খরগোশ কাহিনী ১
ক্লাস নাইনে পড়তাম। আগের পোষ্টই বলেছি যে প্রাণীর প্রতি আমার বেশ দুর্বলতা ছিল। হঠাৎ
মাথায় এলো যে খরগোশ পুষবো, যেই বলা সেই কাজ- চট্টগ্রাম রিয়াজ উদ্দিন বাজার থেকে
দেখেশুনে একটা খরগোশ কিনলাম। কেনার সময় দোকানী বল্লো যে- খরগোশটা শেম্পু দিয়ে ভালো
করে গোসল করাবেন আহলে দেখবেন আরো বেশি সুন্দর হয়ে গেছে। বাচ্চা একটা খরগোশ কিনলাম।
বাসায় এনে চিন্তা হলো যে রাখবো কোথায়। পরে আপাতত কয়েক দিনের জন্য আমার বাটা জুতোর বাক্সের মধ্যেই রাখলাম। পরদিন সকালে শেম্পু দিয়ে গোসল করালাম। গোসলের পরে দেখছি খরগোশ আশি বছরের বুড়োর মত কাঁপছে। সবাই বলছে এমন শীতের মধ্যে এই বাচ্চাটাকে কেন যে গোসল করাতে গেলি? এতো মরে যাবে।
আমি তাড়াতাড়ি রোদ খুঁজে বের করে রোদ পেহাতে দিলাম। খরগোশটার এমন কাঁপুনি দেখে আমি ভেবেছিলাম যে আসলেই হয়ত মারা যাবে। মনে মনে যথেষ্ট শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। পরে ঘন্টা দুয়েক পর আস্তে আস্তে আমার খরগোশটা ভালো হতে লাগলো।
ভরসা পেলাম। খুব মজা পাচ্ছিলাম খরগোশ পালতে পেরে। স্কুলে যাওয়ার আগে ঘাস এনে দিয়ে যেতাম আবার স্কুল থেকে এসে প্রধান ডিউটি ছিল খরগোশ চড়ানো। এ ফাঁকে একটা কথা মনে পড়ল- খরগোশ চড়ানোর দরুন খুব মজা করে আড্ডা দিতে পারতাম নিচ তলার সমবয়সি মেয়েটার সাথে। খরগোসের সুবাধে
মেয়েটার সাথে অনেক মজার সময় কাটাতে পারতাম।
যাক মেয়ে কাহিনী বাদ খরগোশ কাহিনীতে যাই....খরগোশটা নিয়ে ভারি সমস্যায় পড়তে হল কয়েক দিনের মধ্যে। রাতে পেশাব করে সব ভিজিয়ে ফেলে। প্রতিদিন সকালে উঠে ঘর মুছতে হয় আমার। হাগু পরিস্কার করতে হয় ,ভীষণ ঝামেলা । সবচেয়ে বড়সমস্যা হল আমার মায়ের সুচিবায়ু আছে উনি এগুলো পছন্দ করেন না।
আরো ঝামেলা হল ও দৌড়ে পাশের ফ্লাটগুলেতে চলে যেতো সুতরাং তাদের নানা রকম কটু কথা শুনতে হত। একদিন রাতের কথা -- আমি পাশের বাসা থেকে এসে দেখি আমার খরগোশ নেই!!! আমি হতবাক!! শুনলাম খরগোশ বাসা থেকে বেড়িয়ে ঘরের এদিক সেদিক ঘুড়ে ঘর নোংড়া করেছে। তাই আমার মা রাগে এক লাথি দিয়ে নিচে ফেলি দিয়েছে। একথা শুনে আমি দৌড়ে নিচে গেলাম। দেখলাম ও আপরাধির মত সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে।
মায়ের ভয়ে সে ঘরে আসতে পারছেনা। আমাকে দেখেই লাফিয়ে আমার কোলে এসে পড়ল। আমি পরম আদরে ওকে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে আসলাম। অভয় দিলাম আমি আছি তোর ভয় নেই।
এভাবেই একের পর এক নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হল আমার।
তখন গ্রাম এর বাড়ি খুব মিস করতাম। কারন নিজেদের বাড়িতে যথেষ্ট জায়গা থাকায় ওকে নিয়ে আমার চিন্তার কারণ থাকতনা । তো পরে অনেক কষ্টে নিজের মনকে বেঁধে খরগোশটা একজনকে দিয়ে দিলাম। ওনার সাথে দেখা হলেই আমার খরগোশটার কুশল জিজ্ঞেস করতাম। মনে মনে ভীষণ কষ্ট পেতাম।
অনেক দিন পরে ঐ লোকের সাথে দেখা হলে জিজ্ঞেস করি- কেমন আছে আমার খরগোশটা?
সে আমায় হতাশ করে বল্লো- “আমার ভাগিনা খেলা করছিল খরগোশটা নিয়ে, হঠাৎ কোত্থেকে এক কুকুর এসে খরগোশটাকে এক কামড় বসিয়ে দিল। পরে আমি ডাক্তার এর কাছে নিয়ে ‘এ টি এস’ মেরে আনলাম। ’’
আমি বল্লাম- তারপর?!!!!!!!
উনি বল্লেন- তারপরও খরগোশটাকে বাঁচাতে পারলামনা।
আমার মনে হল আমার অতী আপন কেউ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে । আমি আর কিছুই সেদিন বলতে পারিনি।
কখন যে আমার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্র“ গড়িয়ে পড়ে আমার শার্ট ভিজিয়ে দিল তা আমি বুঝতেও পারিনি। বাসায় এসে মাকে খবরটা দিলাম- বল্লাম মা তুমিতো বেশ খুশি হয়েছ না? তোমাকে আর খরগোশটা জ্বালাতন করবেনা....!!!
দেখলাম মা নির্বাক -- কি যেন বলতে গিয়ে থেমে গেলান । মার চোখদুটো জলে ছল ছল করছিল...চোখের পাতা বুজলেই দু'ফোটা অশ্র“ মায়ের শাড়ি ভিজিয়ে দিত কিন্তু তার আগেই আমার মা আমার সামনে থেকে উঠে তাঁর রুমে চলে গেলেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।