চিন্তা করছি
মেহেদী সচলায়তনে একটি পোস্ট দিয়েছে।
http://www.sachalayatan.com/omicronlab/31599
আমি একটা কমেন্ট করেছি। এখানেও শেয়ার করলাম।
---------------------------------------------------------------------------
আমার মনে মেহেদীর উল্লেখ করা অমিলের বাইরেও আরও অমিল আছে। একার, ওকার এধরনের ব্যাপারগুলো অমিল, শিফট কী এর সাথে অন্য কি কম্বিনেশনের ও অমিল আছে।
আর যুক্তাক্ষরের ব্যাপারটা জব্বার সাহেবের কিছু করার নাই। সেটি ইউনিকোড স্ট্যান্ডার্ড। কড়াকড়ি ভাবে হিসেব করলে শুধু লেআউটেই অমিল অনেক বেশি হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে অমিল গুলো অবভিয়াস নাকি ননঅবভিয়াস। আমাদের বহুল ব্যবহৃত qwerty কি বোর্ডটি পেটেন্ট করা।
এতদিনে হয়তো পাবলিক ডোমেইনে চলে এসেছে। এখন কেউ যদি শুধু ৫টি কি পজিশন রেন্ডমলি পরিবর্তন করে নতুন কিবোর্ড আবিষ্কার করে বসে সেটিকে ঠিক পেটেন্ট উপযোগী আবিষ্কার হয়তো ধরা হবে না। কিন্তু একবারে ভিন্ন ধর্মী কোন ফ্রিকোয়েন্সী অপটিমাইজেশন এলগরিদম ব্যবহার করে যদি সে মোটামুটি কিছুটা অমিল রেখে কাছাকাছি কীবোর্ড পায় তবে সেটি প্যাটেন্ট যোগ্য হতেও পারে।
আমার হিসেবে অভ্র আর বিজয়ের (লেআউটের) যে পার্থক্য সেটা ননঅবভিয়াস। কেউ সরাসরি নকল দাবী করতে পারবে না।
জব্বার সাহেব বি.ডি.ও.এস.এন. এর মুনির হাসানকে কয়েকদিন আগে ফোন করে বললেন আপনাদের ওপেন সোর্সের ছেলেরা নাকি পাইরেসি আর হ্যাকিংয়ের জন্য দায়ী। আমরা তো অবাক। অভ্র তো মুক্ত সফটওয়্যার, মুক্ত সোর্স নয়। মুক্ত সোর্স হবে কিনা সেটা ওমিক্রন ল্যাবের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। কেউ জোর খাটাতে পারবে না।
দ্বিতীয়তো এখানে হ্যাকিংয়ের কোন ঘটনাই ঘটেনি। এর আগে এবারের আগেরবার ডিজিটাল এক্সপোতে উনি পাবলিক ফোরামে বললেন বি.ডি.ও.এস.এন. নাকি পাইরেসি উতসাহিত করছে। সেখানে ছিল প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) আর সরকারের অন্যান্য কুতুবরা। মুনির ভাইকে ওপেনসোর্সের পক্ষে মগজধোলাই প্রেজেন্টেশন দিয়ে সেটা কাভার করতে হয়েছিল।
সম্ভবত উনি (জব্বার) অন্য কাউকে দিয়ে ওনার বক্তব্যগুলো লেখাচ্ছেন অথবা ওনার ধারণায় কিছু ভুল আছে।
এখন সেটা ওনার নিজেকেই শুধরে নিতে হবে।
সমস্যা হল জব্বার সাহেবের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা আছে। এখন উনি যদি ওখানে ভুল ধারণা ঢুকিয়ে দেয় তাহলে তো দেশের জন্য বিপদ। আমাদের যেখানে খাওয়ার টাকা নাই সেখানে দেখা যাবে মুক্ত বা মুক্ত সোর্স সফটওয়্যার এর পরিবর্তে প্রোপাইটারী সফটওয়্যার কিনতে গিয়ে অনেক টাকা চলে গেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশনের সচিব হুমায়ুন কবির মুনির হাসানকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বাংলা কম্পিউটিংয়ের প্রবলেম সলভ করার ব্যাপারে।
মুনির হাসান তখন একটা বিশাল লিস্ট করেছিলেন সবাই যেন সুযোগ পায় কাজ করার। এতে নির্বাচন কমিশনও সবচেয়ে ভাল ডিলটি পায়। সেখানে অভ্র, অংকুর, একুশে সবার নাম উনি দিয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে আমার নাম ও ছিল। আমার কাছে তখন এবং এখনও মনে হয় অভ্রই ছিল সেরা সমাধান।
এখন দেখেন ওই জায়গায় যদি মুনির হাসান টাইপের লোকজন না থেকে না থেকে বেসিস বা বিসিএস এর কোন ব্যবসায়ী থাকত তাহলে এতজন কে ডাকা হত না (৪০ জনের বেশি)। ২/১ জন আসত। এসে বলত এটা তো অনেক বড় কাজ। আমরা সফটওয়্যার তৈরি করে দেব। ল্যাপটপ প্রতি ৫০০০০ টাকা পরবে।
দেশেপ্রমের কারণে আমরা এটা ৫০০০ টাকা করে নিব। এধরণের ঘটনা এর আগে হয়েছে।
যাই হোক, এবার নামের ব্যাপারে আসি। আমি যে কোম্পানীতে কাজ করি সেখানে আমাদের প্রোডাক্টের নাম ছিল ফাইলমার্শাল। এখন মার্শাল ডট কম নামে একটা কোম্পানী আমাদের জানাল ওদের সব প্রোডাক্টের নামের সাথে ওরা মার্শাল লাগায়।
যেমন অলরেডী ওদের ওয়েবমার্শাল আর মেইলমার্শাল নামে প্রোডাক্ট আছে। এখন যদি কোনোদিন ওরা ফাইল ট্রান্সফার সল্যুশন বানায় তাহলে ফাইলমার্শাল নামটি দরকার হতে পারে। ওরা কোর্ট পর্যন্ত যায়নি। যেহেতু ইউ.এস. কপিরাইট অফিসে আমাদেরটা আগে কপিরাইট করে দিয়েছিল কাজেই আমাদের কাছ থেকে নামটি কিনে নিতে হয়েছে ওদের।
অভ্রতে কিবোর্ডটির নাম ইউনিবিজয় যাতে জব্বার সাহেবের কপিরাইটকৃত বিজয় শব্দটি শব্দাংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
এখন এটি তার ব্যবসায় কতটুকু ক্ষতি করবে সেটাও একটা প্রশ্ন কারণ অভ্র কমার্শিয়াল প্রোডাক্ট নয়। এটি মুক্ত পণ্য।
তাহলে সারাংশ হল, অভ্র কোনোভাবেই আমার দৃষ্টিতে পেটেন্ট ইনফ্রিন্জমেন্ট করছে না। শুধু বিজয় নামটির ক্ষেত্রে উনি দুর্বলভাবে কপিরাইট ভায়োলেশনের কথা তুলতে পারেন। সেক্ষেত্রে ওমিক্রণল্যাব যদি আগামীকাল থেকে ইউনিবিজয় নামটির বদলে আলুবোখারা রাখে তাহলেই ওনার আর কিছু বলার থাকবে না।
আমি এ মন্তব্যটি টাইপ করতে করতেই একজন বড়ভাই + কপিরাইট বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলছিলাম (একনামে চিনবেন তাই আর নাম বললাম না)। উনি কয়েকটা মজার কথা বললেন।
১. ওমিক্রণল্যাব যেন আগামী ভার্সন থেকে কিবোর্ডটির নাম 'যাচ্ছেতাই কিবোর্ড' রাখে। যারা ওটা ব্যবহার করে তাদের 'যাচ্ছেতাই কিবোর্ড' এ ক্লিক করতে হবে।
২. যদি ওমিক্রণল্যাব সিদ্ধান্ত নেয় নাম পরিবর্তন করবে অথবা কিবোর্ডটি ফেলে দিবে তাহলে মোস্তফা জব্বার সাহেবকে দৈনিক জনকন্ঠে একই জায়গায় একই গুরুত্বের সাথে মিথ্যা অপবাদের (হ্যাকার ও পাইরেট বলার জন্য) জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও ভুল তথ্য পরিবেশন করে সবাইকে বিভ্রান্ত করার জন্য (কপিরাইট ভায়োলেশনের দুর্বল সম্ভাবনাকে পেটেন্ট ইনফ্রিন্জমেন্ট বলা) দু:খ প্রকাশ করতে হবে।
তবে নাম পরিবর্তন করবে কিনা এটি ওমিক্রণল্যাবের নিজস্ব সিদ্ধান্ত, এক্ষেত্রে কেউ চাপ দিতে পারবে না।
* লেখক বি.ডি.ও.এস.এন. এর সদস্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।