আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশে ধান চাষের ক্রম অগ্রগতি

স্ববিরোধিতা আমার পছন্দ নয়। সর্বদা স্রোতর পক্ষে চলা আমার স্বভাব নয়। সব পুরাতন বাতিল নয়। চলার পথে সহযাত্র্রীরা সম্পদ। পরামর্শের মত সাহায্য নেই।

সব চাইতে অসহায় সেই ব্যক্তি যার কোন ভ্রাতৃ-প্রতিম বন্ধু নেই। কিন্তু আরো অসহায় সেই ব্যক্তি যে এহেন বন্ধু পেয়ে হারায় বর্তমানে ধান চাষ আধুনিক প্রযুক্তিতে পরিণত হয়েছে। এ পর্যায়ে আসতে অনেক সময় লেগেছে। অনেক আগে এদেশে বুনো বা জলী আমন ধানের চাষ হতো। চাষী ভাই-বোনদের মাধ্যমে বুনো ধানের জাত থেকেই আউশ, আমন, বোরো ও অন্যান্য ধান জাতের ক্রম বিকাশ ঘটেছে।

যে সব জলী আমন বেশী বন্যা সহ্য করতে পারতো না তা থেকেই কালক্রমে রোপা আমন জাতসমূহের সৃষ্টি হয়েছে। যেমন কালো আমন বাজাইল, লক্ষীদীঘা জাত থেকে জোয়াল ভাঙ্গা, বাদল, কার্তিকা বা কাটিয়া বাগদার এবং পরবর্তীতে তিলক কাচারী ধানের উৎপত্তি হয়। তিলক কাচারী ধানের কিছু কিছু জাত থেকে পরবর্তীতে আশ্বিনা ও ভদোইয়া এবং শাইল ধানের জাত যেমন ইন্দ্রশাইল, দুধসর, ঝিঙ্গাশাইল, দাদখানি, চিনিগুড়া, বাদশাহ ভোগ, কাশকাখি ও রাঁধুনী পাগল জাতীয় ক্ষুদ্রাকৃতির পোলাও জাতের আবাদ সম্প্রসারন হতে থাকে। এভাবে চাষীরা প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হওয়া জাতগুলো থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে ধানের জাতের উন্নয়ন করতে থাকে। আর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ধানের সম্প্রসারণ হতে থাকে।

১৯৬০ সালে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালের দিকে ধান বৈজ্ঞানিকদের উপর রাস্ট্র দায়িত্ব চাপিয়ে দেয় যে, এ দেশে উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত সৃষ্টি করে দেশের খাদ্য ঘাটতি কমাতে হবে। চীন থেকে দুটি জাত আনা হয়। এর মধ্যে ‘চেনচু আই’ নামক ধানের জাতটি সব মৌসুমে ফলন দিতে সক্ষম হয়। এ জাতের মাড়াই সহজতর এবং ভাত দলা হয় না বিধায় জনপ্রিয়তা লাভ করে।

পূর্ব পাকিস্তানের ‘পূর্ব’ এবং চীনের ‘চী’ মিলিয়ে নাম দেওয়া হয় পূর্বাচী। এ পূর্বাচী উফশী জাত প্রবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এরপর মালয়েশিয়া থেকে আনা মালিনজা নামক ধানটিও জনপ্রিয় হতে থাকে। কুমিল্লা একাডেমি থেকে ‘পাজাম’ নাম দিয়ে বাজারে ছাড়া হয়। ততকালীন পাকিস্তানের ‘পা’, জাপানের ‘জা’ এবং মালয়েশিয়ার ‘ম’ শব্দাংশ থেকে পাজাম নাম রাখা হয়।

এরপর ১৯৬৬ সনে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ৩০০ নতুন জাতের মধ্য থেকে আই আর-৮ এবং আই আর-৯ নামক দুটি জাত সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিকভাবে উচ্চ ফলন দেখে একই বছর মাঠ পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য আই আর-৮ জাতটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ উফশী ধান বিঘা প্রতি তখন ১৮-২১ মন ফলন দিতে সক্ষম। ১৯৬৮ সাল খেকে আই আর-৮ ও আই আর-৯ জাত দুটি চাষ করার জন্য সার্বিক চেষ্টা চলে। তা অচিরেই কৃষক সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করে ধান চাষে সবুজ বিপ্লবের গোড়াপত্তন করে।

তখন থেকে লোক মুখে ‘ইরি ধান’ পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭০ সনের ১ অক্টোবর ‘ইস্ট পাকিস্তান রাইস রিসার্স ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে এর নাম হয় ‘বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সংক্ষেপে ব্রি। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট চার দশক ধরে সাফল্যের সাথে কাজ করে চলেছে। তারা ৪ টি হাইব্রিডসহ ৬০ টি উফশী জাতের উদ্ভাবন করেছে।

ধান চাষের জাত উদ্ভাবনে বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট তথা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার সংক্ষেপে ‘বিনা’ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশীর জন্য ধান গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং নিকট প্রাচ্যের কোটি কোটি লোকের এটি সবচেয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য এবং ভবিষ্যতেও খাদ্যের প্রাথমিক উৎস হিসাবে এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। প্রতি বছর আবাদি জমি কমছে। কিন্তু জন সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

তাই ধান চাষের আবাদি জমি বৃদ্ধির অর্থাৎ আনুভূমিক উন্নতির সুযোগ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নতুন নতুন জাত ও আনুসঙ্গিক উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কারের মাধ্যমে উচ্চ ফলনের মাত্রা বাড়িয়ে কোটি কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে হবে। এরকমই একটা প্রযুক্তির আবিষ্কার হলো হাইব্রিড জাতের ধান। ১৯৭৪ সালে চীনে সাফল্যজনক ভাবে হাইব্রিড ধান উদ্ভাবিত হয়েছে এবং এর আবাদ বিস্তৃত হচ্ছে। বাংলাদেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্ম সূচির মাধ্যমে প্রায় ২০ বছর চাষীদের নিকট উন্নত বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও চাষীদের মধ্যে বীজ বিনিময়ের কাজ করছে।

আজ চাষীরা তাদের অধিকাংশ ধান বীজ নিজেরাই রাখতে সক্ষম হচ্ছে। ধান চাষের নানান প্রযুক্তির উপর কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চাষীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে গবেষণা ও মাঠ পর্যায়ের ধানের ফলন পার্থক্য কমিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে। বিএডিসি এর ভূমিকাও অনন্য। তারা চাষীদের জন্য ভিত্তি বীজ, প্রত্যায়িত বীজ ও মান ঘোষিত বীজ উৎপাদন করে চাষীদের মাঝে বিতরণ করে থাকেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন হতে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন বৃদ্ধির একটি হিসাব আমি তুলে ধরছি।

১৯৭১-৭২ সনে চাল উৎপাদনের পরিমান ছিল ৯৭ লক্ষ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন। এ সময়ে আধুনিক জাতের আবাদ হতো মোট ধান আবাদের ১৮ দশমিক তিন দুই ভাগ। ১৯৮১-৮২ সনে চাল উৎপাদনের পরিমান ছিল ১ কোটি ৩৬ লক্ষ ৩১ হাজার মেট্রিক টন। এ সময়ে আধুনিক জাতের আবাদ হতো মোট ধান আবাদের ৩৮ দশমিক এক আট ভাগ। ১৯৯১-৯২ সনে চাল উৎপাদনের পরিমান ছিল এক কোটি ৮২ লক্ষ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন।

এ সময়ে আধুনিক জাতের আবাদ হতো মোট ধান আবাদের ৬৪ দশমিক ছয় দুই ভাগ। ২০০১-০২ সনে চাল উৎপাদনের পরিমান ছিল দুই কোটি ৪৩ লক্ষ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। এ সময়ে আধুনিক জাতের আবাদ হতো মোট ধান আবাদের ৭৮ দশমিক সাত শুন্য ভাগ। ২০১০-১১ সনে চাল উৎপাদনের পরিমান বেড়ে হয় ৩ কোটি ৩৫ লক্ষ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এ সময়ে আধুনিক জাতের আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে হয় মোট ধান আবাদের ৯০ দশমিক ছয় দুই ভাগ।

এ সাফল্যের পিছনে রয়েছে বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন উদ্ভাবন, সম্প্রসরাণ কর্মীদের সম্প্রসারণমূলক কর্মকান্ড। আজ আমাদের হাতে আছে বিভিন্ন মৌসুমের নাবী, আগাম, সল্প মেয়াদী, লবন সহিষ্ণু, খরা সহিষ্ণু, জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু জাত। আছে হাইব্রিড জাত। প্রবর্তন হচ্ছে নতুন নতুন শস্য বিন্যাস। গুড়া ইউরিয়ার পরিবর্তে গুটি ইউরিয়ার ব্যবহার বাড়ছে।

আবিষ্কার ও ব্যবহার হচ্ছে ধান বপন, রোপন, মাড়াই-ঝাড়াইয়ের কম্বাইন্ড হার্ভেস্টর, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রসহ নানা আধুনিক যন্ত্রপাতির। আর সম্প্রসারণ বিভাগ প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ, সভা, সমাবেশ, মাঠদিবস, কৃষক মাঠস্কুল ইত্যাদি কর্মসুচী বাস্তবায়ন করে কৃষকদের ধান উৎপাদনসহ অন্যান্য প্রযুক্তির বিষয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে। এসব কাজে উন্নয়ন সহযোগী অন্যান্য সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের ভূমিকাও অনন্য। .. বর্তমানে ধান চাষ আধুনিক প্রযুক্তিতে পরিণত হয়েছে। এ পর্যায়ে আসতে অনেক সময় লেগেছে।

অনেক আগে এদেশে বুনো বা জলী আমন ধানের চাষ হতো। চাষী ভাই-বোনদের মাধ্যমে বুনো ধানের জাত থেকেই আউশ, আমন, বোরো ও অন্যান্য ধান জাতের ক্রম বিকাশ ঘটেছে। যে সব জলী আমন বেশী বন্যা সহ্য করতে পারতো না তা থেকেই কালক্রমে রোপা আমন জাতসমূহের সৃষ্টি হয়েছে। যেমন কালো আমন বাজাইল, লক্ষীদীঘা জাত থেকে জোয়াল ভাঙ্গা, বাদল, কার্তিকা বা কাটিয়া বাগদার এবং পরবর্তীতে তিলক কাচারী ধানের উৎপত্তি হয়। তিলক কাচারী ধানের কিছু কিছু জাত থেকে পরবর্তীতে আশ্বিনা ও ভদোইয়া এবং শাইল ধানের জাত যেমন ইন্দ্রশাইল, দুধসর, ঝিঙ্গাশাইল, দাদখানি, চিনিগুড়া, বাদশাহ ভোগ, কাশকাখি ও রাঁধুনী পাগল জাতীয় ক্ষুদ্রাকৃতির পোলাও জাতের আবাদ সম্প্রসারন হতে থাকে।

এভাবে চাষীরা প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হওয়া জাতগুলো থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে ধানের জাতের উন্নয়ন করতে থাকে। আর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ধানের সম্প্রসারণ হতে থাকে। ১৯৬০ সালে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালের দিকে ধান বৈজ্ঞানিকদের উপর রাস্ট্র দায়িত্ব চাপিয়ে দেয় যে, এ দেশে উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত সৃষ্টি করে দেশের খাদ্য ঘাটতি কমাতে হবে। চীন থেকে দুটি জাত আনা হয়।

এর মধ্যে ‘চেনচু আই’ নামক ধানের জাতটি সব মৌসুমে ফলন দিতে সক্ষম হয়। এ জাতের মাড়াই সহজতর এবং ভাত দলা হয় না বিধায় জনপ্রিয়তা লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তানের ‘পূর্ব’ এবং চীনের ‘চী’ মিলিয়ে নাম দেওয়া হয় পূর্বাচী। এ পূর্বাচী উফশী জাত প্রবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এরপর মালয়েশিয়া থেকে আনা মালিনজা নামক ধানটিও জনপ্রিয় হতে থাকে।

কুমিল্লা একাডেমি থেকে ‘পাজাম’ নাম দিয়ে বাজারে ছাড়া হয়। ততকালীন পাকিস্তানের ‘পা’, জাপানের ‘জা’ এবং মালয়েশিয়ার ‘ম’ শব্দাংশ থেকে পাজাম নাম রাখা হয়। এরপর ১৯৬৬ সনে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ৩০০ নতুন জাতের মধ্য থেকে আই আর-৮ এবং আই আর-৯ নামক দুটি জাত সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিকভাবে উচ্চ ফলন দেখে একই বছর মাঠ পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য আই আর-৮ জাতটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ উফশী ধান বিঘা প্রতি তখন ১৮-২১ মন ফলন দিতে সক্ষম।

১৯৬৮ সাল খেকে আই আর-৮ ও আই আর-৯ জাত দুটি চাষ করার জন্য সার্বিক চেষ্টা চলে। তা অচিরেই কৃষক সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করে ধান চাষে সবুজ বিপ্লবের গোড়াপত্তন করে। তখন থেকে লোক মুখে ‘ইরি ধান’ পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭০ সনের ১ অক্টোবর ‘ইস্ট পাকিস্তান রাইস রিসার্স ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে এর নাম হয় ‘বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সংক্ষেপে ব্রি।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট চার দশক ধরে সাফল্যের সাথে কাজ করে চলেছে। তারা ৪ টি হাইব্রিডসহ ৬০ টি উফশী জাতের উদ্ভাবন করেছে। ধান চাষের জাত উদ্ভাবনে বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট তথা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার সংক্ষেপে ‘বিনা’ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশীর জন্য ধান গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং নিকট প্রাচ্যের কোটি কোটি লোকের এটি সবচেয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য এবং ভবিষ্যতেও খাদ্যের প্রাথমিক উৎস হিসাবে এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।

প্রতি বছর আবাদি জমি কমছে। কিন্তু জন সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই ধান চাষের আবাদি জমি বৃদ্ধির অর্থাৎ আনুভূমিক উন্নতির সুযোগ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নতুন নতুন জাত ও আনুসঙ্গিক উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কারের মাধ্যমে উচ্চ ফলনের মাত্রা বাড়িয়ে কোটি কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে হবে। এরকমই একটা প্রযুক্তির আবিষ্কার হলো হাইব্রিড জাতের ধান।

১৯৭৪ সালে চীনে সাফল্যজনক ভাবে হাইব্রিড ধান উদ্ভাবিত হয়েছে এবং এর আবাদ বিস্তৃত হচ্ছে। বাংলাদেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্ম সূচির মাধ্যমে প্রায় ২০ বছর চাষীদের নিকট উন্নত বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও চাষীদের মধ্যে বীজ বিনিময়ের কাজ করছে। আজ চাষীরা তাদের অধিকাংশ ধান বীজ নিজেরাই রাখতে সক্ষম হচ্ছে। ধান চাষের নানান প্রযুক্তির উপর কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চাষীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে গবেষণা ও মাঠ পর্যায়ের ধানের ফলন পার্থক্য কমিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে। বিএডিসি এর ভূমিকাও অনন্য।

তারা চাষীদের জন্য ভিত্তি বীজ, প্রত্যায়িত বীজ ও মান ঘোষিত বীজ উৎপাদন করে চাষীদের মাঝে বিতরণ করে থাকেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন হতে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন বৃদ্ধির একটি হিসাব আমি তুলে ধরছি। ১৯৭১-৭২ সনে চাল উৎপাদনের পরিমান ছিল ৯৭ লক্ষ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন। এ সময়ে আধুনিক জাতের আবাদ হতো মোট ধান আবাদের ১৮ দশমিক তিন দুই ভাগ। ১৯৮১-৮২ সনে চাল উৎপাদনের পরিমান ছিল ১ কোটি ৩৬ লক্ষ ৩১ হাজার মেট্রিক টন।

এ সময়ে আধুনিক জাতের আবাদ হতো মোট ধান আবাদের ৩৮ দশমিক এক আট ভাগ। ১৯৯১-৯২ সনে চাল উৎপাদনের পরিমান ছিল এক কোটি ৮২ লক্ষ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। এ সময়ে আধুনিক জাতের আবাদ হতো মোট ধান আবাদের ৬৪ দশমিক ছয় দুই ভাগ। ২০০১-০২ সনে চাল উৎপাদনের পরিমান ছিল দুই কোটি ৪৩ লক্ষ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। এ সময়ে আধুনিক জাতের আবাদ হতো মোট ধান আবাদের ৭৮ দশমিক সাত শুন্য ভাগ।

২০১০-১১ সনে চাল উৎপাদনের পরিমান বেড়ে হয় ৩ কোটি ৩৫ লক্ষ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এ সময়ে আধুনিক জাতের আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে হয় মোট ধান আবাদের ৯০ দশমিক ছয় দুই ভাগ। এ সাফল্যের পিছনে রয়েছে বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন উদ্ভাবন, সম্প্রসরাণ কর্মীদের সম্প্রসারণমূলক কর্মকান্ড। আজ আমাদের হাতে আছে বিভিন্ন মৌসুমের নাবী, আগাম, সল্প মেয়াদী, লবন সহিষ্ণু, খরা সহিষ্ণু, জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু জাত। আছে হাইব্রিড জাত।

প্রবর্তন হচ্ছে নতুন নতুন শস্য বিন্যাস। গুড়া ইউরিয়ার পরিবর্তে গুটি ইউরিয়ার ব্যবহার বাড়ছে। আবিষ্কার ও ব্যবহার হচ্ছে ধান বপন, রোপন, মাড়াই-ঝাড়াইয়ের কম্বাইন্ড হার্ভেস্টর, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রসহ নানা আধুনিক যন্ত্রপাতির। আর সম্প্রসারণ বিভাগ প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ, সভা, সমাবেশ, মাঠদিবস, কৃষক মাঠস্কুল ইত্যাদি কর্মসুচী বাস্তবায়ন করে কৃষকদের ধান উৎপাদনসহ অন্যান্য প্রযুক্তির বিষয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে। এসব কাজে উন্নয়ন সহযোগী অন্যান্য সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের ভূমিকাও অনন্য।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.