Let the wind blow out the candles
আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি মনে হয় হরিদাস পালে ভরে গেছে। মার্কেট টার্কেটে ঘুরতে বের হলে কিছু অদ্ভুত গান বাজনা শুনি ইদানীং- যেগুলো প্রথমে হিন্দি সিনেমার গান বলে ঠাওর হয়। খুব মনোযোগ দিয়ে শোনার পর আবিষ্কার করি - সেগুলো আসলে সুকন্ঠী পুরুষকন্ঠে আবৃত বাংলা গান। গানের মাঝে কিছু 'হিপহপ' টাইপের ইংরেজি রাপও শোনা যায়। গানের লিরিকস খ্যাতের শিরোমণি হলেও মিউজিক কম্পোজিশনের জন্য একটা ছোটখাট ধন্যবাদ দেয়া যায় প্রডিউসারকে।
এই গানগুলোর প্রতি আমার কোন বিদ্বেষ নেই, বরং একদিক থেকে ভালোই। বিয়ে টিয়ে বা অনুষ্ঠানে যদি ঝাকানাকা টাইপের হিন্দী গানের বদলে এইসব বাংলা গান বাজে, তাতে বরং ভালোই। মুহম্মদ জাফর ইকবালকেও এতগুলো গালি শুনতে হত না। এজন্যই, এখন বাজারে যেসব "রিমিক্স" টাইপের গান বিক্রি হচ্ছে, সেগুলোকে মোটামোটিভাবে বাংলা মিউজিকের রেভ্যুলুশন টাইপ কিছু বলা যেতে পারে, কারণ ডিজিটাল মিউজিক শোনার মজা আলাদা। রিমিক্স - টেকনো টাইপ গানে আমরা পিছিয়ে থাকবো কেন? মিউজিকের এই লাইনেও বাংলাদেশ ভালোই এগিয়ে গেছে বলতে গেলে ফুয়াদ - হাবিব এবং আধুনিক কালের বালআম, হৃদয় খানদের বদৌলতে।
ঢাকাইয়া বিয়ের অনুষ্ঠানে বেশ ঘটা করে গান বাজনা হয়, "শিল্পী"রা নিজেই গান টান গায়, মিউজিক থাকে। এই সব অনুষ্ঠানে এখন মিলা-বালাম দের গান গাওয়া হয়। আগে যেখানে গাওয়া হত হিন্দী গান।
সমস্যা একজায়গাতেই - যখন দেখা যায় কোন একটা হিট গানের পেছনে আসলে যার নাম শুনে আসছি, তার ভূমিকা শুধুই সুন্দর করে কপি মারার। আসল ক্রেডিট অন্য কারোর।
যার নামে গান শুনে আসছি, সে আসলে বস্তাপচা ছ্যাচ্চর টাইপ - যার মেধা দেখে অবাক হয়েছি সে আসলে সুচতুর চোরবিশেষ - আসল মূর্তির গর্দানের জায়গায় নিজের মাথাটা বসিয়ে দিয়ে নিজের কুৎসিত দেহটাকে যে আড়াল করে আসছে দিনকে দিন।
ফুয়াদের মিউজিক চুরির কথাটা আগেই জানেন হয়তো অনেকে - সামহোয়ারইন ব্লগে কেউ একজন হয়তো লিখেছিল এ নিয়ে যদ্দূর মনে পরে - লিংকটা এখন পাচ্ছি না। অনিলার গাওয়া "ডাক দিয়াছে দয়াল আমারে" গানটার মূল মিউজিকটাই ফুয়াদ সাহেব ইংরেজি গান থেকে মেরে দিয়েছেন। যাকগে - ফুয়াদকে নিয়ে বেশি ইনফো নাই আমার কাছে। ফেসবুকের গ্রুপের সৌজন্যে "হৃদয় খান" নামের আরেক মিউজিক প্রডিউসার (পড়ুন কপিপেস্টার) এর ভেলকি দেখে পুরা বেকুব বনে গেলাম।
এই লোকের কয়েকটা গান মোটামোটি ভালো, মেটাল শোনা আমার কানেও ভালো লাগে আরকি। এখন একি দেখি, এর গানের মিউজিক দেখি হিন্দী গানের কপিপেস্ট! আসুন দেখি নিজের চোখেই, মানি শুনি নিজের কানেই!
Click This Link
Click This Link
Click This Link
আর দরকার নেই। যে লোকের এত গুলো গান কপি মারা - তার প্রতিভা যে কোন লেভেলের, বোঝা হয়ে গেছে।
এখন একটু আলোচনা করা যাক - এই লোকগুলোর গানের পুরো অংশ আবার কপি মারা না, মূল সুর, মিউজিকের অংশবিশেষ অন্য গানের পুরোপুরি/আংশিক কপি। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? (!)
প্রথম কথা হল, যে লোক অন্যের নাম কেটে নিজের নাম বসায়, তাকে আপনি কোন চোখে দেখেন।
অন্যের বস্তু চুরি করে নিজের নাম বেচার মাঝে আপনি যদি অপরাধ/গ্লানির ছিটেফোটা না দেখেন, তাইলে আসলে কিছু বলার নেই। আপনার মানসিকতার ব্যাপার স্যাপার।
কিছুদিন আগে বন্ধুমানুষ বর্ণিল আধার সঙ্গীত তথা সংস্কৃতি বিকৃতি নিয়ে যে লেখাটি লিখেছিল সেটার কথায় আসি। এখন রবীন্দ্রসংগীতও বিকৃত করে রিমিক্স বানানো হচ্ছে। নাম না জানা অখ্যাত গায়ক-গায়িকা-প্রডিউসার রা এই রিমিক্সের হাত ধরে পাচ্ছে পরিচিতি আর টাকাপয়সা।
রিমিক্স - জিনিসটাকে উসকে দিয়েছে কিন্তু হৃদয় খান - ফুয়াদ রাই। ব্যপারটা এই লেভেলে গেছে যে গীতিকার/সুরকার বা গানের লেখকদের নাম প্রকাশতো দূরে থাক, অনুমতি নেওয়ার নূন্যতম সৌজন্যতাবোধেরও ধার ঘেষা হয় না। হিন্দী গান নকল করে আমার প্রিয় বাংলা গানটার রিমেক আমি চাইনা। তা যতই সুন্দর/সুশীল পর্যায়ে যাক না কেন, তথাকথিত "শিল্পী" বা প্রডিউসারকে কোন সম্মান দিতে আমি রাজি নই।
নকল করে গান বানায় যারা, তাদের ব্যবসা যে বেশিদিন চলবে এমনটা ভাবারও কোন কারণ নেই।
নিজের সৃজনশীলতা না থাকলে বেশিদিন নাম বেচে খাওয়া যায়না। নকলের অভিযোগ যখন এদের দিকে আঙ্গুল তাক করবে, দেশের ভাবমূর্তিকে এরা খুব সুন্দর করে উজ্জ্বল করে দেবে। এমন মেধাবী সন্তানের দরকার নাই আমাদের।
ছবিসূত্র: ফেইসবুকের হৃদয়-খান গ্রুপ। গানগুলোর লিংকের জন্য কাজী মামুনকে ধন্যবাদ না দিলেই নয়।
আপডেট: হৃদয় খানের লেটেস্ট এলবামে দেখলাম একটা গান , যার অর্ধেক থেকে শুরু করে বাকিটুকু সলিড হিন্দী!!! কি আর বলুম
ইতোপূর্বে প্রকাশ: চতুর্মাতৃক ব্লগে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।