খুব সকালে ঘুম ভেঙে যায় রীতার। বাইরে সোনা রোদের ঝলমলে আলো। রীতা বিছানা ছেড়ে ওঠে। হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করে। মায়ের সঙ্গে কথা বলে অনেকক্ষণ।
এক সময় বাইরের দিকে পা বাড়ায়। মনে সুখের বান। আজ স্কুলে পিঠা উৎসব। শীতের পিঠা মিষ্টি লাগে রীতার খেতে। রীতার খুব প্রিয় শীতের পিঠা।
স্কুলে পেঁৗছে দেখে লোকজনের ভিড়। লোকজন পিঠা কিনে আনন্দ করে খায়। রীতার দেখে আনন্দে মন নেচে ওঠে। সে কী আনন্দ। রীতাও যোগ দেয় সবার সঙ্গে।
মায়ের দেওয়া টাকাটা বের করে ব্যাগ থেকে। হাত বাড়িয়ে দেয় একটি পিঠের দোকানে। চিতল পিঠা কিনে খায় সে। বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা দেয় জমিয়ে। বিভিন্ন রকমের পিঠা নিয়ে বসেছে অনেক দোকান।
তাদের সঙ্গে আলাপ করে রীতা। এভাবে পিঠা উৎসবে অনেক সময় কাটায়। এরপর বাড়ি চলে আসে। বাড়িতে ঢুকতেই দেখে মেজ মামা মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। রীতা পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
মামা রীতাকে বুকের কাছে টেনে নেন। বিড় বিড় করে বলতে খাকেন, রীতা তোর নানা ভাই আর নেই। রীতা মামার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায়। জিজ্ঞাসা করে, মামা, নানা ভাইর কি হয়েছে। মামা বলেন, তোর নানা ভাই না ফেরার দেশে চলে গেছেন।
আর কখনো তিনি আসবেন না। রীতার দু'চোখ জলে ভরে ওঠে। নানা ভাইর মুখখানা তার চোখে ভেসে ওঠে। গেল বছর নানাভাই বেড়াতে এসেছিলেন। বেশ ক'দিন তাদের বাড়িতে ছিলেন।
রীতাকে অনেক আদর করেছেন। মজার মজার গল্প বলেছেন। সে দিনের কথাগুলো খুব মনে পড়ে রীতার। নানাভাই নেই। বিশ্বাস হয় না রীতার।
কিন্তু না মেনে উপায় নেই।
সবাইকে একদিন না একদিন চলে যেতে হবে এই পৃথিবী থেকে। তা চিরন্তন সত্য। রীতা ঘরে ঢোকে। বাথরুমে যায়।
অজু করে আসে। কোরআন শরিফ নিয়ে বসে। কোরআন পড়ে। কোরআন পড়া শেষে দোয়া করে। নানা ভাইর রূহের মাগফিরাত কামনা করে।
মেজ মামা এসে কাছে দাঁড়ান। বলেন, রীতা চল মা। তুই ও তোর মা গেলেই তোর নানার কবর দেওয়া হবে।
রীতা মামার সঙ্গে হাঁটতে থাকে। সঙ্গে মাও।
বার বার মনে পড়ে নানার কথা। নানার হাসিমুখের ছবি ভেসে ওঠে। গাঁয়ের পথ ধরে হাঁটতে থাকে। হাঁটতে গিয়ে বারবার থমকে দাঁড়ায়। নানা ভাইর ছায়াও যেন হাঁটছে তাদের সঙ্গে।
রীতা নানা ভাইকে ডাকে। কোনো সাড়া নেই। ভাবনার রাজ্যে ঘুরপাক খায় তার মন। কচি কচি পায়ে হাঁটে সামনের দিকে। এক সময় পেঁৗছে নানার বাড়ি।
লোকজনের ভিড়। রীতা দৌড়ে যায় নানার কফিনের পাশে। নানাভাই ঘুমিয়ে আছেন।
রীতা অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে নানাভাইর দিকে। নানাভাই যেন ডাকছেন রীতাকে।
রীতা কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে ওঠে, নানাভাই চেয়ে দেখ তোমার আদরের নাতনি রীতা তোমার সামনে। কোনো সাড়া নেই। আগরবাতির খুশবু ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। নানার কফিনের পাশে একজন মাওলানা কোরআন পড়ছেন। রীতার চোখ থেকে ক'ফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়ে।
রীতা গায়ে হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। মা দাঁড়িয়ে আছেন। মায়ের বুকে মুখ গুজে কাঁদতে থাকে। মা জড়িয়ে ধরেন রীতাকে। তার চোখেও জল।
এক সময় নানাকে নিয়ে যাওয়া হয় গাঁয়ের মসজিদে। সেখানে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়। রীতা সারা রাত ঘুমাতে পারেনি। নানার ছবি চোখের সামনে। নানাভাইর স্মৃতিগুলো মনে পড়ে।
নানাভাই ছিলেন একজন ভালো মনের মানুষ। নানাভাইর কথা কখনো ভুলবে না সে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।