*~*জীবনে যত কম প্রত্যাশা থাকবে ... .. . তত বেশী ভালো থাকা যাবে*~*
মাষ্টার্সে পড়ার সময় যে স্যারের কাছে পড়তাম উনার মত গোবেচারা আর ভালো স্বভাবের স্যার আর দ্বিতীয়টি পাইনি। পুরা শ্বশুরবাড়ির গোষ্টীর সবাইরে ভরণপোষণ করত+একসাথেই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো। তাও স্যারকে দেখলে কেন জানি মনে হত শ্বাশুড়ী আর বউয়ের ভয়ে সবসময় অস্হির । স্যারের কাছে একটানা প্রায় তিনমাসের মতন প্রাইভেট পড়েছি। প্রথমদিকে স্যারের যে বাসাতে আমরা পড়তে যেতাম সেটা ছোট দু'রুমের একটা বাসা ছিল।
সেই ছোট বাসাতে স্যার শ্বশুর,শ্বাশুড়ী,২শ্যালক আর বউ-বাচ্চা নিয়ে থাকতো ....পড়ার দেড়মাসের মাথায় দেখলাম স্যার উনার ছোট দু'রুমের বাসা ছেড়ে বড় একটা ফ্ল্যাটে উঠে গেল। উনি এতগুলো ব্যাচ পড়াতো যে আমরা বলাবলি করতাম স্যার যদি তার শ্বশুড়বাড়ীর গোষ্টীরে না টানত তাহলে আরো অনেক আগেই এরকম ফ্ল্যাটে উঠে যেতে পারতো।
ফ্ল্যাটে উঠার পর থেকেই স্যারের শ্বাশুড়ীর আসল রুপ দেখতে পেলাম। আমরা পড়তে গিয়ে হাসাহাসি করলে কিংবা জোরে কথা বললে একটু পর পর স্যারের সামনে এসেই ধমক দিত আর মনে করিয়ে দেয় এটা ফ্ল্যাটবাড়ী... চিৎকার করে যাতে কথা না বলি। আবার রুমে ঢোকার সময় স্যান্ডেল এলোমেলো করে রাখলে শ্বাশুড়ী আম্মা দারোয়ানের মতন বলত স্যান্ডেল সুন্দর করে রাখবে.....স্যারের ২ শ্যালক তো আরো দুই ডিগ্রি এগিয়ে ছিলো ।
পড়ার পর আমরা যদি সিঁড়িতে কিংবা নিচে গ্যারেজে দাঁড়িয়ে গল্প করতাম তাহলে দৌঁড়ে এসে বলে যেত বাড়ীওয়ালা নাকি আমাদের আড্ডাবাজি নিয়ে তাদের কাছে অভিযোগ করবে। প্রথমে এমন উৎপাতে রাগ লাগলেও পরে অনেক মজা পেতাম আর হাসাহাসি করতাম এটা ভেবে যে নয়া ফ্ল্যাটের বাসিন্দা হয়ে কয়েকদিন ভাব নিচ্ছে। আমাদের গ্রুপের যে ৮ জন ছিলাম পড়ার সময়ে সারাটাক্ষণই এদের নামে বদনাম করতাম। স্যারের সামনে ও যাতে বদনাম করতে কোন সমস্যা নাহয় সেজন্য তাদেরকে আসল নামে না ডেকে নয়া নয়া ছদ্মনাম দিয়েছিলাম....শ্বাশুড়ী আম্মার নাম দিয়েছিলাম চুমকি(উনি কপালে বড় করে একটা টিপ পড়ত সবসময় আর মাথায় উঁচু করে খোঁপা করত বলেইআমাদের গ্রুপের ছেলেরা বলতো উনার নাম চুমকি দিয়েছিলো)। ২ শ্যালকের বড়টার নাম ছিলো বড় পায়জামা আর ছোটটার নাম ছোট পায়জামা(সবচেয়ে বেশী হাসাহাসি হত যখন তাদেরকে দেখতাম লুঙ্গি পরে ঘোরাফেরা করছে আর আমরা তাদেরকে দেখলেই পায়জামা বলে ডাকছি)।
স্যারের বউয়ের নাম দিয়েছিলাম টেপি(আমাদের সমবয়সী আর ক্লাশমেট হওয়া সত্ত্বেও সবসময় টোপামুখ করে রাখত)। খোসা নাম ছিল স্যারের শ্বশুরের নাম(বেচারাকে বউ,ছেলে,মেয়েরা কেউ পাত্তা দিতনা,ফলের খোসার মতন অবহেলা করত)। আমাদের যে ফ্রেন্ডের সাথে শ্বাশুড়ী আম্মার খিটিমিটি বেশী হত ও প্রাইভেটে এসেই উল্টাপাল্টা কিছু হলে বলত"চুমকিরে ধরে একটা আছাড় মারতে মন চায়"। আবার কেউ হ্য়ত বলছে"ছোট পায়জামার কালার(কাজ-কারবার) দেখলে রাগ লাগে,কুঁচি কুঁচি করে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিব"। স্যারের বউ সেমিস্টারের সময় সাজেশন নিজে না চেয়ে স্যারকে দিয়ে আমাদের কাছ থেকে কালেকশন করত তখন বিরক্ত হয়ে বলতাম"টেপির কান্ড দেখ হাড়ির মতন মুখ করে সে কি ভাব দেখায়"।
মাঝে মাঝে বলতাম"পচা খোসারে কই ফেলবো,বেচারার জীবনে শান্তি নাই"। স্যারকে কোন নাম দিইনি কারণ বেচারা বউ-শ্বাশুড়ীর চাপে এমনিতেই কোণঠাসা হয়ে আছে। তাও আমাদের গ্রুপের ছেলেরা উনার বউয়ের টেপী নামের সুবাদে স্যারকে মাঝে মাজে টেপা বলত।
এখনো আমাদের ফ্রেন্ডদের মাঝে এইরকম নাম দেওয়ার অভ্যাস আছে। বেস্ট ফ্রেন্ড কেয়ারে যখন ওর শ্বাশুড়ী কথা শোনায় তখন ও ফোনে সেটা শেয়ার করে।
সেখানেও কারো আসল নাম বলে না। কেয়া তার হাজব্যান্ডরে ডাকে খাড়া শয়তান,শ্বাশুড়ীকে খাড়া শয়তানের আম্মা আর ননদটা সমবয়সী হওয়াতেও খোঁচানি অভ্যাসের জন্য ডাকে উকুনওয়ালী(মাথায় হালকা পাতলা উকুন নাকি আছে)। এসব আজব আজব নামের ছিরি দেখে ২ বান্ধবীতে বদনাম করবো কি,শুধু হাসতেই থাকি.....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।