ের গতি ততই বেশি হবে। এটা হলো ভোল্টেজের সঙ্গে কারেন্টের সম্পর্ক। এক শিক্ষকের থেকে অন্যজন যত বেশী ভাল, অর্থাৎ ভোল্টেজ যত বেশী, দৌড়ের গতি বা কারেন্ট তত বেশী। এর পরের কিস্তিতে রেজিস্ট্যান্স, ক্যাপাসিটেন্স আর ইন্দাক্টেন্স নিয়ে লিখব।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.