আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আল্লা, তুমি এত নিষ্ঠুর?

আমি পথ মঞ্জরী ফুটেছি আঁধার রাতে

বড় মেয়েটার বয়স ১৩, ছোট মেয়ের ৫। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। মা অনেক বছর ধরেই অসুস্থ। হঠাতি অবস্থার খুব অবনতি হওয়ায় দুই মেয়ে মাকে নিয়ে হাসপাতালের দ্বারস্থ হয়েছে। রাত সাড়ে নয়টা বাজে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।

সেদিন সৌভাগ্যক্রমে কনসালটেন্ট স্যার এসেছেন অসময়ে। তাঁকে জানালাম স্যার পেশেন্ট দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভুগছেন। দুবার অপারেশন হয়েছে, এখন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, কিন্তু এটা asthma-র শ্বাসকষ্ট নয়, এখানেই আমার ভয়। স্যার নেবুলাইজেশনের advice দিলেন। রাত ২ টা।

বড় মেয়ে এসে বলল আঙ্কেল মার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে। রোগী পরীক্ষা করে শংকিত হলাম। এত রাতে কনসালটেন্টকে ডাকলেও আসবেন না এবং আসলেও তিনি কিছু করতে পারবেন না। জিজ্ঞেস করলাম তোমার বাবা কোথায়। মেয়েটা কিছুক্ষন মাটির দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল বাবা আমাদের দেখেন না।

উনি নেশা করেন। আমাদের মামা (মধ্যবিত্ত) অনেক কষ্ট করে আমাদের কিছু টাকা সাহাজ্য করেন যা দিয়ে আমরা চলি। উনার নিজের সংসারেও টানাটানি। ওদের বড় ভাই (১৪ বছর বয়স) সকালে আসবে। মেয়েটি কাতর হয়ে বলল আঙ্কেল আপনি মাকে ভাল করে দেখেন।

আমি চেয়ারে বসে নেবুলাইজারটা নাড়াচাড়া করলাম। রোগীকে আরেকটু পরীক্ষা করলাম। মেয়েটা জায়নামাজ চেয়ে এনেছে নার্সের কাছ থেকে। সে চার রাকাত করে নামাজ পড়ে, দোয়া করে, তারপর এসে জিজ্ঞেস করে, আঙ্কেল একটু ভাল হয়েছে? পেশেন্ট শেষ নি:শ্বাসের দিকে যাচ্ছে বুঝেও বলছি হ্যা একটু ভাল। ছোট বোনটাও তার সাথে কিছুক্ষণ নামাজ পড়ে একসময় মায়ের আঁচলে নিজেকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

ভোর ৫ টা বাজে। মেয়েটা নামাজ পড়েই চলেছে। পেশেন্ট মারা গেছে। মেয়েটা যথারীতি দোয়া শেষ করে জিজ্ঞেস করল আঙ্কেল এখন কেমন। আর ভণিতা করা যায় না।

বললাম উনি মারা গেছেন। মেয়েটা কাঁদলো না, মার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লনা, শুধু উপরের দিকে তাকিয়ে বলল “আল্লা, তুমি এত নিষ্ঠুর?”

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.