নারীদের নিয়ে পুরুষের কি আর অভিযোগের শেষ আছে? অভিযোগের উৎপত্তিস্থান যে মন, সেই মনের কারবারি সিগমুন্ড ফ্রয়েড সাহেবও মৃত্যুর আগে স্বগতোক্তির মতো করে বলে গিয়েছিলেন- ‘হোয়াট উইমেন ওয়ান্ট’! জীবনভর খুঁজে চলা প্রশ্নের কুলকিনারা করতে না-পেরেই বোধহয় ইহলোক ছেড়ে সখেদে চলে গিয়েছিলেন ভদ্রলোক। অন্য দিকে আবার এ ব্যাপারে পণ্ডিতরাও কিছু কম যান না; বরং ফ্রয়েডের চেয়ে এগিয়ে থাকেন দু’ কদম বেশিই! ‘নারীচরিত্র’ বলে প্রশ্ন তুলে উত্তরটাও হাওয়ায় ভাসিয়ে দায় সেরে ফেলেন তাঁরা- ‘দেবা ন জানন্তি কুতো মনুষ্যা’, অর্থাৎ দেবতারাই যা বুঝে উঠতে হিমশিম, তা নিয়ে যুঝতে যাবে কোন বুরবক দু’পেয়ে? অতএব নারীদের নিয়ে পুরুষের অভিযোগও অন্তহীন। লন্ডনে মনোবিদদের একটি সংগঠন সমীক্ষার মাধ্যমে বের করে ফেলেছে নারীদের নিয়ে পুরুষদের প্রধান চারটি অভিযোগ। সংখ্যাটা কি বেশি মনে হচ্ছে? না কি কম?
নারী-পুরুষের প্রেমের লীলা ও তার অগুনতি রহস্যময়তা নিয়ে তক্কো করতে চাই না। এ বিষয়ে বহু মত, যুক্তি কিম্বা থিওরি মনে হয় সভ্যতার আদি সময় থেকেই মানুষ নাড়াচাড়া করে আসছেন।
নারী বা পুরুষের এমন অনেক স্বভাব আছে যার কারণে প্রায় তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে অপরজন, নালিশ থাকে হাজারও’। কিন্তু পুরুষদের প্রধান চার অভিযোগগুলো কী?
সারাক্ষণ কিছু না কিছু কথা বলা : পুরুষদের মতে নারীর অশেষ কথামালার জ্বালায় প্রায় সর্বক্ষণই জেরবার তাঁরা! নারীদের মনের মাঝে এত অজস্র কথার উদ্রেকটা হয় কীভাবে- এই প্রশ্নই সকল পুরুষের মগজ দেশে ঘোরাফেরা করতে থাকে। পুরুষেরা এমনটা ভাবলেও লন্ডনের মনোবিদ করিন সুইট মনে করেন ‘মহিলারা যেমন সম্পর্ক আর আবেগ নিয়ে বেশি কথা বলেন, তেমনই লক্ষ্য কেন্দ্রিক, কিম্বা খেলাধুলো ও চাকরি জীবন নিয়ে কথা বলতে ভালবাসেন পুরুষ, তাই সেগুলি হয় বেশি ফোকাস্ড আর মহিলাদের কথাকে মনে হয় অবান্তর’! আর অনিতার মতে, পুরুষদের এমন মনে হওয়ার পিছনে মূল কারণ হল পরস্পরকে বোঝার অভাব!
কী ভাবছ : ছায়াছবির পর্দায় বহু নায়িকা বহু নায়ককে এই প্রশ্নটা করেছেন হাজার বার- ‘কী ভাবছ’? তখন পুরুষের জবানিতে দারুণ দারুণ সংলাপ শোনা গেলেও বাস্তবে সঙ্গিনীর এই কথাতে বেশ চটে যান পুরুষেরা। করিনের মতে, মহিলারা বেশিরভাগ সময়ই আসলে জানতে চান সঙ্গীর মনে তাঁদের সংক্রান্ত ভাবনা ঠিক কতটুকু; সমাজ যে নারীদের একটা ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সে ঠেলে দেয়। ওদিকে পুরুষদের মনে হয়, এমন সব বিষয়ে আগেই তাঁরা অনেক কথা বলে ফেলেছেন।
তাই এর থেকেই শুরু হয় বিবাদ।
অগোছালো স্বভাব : স্বামী হোক বা লিভ-ইন পার্টনার বা বয়ফ্রেন্ড, পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ মহিলাই তাঁদের বেটার-হাফদের অগোছালো স্বভাবের জন্য নালিশ করেন অহরহ। টয়লেট সিট নামিয়ে রেখে বেরিয়ে আসা হোক বা শেভিং কিট ছড়িয়ে রাখা, মোজা-জুতো ছুঁড়ে ফেলা অথবা টাই-শার্ট অন্যত্র রাখা… এমন অগোছালো স্বভাবে মহিলারা বেশ রেগে যান পুরুষদের ওপরে। অভিরুচি বলছেন, ‘আসলে বেশিরভাগ সংসারেই সেটাকে গুছিয়ে রাখার দায়িত্বটা নিতে হয় মহিলাদের; তাই খেটেখুটে গোছানো ঘর অগোছালো দেখলে তাঁরা চটে যান!
কথায় কথায় কান্না : যুক্তি-তর্কে না গিয়ে মহিলাদের চোখ থেকে যখন ঝরে পড়ে অঝোরধারা, সেটাকে ভয় পান না এমন পুরুষ কমই আছেন! আবার সেটাতে বিরক্ত হন না, এমন পুরুষও খুঁজে পাওয়া ভার। কথায় কথায় আবেগে ছাপু ছাপু হয়ে দু’ ফোঁটা চোখের জল টুপ করে গড়িয়ে পড়ে বলেই পুরুষেরা অনেক সময় মহিলাদের এই রোদনকে ‘ন্যাকা কান্না’ বলেও বিরক্তি প্রকাশ করেন।
কোনও তর্কে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখলেই যে এই নারীরা অশ্রুনিক্ষেপ করেন। অভিরুচি এর কারণ হিসেবে দায়ী করছেন সেই ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সকেই। ‘এখনও সমাজের অনেক নারীকেই বেঁচে থাকতে হয় পুরুষদের দয়ার ওপর নির্ভর করে, সেখানে তার ন্যায্য যুক্তি শুনতে না-চাইলে সারভাইভ্যাল অফ দ্য ফিটেস্ট পদ্ধতিতেই যুদ্ধ জয় করতে বাধ্য হয় নারী। সবাই যে বাধ্য হয়েই এমন করেন, তা নয়। অনেকের এটা স্বভাবও।
বেসিক বোঝাপড়ার অভাব থেকেই আসে এমন অশান্তি’, জানাচ্ছেন তিনি।
ওইসব টিপিক্যাল ফেমিনিন বা ম্যাস্কুলিন কিছু ইগো যদি একটু ঠেলে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন, তবে কিন্তু কেল্লা ফতে, অভিযোগ তো দূর অস্ত, সোহাগেই ভেসে থাকবে তখন ভালবাসার নৌকো। তাই যে যার নিজের বাউন্ডারির মধ্যে থেকে অপরকে একটু স্পেস দিলেই সম্পর্কটা ভাল থাকবে।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।