চিড়া ভানতে মা নানার বাড়ীর পাশের বাজারে পাঠালেন। গিয়ে দেখি বিদ্যুতের লোড শেডিং চলছে। মিল মালিক বল্লেন রাতে কারেন্ট আসলে তিনি চিড়া বানিয়ে রাখবেন। সকালে আসলে আমি তৈরী চিড়া নিয়ে বাড়ী ফিরতে পারবো। রাত কাটানোর জন্য নানার বাড়ী চলে গেলাম।
গিয়ে দেখি আমার কিছুক্ষন আগে ছোট খালাম্মার মেয়ে কাননও বেড়াতে এসেছে। এসেই সে মামানীকে বল্ল সে ১৫ দিন বেড়াবে। আমি মামানীকে বল্লাম খুব সকালে আমি চলে যাবো। না বল্লেও চলতো। বরাবরই ফজরের পরে কোরাণ শরীফ তেলাওয়াত শেষ করে মামানী সকালের নাস্তা তৈরী করেন।
পরদিন সকালে যথারীতি আমি বের হওয়ার কিছুক্ষন পূর্বে দেখি রিকসা ডেকে এনে আমার আগেই কানন চলে যাচ্ছে। মামানী বল্লেন ১৫ দিনের কথা বলে এখনি চলে যাচ্ছ কেন? কানন বল্ল একটা জরুরী প্রয়োজনে যাচ্ছি। ক'দিন পর আবার আসবো। কানন চলে গেল। কাননের সাথে আমার তেমন কোন সম্পর্ক নেই।
ওকে একটু এড়িয়ে চলি। ওর জমজ বোন কুসুমের সাথেই ওঠা-বসা বেশী।
নাস্তা শেষ করে সাইকেল নিয়ে আমি যথারীতি বের হয়ে পড়েছি। একটা রিক্সাকে পাশ কাটাতেই কানন হাত বাড়িয়ে আমাকে দাঁড়াতে বল্ল। আমি থামলাম।
ও বল্ল রিক্সায় ওঠো। আমি হেঁসে পেল্লাম। বল্লাম সাইকেল নিয়ে রিক্সায় ওঠবো? দেখলাম ও কাঁদছে। কেঁদে কেঁদেই বল্ল প্লিজ তুমি রিক্সায় ওঠো। তুমি আমার সাথে আমাদের বাড়ি যাবে।
আমি বল্লাম আজকে সময় হবেনা। ও বল্ল না তুমি আজকেই যাবে। ওর কান্নার মধ্যে কি যেন ছিল। ও খুব মূষড়ে পড়েছে। আমি বল্লাম কানন তুমি এমন করছো কেন।
ও বল্ল আমার কি হয়েছে আমিও বুঝিনা। কাল সারারাত আমি একটুও ঘুমাতে পারিনি। কয়েকবার তোমার রুমে গিয়েছি। দেখেছি তুমি অঝরে ঘুমাচ্ছো। আমি বল্লাম তোমার সাথে তো আমি কখনো ঠিক করে কথাও বলিনি।
আজ তুমি এমন করছো কেন? ও বল্ল সব কথা তোমাকে আমি এখানে বলতে পারবোনা। তুমি বাড়ী চলো। মাও খুব খশী হবে। আমি বল্লাম আজ কোনভাবেই আমি যেতে পারবোনা। অন্যদিন যাবো।
ও আমাকে বল্ল আমার সাথে এত নিষ্ঠুর আচরণ করোনা। তোমার ভাল না লাগলে কালকেই তুমি চলে যেও, কিন্তু আজ তোমাকে যেতেই হবে। .... অনেক কষ্টে অনেক ওয়াদা করে সেদিন কাননের কাছ চলে এসেছি। ৬ ফেব্রুয়ারী তাদের বাড়ী যাওয়ার ওয়াদা করেছি। কানন সর্বেশষ আমাকে বল্ল যদি না আস তুমি অনেক খারাপ খবর শুনবে।
আমি বল্লাম আমি আসবো। তুমি আসা পর্যন্ত একটা দিনও আমার ভাল যাবেনা। তুমি অবশ্যই আসবে। . . . সেদিন আমি যেতে পারিনি। ৭ দিনের টানা বর্ষায় পথ-ঘাট সব পানির নীচে।
অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার মত পুছকির পক্ষে সেদিন যাওয়া সম্ভব হয়নি। আমার বয়স তখন ১৪। কানন কেন এমন করেছিল তাও আমি বুঝিনি। শুধু সেদিন রাতে স্বপ্নে দেখেছি দূর হতে আমাকে দেখে প্রচস্ডভাবে জড়িয়ে ধরে ও আমাকে বল্ল কথা দিয়ে কেন তুমি আসলেনা।
স্বপ্নের মধ্যেও কাননকে আমি জবাব দিতে পারিনি। এক ঝটকায় ওর বাঁধন হতে ছুটে দৌড়ে পালিয়েছি। ৪ বছর পরে শুনলাম কানন সেদিন বিষ খেয়েছিল। অনেক কষ্টে তাকে বাচানো গেছে।
কাননের বিষ খাওয়ার খবর শুনার পরও আমি যেতে পারিনি।
আমার স্বপ্নে দেখার খবরও কানন জানেনা। আজো কাননের সাথে আমার দেখা হয়নি। কারন কাননের যে কথাটা আমি বুঝতে পারিনি সে বছরেরই ১৪ ফেব্রুয়ারী আরেক জনের একই কথা আমি বুঝেছি প্রথম বারেই। একদম অনায়াসে। সে দিন যে ফুলটি ফুটেছিল আজ প্রায় দু'যুগ পরও সে ফুলের কাঁটায় আমি জর্জরিত, সে ফুলের মৌতাতে আমি বিমুগ্ধ-বেখবর।
সেখানে আজ এত ছাই জমা হয়েছে, পৃথিবীর আকাশে ছেড়ে দিলে আর কোন দিন বিমান উড়বেনা। কোন সূর্য্য দেখা যাবেনা।
পৃথিবীর সকলের সুখের জন্য সে ছাই আমার বুকেই জমা থাক। . . . কানন তুমি আমাকে ক্ষমা কর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।