মাকড়সা সম্পর্কে সবাই জানে......
সকাল সকাল সুন্দরী প্রিয়তমার ডাকে ঘুম
ভাঙ্গে জাভেদের। খুব দ্রুত তৈরী করে নেয়
নিজেকে, অফিসে যেতে হবে যে। ভাল
বেতনের চাকুরীর জন্য মাঝে মাঝেই
সিএনজি তে উঠে বসে, আজও তার
ব্যতিক্রম হল না। ইচ্ছে আছে বেতন আরও
একটু বাড়লেই
একটা গাড়ি কিনে ফেলবে সে, তারপর মা,
বাবা, বৌ আর আদরের ছোট
বোনকে চমকে দিবে।
বাইরে বেড়াতে নিয়ে গেলে ছোট
বোনটা কতই না আব্দার করে ভাই এর কাছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই অফিসে ঢোকে সে,
বিশাল অফিস। একপাশেই তার জন্য
আলাদা একটা রুম। অনেকে নিজের ডেস্ক
থেকে শুভ সকাল জানায় তাকে।
মনটা ফুরফুরে লাগে। নিজের যোগ্যতায়
চাকরীটা পেয়েছে ও।
ঈদের আগে আজই
শেষ অফিস, কাজের চাপও একটু বেশি।
তারপরেও আজ সবাই খুশি, বেতন+
বোনাসের টাকা পাবে সবাই। অফিস
থেকে ফেরার সময় দুইটা আড়ং এর
পাঞ্জাবি, একটা নিজের আরেকটা বাবার
জন্য, একটা বড় পুতুল পান্ডা ছোট বোনের
জন্য( যদিও এখন ও ক্লাস টেন এ পড়ে,
সামনেই ssc দিবে) কিনে নিয়ে আসে।
বৌ বা মায়ের জন্য কিছু কেনে না, কারন
এবার বৌ শাশুড়ি মিলে ঈদের বাজার
করবেন বলেছেন।
ঈদের দিন সকালে গোসল শেষে সবাই নতুন
কাপড় পড়ে সমবেত হয় নামাযে।
নামায
শেষে বাসায় এসে যথারীতি ভাই বোনের
খুনসুটি, মা বাবার আদরের বকা, স্ত্রীর ক্ষীণ
অভিমানি ভালবাসায় এক
টেবিলে বসে সেমাই উতসবে যেন চাদের
হাট। মা আড়ালে নতুন বৌমার জোর
করে কিনে দেয়া আচলে চোখ মোছেন,
বাবার গলাটা ধরে আসে আবেগে। জাভেদ
সবকিছু খেয়াল করলেও এড়িয়ে যায়।
"হারামজাদাটা এখনও ঘুমুচ্ছে? জমিদারের
পুতরে বাইর কইরা দেও না ক্যান!!!
বুড়ো ধাড়ি, এখনও বাপের
ঘাড়ে বইসা রইছে কোন আক্কেলে?" অসুস্থ
বাবার গলা ভাঙ্গা চিতকারে ধড়ফড়
করে উঠে বসে তেল চিটচিটে বিছানায়।
নাহ, কিছুই করতে পারছে না জাভেদ, নাই
তার মামা চাচা, নেই কাগুজে নোটের জোর,
চাকুরি কিভাবে হবে? বি সি এস এ টিকেও
কিছুই হল না, ভাইবা বোর্ড এ গেলেই
সরাসরি বলে বসে, "কে আছে তোমার?"
কেউ যে নেই ওর।
বাবার চিকিতসা,
সংসারের খরচ, বোনের ফরম ফিলাপের
টাকা- কোনটায় জোগাড় হয় না। কিন্তু
না,এবার হবেই...
পকেটে ৩০ টাকা আছে, একটা ছোট চাকু
কেনে ও, ষ্টেশনের পাশেই
নিরিবিলি একটা জায়গা দেখে বসে থাকে
ঝোপ বুঝে কোপ মারবে।
একটা রিক্সা এগিয়ে আসছে, প্রৌড় একজন
ভদ্র লোক বসে আছেন,
সামনে গিয়ে দাড়ালো জাভেদ, নতুন
ঝিলিক দিয়ে ওঠা চাকুটা দেখিয়ে টাকার
ব্যাগ টা নিয়ে নিলো,
কেদে দিয়েছিলো লোকটা, কিন্তু O একদমই
মায়া দেখায়নি।
মায়া কেন দেখাবে, এ সমাজ তো তার
প্রতি মায়া দেখায়নি, মূল্য দেয়নি তার
মেধা আর পরিশ্রমের, তাহলে ওই
বা সমাজের মানুষের
প্রতি মায়া দেখাবে কেন!!!
ব্যাগটা নিয়ে প্রথমে একটু দৌড়,
পরে আস্তে আস্তে হাটতে শুরু করে ও।
ট্রেন আসার হুইসেল শোনা যাচ্ছে দুর
থেকেই, গন্তব্যে ফিরছে ট্রেন...
সাথে জাভেদ সাহেবও....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।