আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা -অনার্য জনগোষ্ঠীর সভ্যতা

© এই ব্লগের সকল পোষ্ট,ছবি,থিম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কোথাও বিনা অনুমতিতে প্রকাশ করা নিষেধ ।

আমরা প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতাকে সাধারনত দুই ভাগে ভাগ করে থাকি। ১: সিন্ধু উপত্যকা ভিত্তিক সভ্যতা অথবা অনার্য জনগোষ্ঠীর সভ্যতা ২: আর্য জনগোষ্ঠীর সভ্যতা প্রথমে আমরা আলোচনা করবো সিন্ধু উপত্যকা ভিত্তিক সভ্যতা অথবা অনার্য জনগোষ্ঠীর সভ্যতা নিয়ে। এ সভ্যতা শুরু হয়ে ছিলো খৃষ্টপূর্ব ৩২০০ এ এবং তা পরিপূর্ণ হয় ধীরে ধীরে খৃষ্টপূর্ব ২৫০০ পর্যন্ত। এই সভ্যতার পতন শুরু হয় খৃষ্টপূর্ব ২০০০ থেকে।

১০০০ ও বেশী জায়গায় এই সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে(তার মধ্যে হরপ্পা ও মোহেনজোদারো উল্লেখ যোগ্য)। এখন পর্যন্ত ১৫০০*১২০০ কি:মি: জায়গা জুড়ে এই সভ্যতার বিস্তার লক্ষ্য করা যায়,যার মধ্যে আছে পান্জাব,সিন্ধ,বেলুচিস্তান,হারিয়ানা,রাজস্হান এবং ভারত পাকিস্হানের আরো অংশ। অনেকেই বলে থাকেন যে সিন্ধু সভ্যতাকে ইন্দু সভ্যতা যার থেকে পড়ে এসেছে হিন্দু নামটি। সিন্ধু উপত্যকা ভিত্তিক সভ্যতার মূল বৈশিষ্ট্য গুলো এখন আমরা দেখবো: স্হাপত্য যে কোন সভ্যতার বৈশিষ্ট জানার জন্য প্রথমে আমরা তার স্হাপত্য কলা কৌশল দেখি কারণ একটি সভ্যতা কতটা উন্নত ছিলো তা জানা যায় তার স্হাপত্য রীতি দিয়ে। সিন্ধু উপত্যকা ভিত্তিক সভ্যতা বা অনার্য সভ্যতার মানুষ জনেরা তাদের শহর কে দুই ভাগে ভাগ করে।

একটাকে বলা হত সিটাঠেল বা উপরের শহর অন্যটা ছিলো নীচুদের শহর। সিটাঠেল বা উপরের শহর মূলত ছিলো শাষক শ্রেনীর জন্য আর নীচুদের শহর ছিলো আম-জনতার জন্য। শহরকে দুই ভাগে ভাগ করলেও শহর সমূহ অনেক পরিপাটি ছিলো। সিটাঠেল বা উপরের শহর মূলত মাটি এবং মাটির ইট দ্বারা তৈরী হত এবং শহরের চারপাশ থেকে বন্যা প্রতিরোধক হিসাবে ৭-১৪ মিটার উচ্চতার দেয়াল তৈরী ছিলো। সিটাঠেল বা উপরের শহরের মধ্যে ছিলো দরবার হল,শাষকের বাসভবন,বৃহত্তর গোসল খানা-তারা এটাকে অনেক পবিত্র মনে করতো এবং মনে করতো এই খানে গোসল করলে পাপ মুক্ত হওয়া যায়,শষ্য গুদাম,প্রধান পুরোহিতের বাসভবন,স্তূপা-যে খানে পশু বলি হত।

নীচুদের শহরে ও ভালো ব্যবস্হা ছিলো,বন্যা প্রতিরোধের ব্যবস্হা ছিলো,বড় এবং সরু রাস্তা ছিলো। পুরো শহর দুই ভাগে তথা দুটি সমান ব্লকে বিভক্ত ছিলো। পয়ঃনিষ্কাষন প্রনালী অনেক ভালো ছিলো,ড্রেন ছিলো ঢাকনা যুক্ত,যা কিনা পূর্বের কোন সভ্যতায় দেখা যায় নি। জীবনধারন প্রণালী তারা দক্ষ কৃষক ছিলো,সেই সাথে ভালো বণিক ছিলো। তাদের আরেকটি দিক ছিলো উল্লেখ করার মত তারা মৃৎ শিল্পে দক্ষ ছিলো।

তারা বছরে দুটি শষ্য উৎপাদন করতো একটি ছিলো গম অন্যটি বার্লি। তারা সেচ ব্যবস্হাপনায় উন্নত ছিলো। তারা সেই সময়ে বাণিজ্য করতো মেসোপটেমিয়া,পারষ্য,মিশর,আফগানদের সাথে। তাদের এই খানে প্রচুর গাছ ছিলো এবং সেই সাথে হাতি যার ফলে তারা কাঠ,হাতির দাতঁ,কাপড়,কপার ইত্যাদি রপ্তানি করতো। অন্য দিকে তারা দামি পাথর ও খাদ্যসামগ্রী আমদানি করতো।

তাদের ধাতব উপাদান তৈরীর(কপার,টিন,ব্রোন্জ,পারদ),অলংকার তৈরীর,ঝিনুক কাঁটার,মৃৎ শিল্পের কারখানা ছিলো। সেই সাথে তারা বাণিজ্যের সুবিধার্থে পরিমাপের একক তৈরী করে। কলা ও লেখনী শিল্পী হিসেবে তারা অত্যন্ত দক্ষ ছিলো। তারা টেরাকোটা আঁকত মাটির উপর। তারা ধাতব জিনিস তৈরীতে ও দক্ষ ছিলো।

তাদের কোন লিখিত সামগ্রী পাওয়া যায় নি। তারা প্রতীক দিয়ে লিখতো মিশরীয়দের মত। যেটা কে কিনা হায়ারোগ্লিফিক বলা হত। ধর্ম,বর্ণ ও সমাজ ব্যবস্হা তারা বহু ঈশ্বরে বিশ্বাস করতো এবং প্রত্যেকের আলাদা আলাদা উপাসক ছিলো। আগুনকে তারা পবিত্র মনে করতো এবং ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করতো।

পশু বলি দিতো। মৃত ব্যাক্তি কে শুরুর দিকে কবর দিতো-পরে আগুনে পোড়ানো প্রথা চালু হয়। অনার্যদের গায়ের রং কালো ছিলো। সমাজে শ্রেণী বিভাগ ছিলো দুটি,শাষক তথা ধনী জনগোষ্ঠী ও সাধারণ মানুষ। বিজ্ঞান ও চিকিৎসা তারা ওজন পরিমাপক ব্যবস্হার উৎভাবক।

তারা বাণিজ্যে ভালো ছিলো যার ফলে বন্দর তৈরীতে পারদর্শী ছিলো। তারা দাঁতের ভালো চিকিৎসক ছিলো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।