কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্র অথবা ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে নিহত ৭শ' ৩৭ জন সৈনিক। এর মধ্যে ২৪ জন জাপানি যুদ্ধবন্দি এবং ১ জন বেসামরিক ব্যক্তি রয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে নিহত এবং যুদ্ধে আহত হয়ে পরে মারা যাওয়া সাধারণ সৈনিক থেকে ব্রিগেডিয়ার পদ মর্যাদাধারীকে এখানে সমাহিত করা হয়েছে। কুমিল্লা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন
কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ও ময়নামতি সাহেবের বাজারের মাঝামাঝি কুমিল্লা-সিলেট সড়কের বাম পাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে সাড়ে চার একর পাহাড়ি ভূমি জুড়ে বাংলাদেশে অবস্থিত দ্বিতীয় এ কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্র। এ দেশের অপর কমনওয়েলথ সমাধি রয়েছে চট্টগ্রাম শহরের বাদশা মিয়া চৌধুরী রোডে।
যাতে ৭শ' ৫৫ জন সৈনিকের সমাধি আছে।
কুমিল্লা কমনওয়েলথ সমাধির প্রথম ধাপে ইউরোপিয়ানদের কবর ও উপরের ধাপে এ উপ-মহাদেশের যোদ্ধাদের কবর রয়েছে। সমাধিগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে। প্রত্যেকটি সমাধিতে লেখা আছে নিহত সৈনিকের নাম, বয়স, পদবি নিহত হওয়ার তারিখ এবং ঠিকানা।
সমাধিক্ষেত্র তৈরির আগে সেখানে ছিল বৌদ্ধ বিহারের কেন্দ্রীয় মন্দির।
সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে শ্বেত পাথরের একটি ক্রশ। বর্গাকার এ সমাধি ক্ষেত্রের প্রত্যেকটি বাহুর দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াইশ ফুট। মোট আয়তন সাড়ে ৪ একর। সমাধিক্ষেত্র চারদিক বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরা। পুরো সমাধিক্ষেত্রে রং-বেরংয়ের ফুল গাছ এবং অন্যান্য গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে।
গাছগাছালির অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্য ঘিরে রেখেছে এ সমাধিক্ষেত্রটি। ফুলের সৌরভ, গাছের পাতায় বাতাস আর রোদের খেলা, পাখি ডাকে বিমোহিত পরিবেশের এ সমাধি ক্ষেত্রটিতে গেলে মনে অন্যরকম এক অনুভূতির জন্ম দেয়।
এ সমাধিক্ষেত্রে সমাধির সংখ্যা ৭শ' ৩৮টি। ১৯৬২ সালে ১টি সমাধি নিহত সৈনিকের আত্মীয়-স্বজনরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যায়। বর্তমানে এ সমাধিক্ষেত্রে সমাধি সংখ্যা ৭শ' ৩৭টি।
এর মধ্যে ১৪ জন শায়িত সৈনিকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এখানে যাদের সমাহিত করা হয়েছে তাদের লাশ আনা হয়েছে ঢাকা, ফরিদপুর, সৈয়দপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে। আর্মি গ্যারিসন ইঞ্জিনিয়াররা এ সমাধিক্ষেত্রটি তৈরি করেন।
এতে রয়েছে ব্রিটেনের ৩শ' ৫০ জন, কানাডার ১২ জন, অস্ট্রেলিয়ার ১২ জন, নিউজিল্যান্ডের ৪ জন, দক্ষিণ আফ্রিকার ১ জন, ভারতের ১শ' ৭২ জন, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬ জন, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬ জন, বার্মার ১ জন, দক্ষিণ রোডেশিয়ার ৩ জন, বেলজিয়ামের ১ জন, পোল্যান্ডের ১ জন এবং জাপানের ২৪ জন যুদ্ধবন্দির কবর। এছাড়াও ১ জন বেসামরিক ব্যক্তিকেও এখানে সমাহিত করা হয়েছে।
বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে মৃত সৈন্যের লাশ এখানে এনে সমাহিত করা হয়।
কুমিল্লার ময়নামতি সমাধিক্ষেত্র এবং চট্টগ্রামের সমাধি ক্ষেত্র এ দুটির সার্বিক তদারকি করছে কমনওয়েলথ গ্রেভস কমিশন। এর প্রধান কার্যালয় লন্ডনে। কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহের অনুদানে চলে এ সংস্থাটি। কুমিল্লার ময়নামতি সমাধি ক্ষেত্রটিতে গ্রেভস কমিশনের নিয়োগ করা ১ জন কেয়ারটেকার ও ৫ জন গার্ডেনার রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত আছে।
ঈদের দুদিন ছাড়া বছরের প্রতিদিনই সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা এবং দুপুর ১টা হতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ যুদ্ধ সমাধিস্থল সর্ব সাধারণের জন্য উম্মুক্ত থাকে। এ সমাধি ক্ষেত্র দেখতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের শত শত দর্শনার্থী ভিড় করে। দেখে যায় যুদ্ধ শুধু জ্বালায় পোড়ায় না, যুদ্ধ অকালে নিভিয়ে দেয় অনেক জীবন প্রদীপও।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।