আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা – আর্য জনগোষ্ঠীর সভ্যতা

© এই ব্লগের সকল পোষ্ট,ছবি,থিম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কোথাও বিনা অনুমতিতে প্রকাশ করা নিষেধ ।

আর্য বা Aryans,যাদের কিনা ইন্দো – আরিয়ান ও বলা হয়ে থাকে। তারা ভারতবর্ষে এসে ছিল খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ বছর পূর্বে। যখন কিনা অনার্য জন গোষ্ঠীর সভ্যতা পতনের দিকে। আর্যরা এসেছিল ইরান হতে এবং আফগানিস্তান দিয়ে এরা ভারতে ঠুকে।

তবে এদের মূল আবাস ভূমি ইরান ছিল না গবেষকরা বলে থাকেন যে,এদের মূল উৎপত্তি কাস্পিয়ান সাগরের নিকটবর্তী কোন স্থানে। তারপর ঐ খান হতে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। আর্যদের কিছু লক্ষ্যনিয় বৈশিষ্ট্য: ১:আর্যরা ছিল অর্ধ যাযাবর প্রকৃতির। তারা পশু চড়িয়ে বেড়াত অনেকটা মঙ্গোলিয়ানদের মত। তবে এরা কৃষি কাজ ও করতে পারতো।

২:আর্যদের গায়ের রং ফর্সা ছিল। ৩:এরা অনেক পরিশ্রমি একটা জনগোষ্ঠী ছিল। ৪:তাছাড়া ও এরা অনেক ভালো যোদ্ধা ছিল। ৫:এরা নাচ-গান,জুয়া খেলা,মউজ-মাস্তি ইত্যাদি পছন্দ করত। আর্যদের ধর্ম: আর্যরা একাধিক স্রষ্টার উপাসক ছিল।

এদের ধর্মকে বৈদিক ধর্ম বলা হয়ে থাকে এবং এদের ধর্ম গ্রন্থকে বেদ বলা হয়ে থাকে। এছাড়া ও অন্যান্যের গ্রন্থের মধ্যে ছিল রামায়ন,মহাভারত ও উপনিষাদ। এখানে একটা মজার ব্যপার হচ্ছে যে আর্যরা সেই খ্রীস্টপূর্ব ২০০০ বছর এ এই ভারতবর্ষে আগমন করলেও তখন তারা লিখতে পড়তে জানত না। তাদের নিজস্ব কোন বর্ণমালা ছিল না। তারা তাদের এই ধর্মীয় মিথ গুলো মুখস্ত করত গল্পের মত করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।

তারা তাদের বর্ণমালা তৈরী করে খ্রীস্টপূর্ব ১০০০ এর দিকে অর্থ্যাৎ ভারতবর্ষে আসার ১০০০ বছর পর তারা তাদের কথ্য ভাষা কে লিখিত রূপ দেয়। আর এই লিখিত রূপকে আমরা সংস্কৃত ভাষা বলে থাকি। এই লিখিত রূপ আবিষ্কৃত হওয়ার পর তাদের ঐ ধর্মীয় মিথ গুলো লিখিত রূপ পেতে শুরু করে। আর্যদের ধর্মকে প্রথম দিকে বলা হত বৈদিক ধর্ম বা ব্রাহ্মণ ধর্ম এবং পরে এর নাম হয় হিন্দু ধর্ম। এই ধর্মে ব্রাহ্মণেরা অর্থ্যাৎ পুরোহিতদের অসীম মর্যাদা দেওয়া হত এবং এই মর্যাদা বা সুবিধার সুযোগে অন্যদের উপর নানা অত্যাচার শুরু করে।

আর এই অত্যাচার নিপীড়নের প্রতিবাদে খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর দিকে বৌদ্ধ ধর্ম ও জৈন ধর্মের উদ্ভব ঘটে। আর্যদের সামাজিক অবস্থা: আর্যদের সমাজ ব্যবস্থা পুরুষানুকুল ছিল। পুরুষরা সমাজের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করতো। আর্যদের সমাজ গঠনের শুরুর দিকে পুরো সমাজ ব্যবস্থা কে ভাগ করা হত মানুষজনের আর্থিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থান এর বিচারে। এই ভাগ মূলত তিন ভাগে বিভক্ত ছিল।

নিচে অবস্থান গুলো তুলে ধরা হল: ১:যোদ্ধা বা অনেক বড় জমিদার কে প্রথম স্থানে গণ্য করা হত। ২:পুরোহিতেরা ছিল এর পর এবং সব সময় পুরোহিত ও যোদ্ধাদের মধ্যে এক ধরনের সুসম্পর্ক ছিল। ৩:এবং সব শেষে ছিল সাধারণ জনগন তথা খেটে খাওয়া মানুষেরা। পরে এই সমাজ ব্যবস্থায় এক ধরণের আমূল পরিবর্তন আসে। উপরের প্রথম দুই শ্রেণী মিলে চালু করে বর্ণ প্রথা।

কারণ একটাই ছিল,অনার্য জনগোষ্ঠীকে শোষান করা এবং বিশাল অর্থ বিত্তের মালিক হওয়া। আর্যরা গায়ের রং নিয়ে গর্ব করতো সব সময়েই,কারণ ছিল তারা ফর্সা ছিল। আর অন্যদিকে অনার্য বা দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর গায়ের রং কালো ছিল। এবং এই গায়ের রং এর ধোঁয়া তুলে আর্যরা তৈরী করে বর্ণ প্রথা। আর এই বর্ণ প্রথা আমরা সবাই জানি,বিভক্ত ছিল চার ভাগে যাতে ব্রাহ্মণেরা ছিল প্রথমে অর্থ্যাৎ পুরোহিতেরা,দ্বিতীয় ছিল ক্ষত্রিয় বা যোদ্ধারা,তৃতীয় ছিল বৈশ্য বা কৃষক,বণিক,কুমারেরা,চতুর্থ ছিল শূদ্র বা দাস শ্রেণীর মানুষজনেরা।

এছাড়াও তারা আরেকটি ভাগ সৃষ্টি করে যাদের বলা হত বহিঃ বর্ণ। আর্যদের রাজনৈতিক অবস্থা: আর্যরা বসবাস করত গোত্রে। প্রত্যেকটি গোত্রে এক জন গোত্র প্রধান ছিল,যাকে বলা হত রাজা। আর এই রাজার কাজ ছিল যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া। গোত্রে দুই ধরনের জমায়েত অনুষ্ঠিত হত।

একটিকে বলা হত সভা,যেটি তে গোত্রের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন। অন্যটি ছিল সমিতি যেখানে গোত্রের সবায় নানা সমস্যা সমাধানে নানা উদ্যোগ নিত। আস্তে আস্তে এই গোত্র গুলো সংগঠিত হওয়া শুরু করে। এবং খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ এর দিকে রাষ্ট্র নাম ধারণ করে। যেখানে বলা হত যে রাষ্ট্র চালায় সে আসলে স্রষ্টার প্রতিনিধি।

এতে করে রাজা সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় পুরোহিতদের দ্বারা এবং সভা-সমিতির বিলুপ্তি ঘটে। আর্যদের শিক্ষাব্যবস্থা: ছোট বাচ্চারা শিক্ষা নিত গুরুর আশ্রমে। এটি সবার জন্যই সমান ছিল। শিক্ষা উপকরণের মধ্যে ছিল গাছের পাতা-যেখানে লিখা হত। বাঁশের কঞ্চি কে তারা কলম হিসেব ব্যবহার করত।

আর্যদের বিজ্ঞান: আর্যরা গণিতে অনেক ভাল ছিল। তারা শূন্য/০ আবিষ্কার করে। তাছাড়া ও গণনা পদ্ধতি এরাই প্রথম চালু করে। তারা বর্গমূল সম্বন্ধে জানত এবং বীজ গণিতের প্রাথমিক নিয়মাবলি ধারণা রাখত। অন্যদিকে চিকিৎসা শাস্ত্রে একটি নতুন পদ্ধতি চালু করে যার নাম আয়ুর্বেদিক।

এছাড়াও শরীরতত্ত্ব নিয়ে এরা ভাল জ্ঞান রাখতো। সবশেষে বলবো এই আর্যরা অনেক কিছুই সূচনা করে এই ভারতবর্ষে যার অনেক কিছু এখনো বর্তমান। এদের রামায়ন-মহাভারত কে অনেকেই ইলিড,ওডিসির সাথে তুলনা করে থাকেন পাশ্চাত্য অনেকেই এদের অনেক ধ্যান-ধারণা নিয়ে সমাজকে বিকশিত করেছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।