বল আমায় সেই সময়ের নেই কেন অস্তিত্ব, বোঝাও আমায় সেই কল্পনার নেই কোন সমাধান.....আমারি স্বপ্ন আজো জেগে রয় আধারো শুন্য চোখে ...
চার দেয়ালে আবদ্ধ ঘরের ভেতর থেকে বন্ধ জানালার ওপাশের সবকিছু আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকে। এইতো আর কটাদিন, তারপরে আমি বাইরের জগতের বাসিন্দা হতে পারবো। মুক্ত বাতাসে নিতে পারবো বুক ভরে নি:শ্বাস। না, আমি তা পারিনা অনেক দিনই। তাইতো সে বাতাস আমাকে অবিরাম ডেকে চলেছে।
বাতাসে ভেসে চলেছে নতুন জীবনের হাতছানি। আবার হয়ত ঘুরে দারাতে পারবো আমি। আবারো হয়তো সবকিছু ঠিকঠাক করে চালাতে পারবো নিজেকে। না আমি বন্ধিছিলাম না। আমাকে বন্ধি করা হয়েছিল।
করেছিল একজন মানুষ তার দু হাত আর দু পা দিয়ে। আমাকে জরিয়ে রেখেছিল তার সবকিছু দিয়ে। কিন্তু আমি তো তা হতে চাইনি। আমি তো পাখি হয়ে আকাশে উড়তে চেয়েছিলাম তাই তার হাতটা আমার হাতে উপরে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে চেয়েছিল আমার সবকিছুই তার করে নিতে।
এ যেন আমার নিজের বলতে কিছুই নেই। পারিনি আমি বহুদিন বুক ভরে নি:স্বাস নিতে। পারিনি আমি কাউকে কিছু বলতে। পারিনি আমি অনেকগুলো দিন আকাশ দেখতে। পারিনি আমি একা একা বৃষ্টিতে ভিজতে।
কিন্তু আমি আজ মুক্ত হতে চাই। আমার আকাশটা আমার মত করে সাজাতে চাই। সে আকাশে আমি চাইলেই বৃষ্টি হবে। আমার চাওয়াতেই উড়ে চলবে পাখি। হয়ত এখন সে সময় এসে গিয়েছে।
আমি এখন দড়িয়ে আছি সেই সময়ের দাড়প্রান্তে। জানালা খুলে আলো আসতে দিতে ইচ্ছা করে। তাই দারিয়ে কড়া নারছি এই জানালায়।
সকাল থেকেই বসে আছি আমি আর আমার মা আর আব্বু। আব্বু কে আরেকটা বার বাবা বলে ডাকতে ইচ্ছা করছে।
এই মানুষটাই আমার মুক্তির ব্যাবস্থ্যা করে দিচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগে এই মানুষটাকেই আমি সব চেয়ে বড় দু:খ দিয়েছিলাম সেই মানুষটির জন্য। আজ আমি তো আছি। পাশেই আছে আমার পরিবারের সবাই। আমরা অপেক্ষ্যা করছিলাম যার জন্য তিনি এসে গিয়েছেন।
নানা প্রতিকুলতার মাঝে নিজেকে গুছাতে বৃথা চেস্টা করছি। কোন ভাবেই যেন লোকগুলো আমার মনের কথাগুলোকে আমার অজান্তে বুজতে না পারে। যদি তারা বুজে যায় তাহলে হয়ত আমার এ যাত্রায় মক্তি হবেনা।
সে মানুষটি জঘন্ন একজন মানুষ। আমাকে চারদেয়ালে মাঝে বন্ধি করে রেখেছিল ৫টি বছর।
এমনসব মানুষের জন্য্ আমাদের মত মেয়েরা আত্যহত্যা করতে পিছ পা হয়না। আমার তো ভাগ্য ভাল। তাই পেরেছি মানুষটির কাছ থেকে সরে আসতে। কিন্তু যে মানষটির জন্য টি বছর নরক যন্ত্রনা ভোগ করেছি তাকে উচিৎ শিক্ষ্যা দিতে চাই, তাই এখানে আব্বু আমাদের নিয়ে এসেছেন। আজ আমি বলবো সেই ৫টি বছেরে অসজ্য যন্ত্রনার কথা গুলো।
নাম কি? প্রশ্নটা করেই কাগজে লিখতে বসে গেলেন মানুষটি। আমি বল্লাম শামিনা ইসলাম। তিনি আবার আমাকে প্রশ্ন করলেন - বয়স?
আমি বল্লাম ২১ বছর। তিনি আবার আমাকে প্রশ্ন করলেন - স্বামীর নাম- আমি বল্লাম তার নাম - রাব্বী। তিনি আবার আমাকে প্রশ্ন করলেন- বিয়ে কতদিন আগে হয়েছে-আমি বল্লাম ২০ ই মে ২০০৮ প্রায় ৫ বছর।
সবকিছু তিনি লিখে নিলেন। বাম হাত দিয়ে গাল চুলকাতে লাগলেন। চেচিয়ে সাগরবলে ডাক দিয়ে বল্লেন চার কাপ চা নিয়ে আয় সাবুর দোকান থেকে। সাগর চলে গেল চা আনতে। ঘরটাতে কোন জানালা নেই।
জানালা ছাড়া ঘর আমার কাছে ভাললাগে না। দম বন্ধ হয়ে আসে। ঘরটাতে এসি থাকার কারনে খারাপ লাগছিলা না।
অভিযোগের কারন জানতে চাইলেন লোকটি। কিন্তু আমি কি অভিযোগ লিখবো।
আমার যে অভিযোগ আছে তাতো এখানে আমি বলতে পারবো না। বাবার মুখের দিকে তাকালাম। না, তিনি কোন কথা বলছেন না। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। মৌন সম্মতি পেলাম বলে মনে হল।
গত কয়েকটা দিন ধরে তারা আমাকে শিখিয়ে আসছেন। না, শেখানোটা কোন স্কুলের বই সম্পর্কে না। বরং এতদিন টিচাররা যা শিখিয়েছিলেন তার বিপরিত। সদা সত্য বলিবে। সত্য বই মিথ্যা বলিবে না।
একথা গুলো কেমন জান রক্তের মত লাগে এখন। সত্য যদি বলি তাহলে যে আমি ই ফেসে যাবো। কিন্তু না আমার ভুল আমাকে ঢাকতে হবে। আমাকে আমার উদ্দেশ্যে থাকতে হবে অবিচল। যে করেই হোক আজ আমাকে তাদের শিখানো মিথ্যে গুলোকে সত্য প্রমান করতে হবে।
সবকিছু এখন আমার উপরে নির্ধারন করছে। আমি যা চাই সেটা পাবার এটাই মোক্ষোম সময়। কারেন্টা চলে গেল মনে হচ্ছে। ঘরটা ভেতর গুম গুম একটা শব্দ হচ্ছিল। এখন সে শব্দটা আর পাচ্ছি না।
লাইট গুলো নিভে গিয়ে আবার পিট পিট করে জ্বলে উঠল।
না, আমার সেই মানুষটি ভাল মানুষ ছিলানা। আমি সবসময় একটা মানসিক চাপে থাকতাম। আসলে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। এমন কি আমাকে একপায়ে দারিয়ে থাকার সাষ্তি দিয়েছিল।
তিনি আবার আমাকে প্রশ্ন করলেন - আপনি কি দাড়িয়ে ছিলেন। আমি বল্লাম না ছিলাম না। তবে এটা একটা উদাহরন। আমাকে কোন বিয়ে বাড়িতে যেতে দিত না। আমাকে কোন উনুস্ঠানে এটেন্ড হতে দিত চাইতো না।
সব সময় আমাকে কম্পিউটারে বসে থাকতে হত। সব সময় আমার উপর চোখ রাখতো। দুরে কোথাও যেতেচাইলে বলত না যাবার দরকার নেই আমি আসলে তোমাকে নিয়ে যাবো। কারন কি? কারন জানতে চাইছেন। অবাক হবেন।
কারনটা হল যদি গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়। কোন দিন কি গায়ে হাত তুলে ছিল? হুম তুলেছিল দুই বা তিন বার। একে একে বলতে লাগলাম ৫টা বছরের ঘটনা গুলো। আমি তো আসলে এমন করতে চায়নি। কিভাবেই যেন এসব হয়ে যাচ্ছে।
আসলে দুজনের মাঝে যখন অন্য কেউ এসে যায় তখন এমনি হয়। আর অন্য মানুষ গুলোকে আমিই এনেছি আমাকে বাচাতে। নাহলে আমি তো পারতাম না ভাল করে বেচে থাকতে। তাই বলে কি তাকে মেরে ফেলে। যার জণ্য একসময় দিতে পারতাম আমার জান।
আজ তাকেই আমি শেষ করে দিলাম। আজ আমার হতেই তার মৃত্য হল। সে কি এই দিন টার জন্য আমাকে ৩১ অক্টোবার ২০০৭ উপহার দিয়েছিল?
বাইরে বেরিয়ে আসলাম। এখন আকাশটাকে খুব পরিষ্কার মনে হচ্ছে। বাসায় গিয়ে জানালার পাশে বসলাম একা একা।
একটা প্রশ্ন বার বার মনে হচ্ছে। কাজটা কি আমি ঠিক করলাম। দোষ কি তার একারি ছিল। আমার কি কোন দোষ ছিলনা? আমার দোষগুলো ঢেকে শুধু তাকে খারাপ করে চলে আসলাম। শুধু এক হাতে কি তালি বাজে।
আজ কেন জানি মনে হচ্ছে তার কোন দোষ ছিলনা। সে যা করেছে ঠিকি করেছিল। আমি যদি তার জায়গায় থাকতাম আমিও তাই করতাম। আসলে সে আমাকে অন্ধ ভাবে ভালবাসতো। সে চাইতো না আমার কোন ক্ষতি হোক।
তাইতো সে আমাকে আগলে রাখতো সব সময়।
৫টা বছরে যত দুরেই থাকুক না কেন আমাকে তার চোখের আড়াল হতে দে্যনি কোন সময়। তাই বলেই তো তাকে আজ আমি এত বড় একটা উপহার দিলাম। আসলে সেদিন আমার ডাকে সে সারা দিয়েছিল এটাই তারবড় অপরাধ। সে তো পারতো আমাকে নষ্ট করে আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে।
না সে তো যায়নি। সে এখনো আমার প্রতিক্ষ্যায় বসে থাকে। আসলেই কি আমি কোন ভুল করছি। আমার স্বাধীনতার জন্য তাকে আমি পর করছি। এতো সেই যাকে পাবার জণ্য আমি ব্যাকুল ছিলাম।
তবে কেন আমি তাকে এমন ভাবে হেন্য করতে পারলাম। আমি কি সব সঠিক বলেছি?
একটু পর দেখলাম বাবা এল রুমে। আমাকে জড়িয়ে কপালে চুমু খেল। বল্লেন মা তুমি কোন কিছু চিন্টা করনা, ওর জীবনকে আমি তছনছ করেদিবো। এই বলে চলে গেলেন বাবা।
আর আমি তাকিয়ে থাকলাম আমার সেই আকাশটার দিকে। আমি কি আসলেই তাকে ভালবাসতাম। তানা হলে আজতার বিপক্ষ্যে কিভাবে গেলাম? কখনো কখনো বাবা মার সুখের জন্য নিজের আত্মাকে শাষ্তি দিতে হয়। অনেক দিনের পাশা পাশি ভোরের সাথিকে বানিয়ে দিতে হয় শত্রু। এখোনো কি আমি ভুলে গিয়েছি সেই দিন গুলোর কথা ?
আমার ছেলে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
মা - বাবা কি আসলেই খারাপ মানুষ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।