সীমাহীন পথে ছুটে চলা নদীতে সাঁতার কাটি আমার অবারিত স্বপ্নের বৈতরনি নিয়ে ..........
সকালের সুখ-চা পর্বে ,ফোন কল আসলো , হ্যালো বলতেই , ওপাশে আমার একমাত্র স্বামী (আমি তো বিরাট টাশকিত , চা এর সাথে ফ্রী টাশকি খাইলাম , এই সময় এ উনি ? হু কর্পোরেট সুন্দরী দের মোহ সকাল সকাল ই কাটল তাহলে আজকে ) বলল , এই সামিয়া ওর অফিস কলিগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু )সাথে কথা বলবে বলে ,আপাকে ফোন টা দিল ...... আমি সালাম দিলাম , ওয়ালাকুম আস-সালাম বলেই উনি বললেন, ভাবি জানেন তো আমি আমার বাবা মা এর একমাত্র সন্তান ? চুপচাপ শুনে গেলাম, উনি বলতে লাগলেন আমার ছোট বেলা টা অনেক নিঃসঙ্গ কেটেছে , মন প্রান দিয়ে একজন নিজের ভাই বোন চাইতাম ।
আমার বাব মা মারা যাবার পর, আমার নিজের বলতে কেউ থাকবে না, হয়ত মামা , চাচা , কাজিন ভাই বোন ফুপু খালা, নিজের নিজের রক্ত নাই ...
আমি চাই না আমার ছেলে মেয়ে আমার মত একটা শৈশব হোক , আপনি জানেন আমার দুই মেয়ে , এখন মনে হয় আমি মরে গেলে, ওরা দুবোন একজন আর একজন কে সামলাতে পারবে , কষ্ট ভাগ করে নিতে পারবে ।
সেই জন্যই হুদা কে বলছিলাম আপ্নারা আর একটা বেবি নিয়ে নেন ,মেয়ে তো বড় হয়ে যাচ্ছে ,এখন ওর একজন ভাই বোন থাকলে, একসাথে দেখবেন নিজেরা খেলবে , আপনার কষ্ট অনেক কমে যাবে ...
এতক্ষন আরিন্দম কহিলা বিষাদে । ।
্মনে মনে ভাব্লাম তাই বলেন আপা ......।
। আমাকে এই কথা কথা গুলর মানে কি বুঝলাম ,আর এটাও বুঝলাম কার বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না অবস্থা । ।
মাত্র মেয়ে টা কোল থেকে নেমে হাটাহটি করে, আমিও একটু হালকা পাতলা শাড়ি পরা শুরু করছি , আর বলে কি আবার বছড় ২ এর জন্য ............
শুক্রবার ইভানা ভাবি আসলেন , ননদ দেবর নিয়ে আমার সংসার , দেখে বললেন, তোমার মেয়ে তো সারাক্ষণ ফুপি চাচ্চুর কাছে ই থাকে,তুমি কেন আর একটা বেবী নিচ্ছ না ?
বলতে দ্বিধা নেই আলহামদুলিল্লাহ্ পরম করুনাময় এর রহমতে , জীবন সব সময় আমার প্রতি মুচকি হেসেছে , প্রথম মা হবার অনুভূতি পরে পাওয়া চৌদ্দ আনা ই
কিছু বুঝে উঠবার আগেই এক সিনিওর কলিগ আমার হাতে টেস্ট রিপোর্ট ধরিয়ে দিলেন বস এর কাছে জমা দেয়ার জন্য ,যেহেতু তখন চাকরি করতাম অফিস এ জানানোর একটা ব্যাপার ছিল ..
বাকি দু -আনা র জন্যই হয়ত বা যেভাবে প্রতিটা মা ই ভুলে যায় তার দশ মাস দশ দিন এর অসহনীয় যন্ত্রণার ইতিকথা তেমনি ,আমাকে ও আমার প্রথম সন্তান এর প্রথম কান্না র সৃতি ,পবিত্র মুখচ্ছবি সব কিছু ভুলিয়ে দিয়েছিল ...............
এস নিজে করি র জমানায় আমিও বাসায় বসেই নিশ্চিত হলাম
পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে দুই মাস এর সময় একবার আলট্রা সনগ্রাম করিয়েছিলাম , শিশুর অবস্থান ফ্লুয়িড এর যথেষ্টটা যানতে । আল্লাহ র রহমতে সব কিছুই ঠিক ছিল , বিধায় আমার জন্য ব্যাবস্থা পত্র হল ক্যালসিয়াম , আয়রন ট্যাবলেট , প্রচুর পরিমান তরল খাবার , ভিটামিন এ যুক্ত ফল ও শাক সবজি , ফলিক এসিড যুক্ত খাবার যা তরমুজ এ প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায় , গর্ভকালীন সময়ে প্রথম তিন মাস নাকি বাচ্চা দের ব্রেইন এর গঠন হয় যা ফলিক এসিড বড় ভুমিকা পালন করে , ফরটি ফাইড ফুড হিসেবে হরলিক্স দেয়া জেতে পারে , আর প্রচুর মিষ্টি জাতীয় খাবার ।
সব সাধারন বাসার কাজ দৈনন্দিন কাজ , সব চাইতে গুরুত্ত পূর্ণ আবশ্যিক বিষয় হচ্ছে ,আনন্দে থাকা , কুরআন তেলয়াত নামায ।
আসলে নিজের অভিজ্ঞতায় লিখলে এটা নিয়ে একটা আলদা পোস্ট দেয়া যায় । ............ সুতরাং এইটুকুই ।
আশে পাশের ভাবি দের প্রশ্ন বোধক দৃষ্টি আল্ট্রাসনগ্রাফি তে কি দেখছেন বেবি বয় না গার্ল ? আমি যতই বোঝানর চেস্টা করি সেটা বোঝার জন্য আরও সময় দরকার , ততই উনাদের সন্দেহ বেরে যায় , কেউ আমার জেরা শুরু করেন , প্রথম বার এর সাথে এই বার এর মিল আছে কি নাই ?
আমার উত্তর ভাই একি রকম লাগে , মিল যদি থাকে তাহলে প্রথম বার এর মত মেয়ে বেবি ই হবে ,
আপনি তো ভাগ্যবান দুই কন্যার মা । ।
কেউ কেউ আবার প্রশ্নের ধার ও ধারেন না , আমাকে দেখে বলেন ভাবি আপনার লুক অনেক খারাপ হয়ে গেছে , আপনার ছেলে হবে দেখে নিয়েন ( ও মোর আল্লাহ আমি দেখতে কবে বালা আছিলাম )
এই ধরনের সব কিছু মিলিয়ে সময় কেটে যাচ্ছিল মেয়ে যেহেতু ছোট স্কুল শুরু হয়নি প্রচুর অবসর পেতাম , আমার কাছে বিভিন্ন প্রকাশনীর কুরআন শরীফ এর অনুবাদ ছিল সময় কাটাতে শুরু করলাম সব গুলি থেকে নিজের মত করে সুরা গুলকে নিজের ভাষায় লিখা , সুন্দর সুন্দর দোয়া গুলর নোট নেয়া , কিন্তু খুব বেশি দিন সম্ভব হল না, আমরা আমার দেবর এর জন্য পাত্রি খুঁজছিলাম , পেয়ে গেলাম এবং তড়িঘড়ি করে আমার বাসায় ই বিয়ের সব আয়োজন শুরু হয়ে গেল , আমিও পথভ্রষ্ট হয়ে গেলাম ।
মা অনেক দূরে , পাশের দুই ভাবী আমার সেই অভাব বুঝতে দিলেন না, প্রতিদিন উনাদের বাসায় যাই রান্না হত ঠিক সময় আমার কাছে চলে আসত , সব চাইতে মজার ব্যাপার আমার প্রেগন্যান্ট হবার সাথে সাথে আমার প্রতিবেশি দের ও প্রতিদিন এর খাদ্যাভ্যাস পালটে গেল , তালিকায় যোগ হল, সামুদ্রিক মাছ , কচু শাক , মিস্টি কুমড়া ,শুটকি মাছ ।
মেয়ের ব্যাবহার করা কিছু সুন্দর কাঁথা সংগ্রহে ছিল , সাথে জমা হতে থাকল , ভাবি , জা ,বড় বোন , মা , শাশুড়ি র ভালবাসায় বোনা নতুন সব ।
এই সময় আমার মতে সবচাইতে বেশি জরুরি সঙ্গীর যত্ন , আমার মনে হয় আমি আমার সংসার জীবনে পুরুটা সময় যতটুকু ধৈর্য ধারন করেছি ,তার চাইতে বেশি পরিমান ঐ দশ মাসে আমার স্বামী কে আমার স্বেচ্ছা চারিতা সহ্য করতে হয়েছে । সুধু মাত্র এই কারনে আমি আমার স্বামীর আমার প্রতি সারাজীবনের করা সব অবহেলা অনায়েসে মাফ করে দিতে রাজি ।
সন্তান ধারন করলেই সুধু মা হওয়া যায় না , একজন মা
শেষ সময় গুলতে ডাঃ সাজেস্ট করেছিলেন আল্ট্রাসনগ্রাফির ,আমি সুধু উনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কোন অস্বাভাবিক কিছু আছে , বাচ্চার নড়াচড়া , ফ্লুয়িড এর পরিমান কমে যাওয়া , বা পজিশন এর প্রব্লেম , উনি উত্তর দিয়েছিলেন না, সুধু মাত্র রুটিন চেক । আমি আর করাইনি ।
তবে সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডাঃ এর পরামর্শে করানো উচিত ।
ডেলিভারির দিন সকালে অস্বস্তি বোধ করছিলাম ,মা কাছে ছিলেন শেয়ার করলাম বললেন যেহেতু আর ১ সপ্তাহ বাকি যে কোন কিছু হতে পারে , মা আমাকে নিয়ে ডাঃ এর কাছে গেলেন পাশেই ছিল হস্পিটাল । এখানে একটা কথা বলে রাখি , আমি কিন্তু প্রাধান্য দিয়েছি , সবচাইতে দ্রুত সময় এ কোথায় আমি যেতে পারব , যেহেতু আমি কোন ধরনের বিশেষ সমস্যায় ছিলাম না আল্লাহ রহমতে
বাসা থেকে বের হয়ে দেখলাম গাড়ি এখন ও অফিস থেকে ফিরে নাই , হাট তে থাকলাম ব্যাস্ততম প্রধান সড়ক এর অপর পারে ছিল আমার বাসা , মা আমাকে কিছুতেই হেটে পার হতে দিবেন না গাড়ি র জন্য অপেক্ষা করবেন ,আমি অপেক্ষা করব না হেটে পার হলাম, এখন ভাবি কত খানি অবিবেচক ছিলাম , বা মনের জোর ছিল ।
সব কিছু চেক করে ডাঃ বললেন হাতে প্রায় ১২ ঘন্টার মত সময় আছে , আমি যেন সন্ধার মাঝে হসপিটাল এ ভর্তি হয়ে যাই । তখনকার মত বিদায় নিয়ে রাত এ চলে এলাম , মেয়ে কে ওর খালা ও ফুপির কাছে রেখে , সেই মুহূর্তে আমার শারীরিক কস্টের চাইতে বেশী মন কষ্টের কারন ছিল মেয়ে কে আমার থেকে দূরে রাখা । মা আমার সাথে মাঝে মাঝেই আমি ব্যাথায় কাতর হয়ে পরছিলাম , আমি দোজখ এর শাস্তি পর্বে অনেক বড় একটি হাতুরি দিয়ে সজোরে বারি দেবার কথা পড়েছি , কিন্তু অনুভব করতে পারছিলাম তখন সেই শাস্তি র কথা, ১২ টার পর থেকে আমাকে পায়চারি করতে বললেন , আমি রুম এর এক মাথা থেকে অন্য মাথা হাটা হাটি করছি, মাঝে মাঝে ব্যাথার তীব্রতায় মাঝে মাঝে মা কে আঁকড়ে ধরে ব্যাথা সাম্লাচ্ছি , মা যেন আমার হাত এর স্পর্শে অনুভব করতে পারলেন আমার কষ্ট ,দৌড়ে গেলেন ডাঃ ডেকে আনতে ২। ৩০ এর দিকে আমাকে লেবার রুম এ নেয়া হল , ঠিক ফজর এর আযান এর রহমত এর সাথে আমি আল্লাহ র কাছে থেকে আর একবার রহমত প্রাপ্ত হলাম , মনে হল কিছুক্ষন আগের আমি থেকে নবজাতক এর কান্না র শব্দ আজান এর মধুর ধবনি সাথে নবজীবন ফিরে পাওয়া অন্য এক আমি , সকল ব্যাথা কষ্টের উরধে আমি , পাশ ফিরে আমার কান্না রত মা দিকে প্রশ্ন নিয়ে তাকালাম ,মা উত্তর দিলেন তোমার ছেলে হয়েছে , আলহামদুলিল্লাহ্ বলে পরম করুনাময় কে ধন্যবাদ জানানোর পর মা কে বললাম, বাবুল বাইরে অপেক্ষা করছে , ওকে খবর দাও । এর পর থেকে বাকি কোন কিছুই আমার পরিপূর্ণ ভাবে মনে নেই ।
মে মাসের ৩০ তারিখে আমার ২য় সন্তান আসে আমার কোল আলো করে ,আমার নারী জীবন এর মাতৃ জীবনের পূর্ণতা মিলে । সেপ্টেম্বার মাসে আমার তিন বছর বয়েসি মেয়ে আর ৩ মাস বয়সি ছেলে কে নিয়ে ,মুম্বাই এর যাত্রা করেছিলাম, স্বামীর কর্ম স্থান এ এয়ারপোর্ট এ ছেলে কলে নিয়ে বসে আছি ,২০ মিনিট এর মাঝে আমাকে ৩য় বার এর মত আমাকে অপেক্ষারত এক যাত্রী র প্রশ্নের সন্মুক্ষিন হতে হল আপনি এক যাচ্ছেন , কোন পুরুষ মানুষ নাই ? ৪র্থ বার কোলের ছেলে কে দেখিয়ে বললাম, একা না, পুরুষ মানুষ সাথে আছে .........
২০০৭ এ যেদিন ছেলে কে স্কুল এ দিলাম , ভিতর টা ফাকা লাগছিল মনে হচ্ছিল এই দু -ঘন্টা আর কাটবে না , ছুটির সময় যখন টিচার এর হাত ধরে আমার দিকে এগিয়ে এসছিল অভিমান চেপে রেখেছে যেন ঝর এর আগের থম থমে অবস্থা , হয়েছিল ও তাই , বেশির ভাগ বাচ্চা যেখানে কাদছিল, আমার ছেলে ছিল ঠোট চেপে , কিন্তু দূর থেকে আমাকে দেখে বাধ ভেঙ্গে গেল, আমি দৌড়ে যেয়ে কোলে তুলে নিয়েছিলাম
[sb]ছোট খাট দুঃখ ব্যাথা
আমার ছেলের এখন একটা সিক্রেট বুক হয়েছে , সেটা হচ্ছে তার পরিবার ।
জান্নাত নাম এর কোন এক মেয়ে পিছন থেকে এসে বুল হর্ন বানিয়েছে , এই দুঃখে সে ক্লাস এ জেতে চায় না,
একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে গাড়িতে দেখি মন খারাপ জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে ...
বলল আজ টিচার আস্ক করেছিলেন কে কি হয়ে চায় , সেটা ছিল এক থা টাইগার এর সময় , মা এর জিন বহনকারী ছেলে ও সালমান খান এর মত হতে চায় , বলে ফেলেছিল , সেটা শুনে নাকি পাশে র মেট বলছে । ।
আপনি সাকাল( চেহারা ) তো দেখ
ছেলে টা ছিল স্কুল মাঠে দাড়িয়ে , ওর এক ক্লাস মেট এসে বলল
ফজলে ইধার দেখ ,দেখল
উধার দেখ ,ওই দিকে ও তাকাল ।
।
উপর দেখ ,দেখল
বায়ে দেখ , সেটা দেখা ও বাদ গেল না ...
এর পর উলটা ঝারি মেরে ওই মেয়ে তাকে প্রশ্ন করল
ইধার উধার ইতনা ক্যেয়া দেখ রাহাহে ... ?
আপনি গার্ল ফ্রেন্ড কো ঢুন্ড রাহা হে ক্যেয়া ??
ছেলের বাবা শুনে বলল, দেখছ ইন্ডাইরেক্টলী আমার ছেলে কে প্রপোজ করল
আমার ছেলে টা এই মাস এর ৩০ এ ৮ বছর পূর্ণ হয়ে ৯ এ পা দিবে সবাই আমার ছেলে টার জন্য দোয়া করবেন যেন একজন মানুষ হিসেবে বেরে উঠে । আমার জন্য দরকার বিশেষ ভাবে দোয়া ,
আমাদের পুরনো ছবি দেখে জিগ্যেস করে , মা এখানে আমি নাই কেন ? তখন কোথায় ছিলাম আমি ?
আমি তখন বলি " ইচ্ছে হয়ে লুকিয়ে ছিলি মনের মাঝে রে "
উৎসর্গ ঃ ব্লগের মোরাল গল্প লেখক খেয়া ঘাট । মা দিবসে আপনার লেখা টা আমার মন ছুয়ে গেছে ,লেখাটা পড়ে আমি আবার আমাকে নতুন ভাবে মূল্যায়ন করতে শিখেছি , এত ব্যাক্তি গত কথা লেখা উচিত না ভেবে লিখি নাই এত দিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।