আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ময়নামতি ডিপার্টমেন্ট ট্যুর ২০১৩ এবং আমার সম্ভাব্য প্রেমের গল্প ! (ছবিসহ)

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -মুখ লাগালে কেন ? আমি বোতলের পানি ঠিক মত খেতেও পারলাম না । নিশির কথা শুনে মাঝ পথেই পানি আটকে গেল । কোন মতে পানিটা গলা দিয়ে নামিয়ে বললাম -কি ? কি বললে ঠিক বুঝলাম না ! নিশি বলল -তুমি বোতলে মুখ লাগালে কেন ? এখন আমি পানি খাবো কিভাবে ? আমি নিশির কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম । আরে কি বলে এই মেয়ে ? মুখ লাগিয়েছি তো কি হয়েছে ? আমি বললাম -চলন্ত বাসে তো উপর থেকে পানি খাওয়া সম্ভব না । নিশি আমাকে আর কিছু বলল না ।

খানিকটা বিরক্ত মুখেই নাস্তা খেতে লাগল । আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল । এই মেয়েটাকে আমি এতো পছন্দ করি আর এই মেয়েটাই আমার সাথে এমন আচরন করল ? আমি বললাম -আচ্ছা সরি । এবার থেকে তুমি আগে পানি খেও । নাও এবারের মত পানি খাও ।

-না । আমি পানি খাবো না । কারো এতো পানি আমি খেতে পারি না । কেন জানি একটু রাগ হল । আমি নিশিকে বললাম -পানি খাবে না ? -না ।

-আচ্ছা এই বোতলের পানি আমি রেখে দিলাম । তুমি যদি এই বোতলের পানি না খাও মনে রেখো পুরো ট্যুরে আমি এক ফোটা পানি খাবো না । আমি কথাটা বেশ জোরেই বললাম । ওর আশে পাশের বান্ধবীরাও ছিল ওরাও কথাটা শুনেছে । কেউ কেউ দেখলাম মুখ টিপে হাসছে ।

তবে কেউ কিছু বলল না । আমি মন খারাপ নিয়ে বসে রইলাম । কুমিল্লা ট্যুরে আমি যাচ্ছি এই মেয়েটার জন্য । আর এই মেয়েটাই আমার সাথে এমন আচরন করলো ?? সামান্য একটু পানি !! নিশিকে পছন্দ এই কথাটা ডিপার্টমেন্টের সবাই খুব ভাল করে জানে । এমন কি নিশি নিজেও কথাটা জানে ।

ট্যুরের যখন আয়োজন করা হল আমার খানিকটা আগ্রহ খানিকটা কম ছিল । আর আমার শরীরটাও খুব বেশি ভাল ছিল না । কিন্তু আসতে হল । আসার প্রধান কারন ছিল নিশি । বন্ধুরা এমন আশ্বাস দিল যে যাওয়া এবং আসার সময় নিশি যেন আমার পাশে বসতে পারে এই ব্যবস্থা তারা করবে ।

পুরোটা সময় নিশি আমার পাশে বসে থাকবে এইটাই আমার জন্য যথেষ্ঠ ছিল । সত্যি সত্যি নিশি আমার পাশেই বসেছিল । কিন্তু ঝামেলা বাধলো সকালের নাস্তা খাওয়া আর পানি নিয়ে । প্রতেক ডাবল সিট বাবদ এক টা পানির বোতল বরাদ্দ ছিল । আমার আর নিশির জন্যও ছিল একটা ।

সেই খানেই বাধলো ! বাসের ভিতর একটু পরেই গান শুরু হল । সবাই নাচানাচি করছে । নিশিও দেখলাম সবার সাথে আনন্দ করছে । নাস্তা খাওয়ার সময় লিলির কাছ থেকে পানি খেয়েছে কিন্তু আমার কাছ থেকে নেয় নি । মনটা খারাপই হয়ে রইলো ।

আমি পানি খাইনি এটা ওর কাছে যেন কোন ব্যাপারই না । অবশ্য কেন ব্যাপার হবে ? আমি ওকে পছন্দ করি । ও তো আর করে না !! তাই বলে ?? থাক কি হবে এসব ভেবে !! প্রায় দুই ঘন্টার পর আমরা কুমিল্লায় পৌছালাম ! আমাদের প্রথম গন্তব্য হল ওয়ার সিমেট্রি ! বাস পৌছানোর পরপরই সবাই নেমে পরলো ! যে যার মত ছবি তুলতে লাগলো ! আমি কিছুক্ষন বাসের ভিতর বসে থেকে নেমে এলাম । ঠান্ডার প্রকোপটা কেন জানি বেড়েছে । বার বার কাশি আসতেছে ।

আর গলা ব্যাথাটাও যেন বেশি !! এখানে আমাদের আরেক দফা নাস্তার কথা আছে । আমি ভাবলাম কিছু খাবো না ! কারন খেলেই সমস্যা ! খাইলেও পানি খেতে হবে ! আর আমি তো পানি খেতে পারছি না ঐ মেয়েটার জন্য !! কিন্তু সে টো ঠিকই খাবে ! আমার কথা ভাববেও না একবার । সত্যি সত্যি আমার গলার বেধে গেল নাস্তা খাওয়ার সময় । এমনিতেও তো কাশি ছিল আরো যেন বেড়ে গেল । খুব জোড়ে কাশতে লাগলাম ।

বন্ধু সুমন পানি নিয়ে এগিয়ে আসলেও আম পানি নিলাম না ! পিছনের দিকে চলে এলাম । অনেক ক্ষন পর শান্ত হলাম । সুমনকে যখন ফিরিয়ে দিলাম তখন মোটামুটি সবার চোখই আমার দিকে ছিল । নিশিরও তাকিয়ে ছিল । থাকুক !! ও তো মজা করেই খাচ্ছিল !! খাবেই তো !! আমি কেউ বা হই !! বন্ধুরা সবাই মিলে ছবি তুলছিল ।

আমি ওদের সাবর ছবি তুলে দিলাম । সবার গ্রুপ ছবিও তুললাম একটা ! কয়েকজন মিলে একটু ভাব নিয়েও ছবি তুলল । আমি সবার দিকেই লক্ষ্য রাখছিলাম । কিন্তু চোখ ছিল নিশির দিকে ! ওর চোখে এবার কেমন যেন একটা আভা দেখলাম । এতো ক্ষন যে আনন্দ ছিল সেটা কেমন যেন একটু মলিন হয়ে গেছিল ।

আমার দিকে তাকাতে লাগলো বার বার ! ঘোরাঘুরি শেষে আমরা এবার রওনা দিলাম ময়নামতির দিকে । বাসের ভিতরে নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল -তুমি এরকম করলে কেন ? -কি রকম ? -পানি খেলে না কেন ? -তুমি খুবভাল করেই জানো কেন খাই নি ? নিশি আমার কথার আর কোন উত্তর দিলো না । ময়নামতিতে গিয়েও আমরা যে যার মত ঘুরতে লাগলাম । সবাই ছবি তুলতে লাগলাম । সবাই যে দিকেই যাক না কেন আমি নিশির আসে পাশেই আছি ! ও যে খানে যাচ্ছে সেখানে যাচ্ছি ! দুরে দেখলাম বন্ধু হুমায়ুন একা একা হেটে যাচ্ছে ।

আমি একটু বসলাম । একটু আগেও শীত লাগছিল কিন্তু এখন বাইরে যান আগুন জ্বলছে !! শীত কালে রোদের এতো তেজ হতে পারে আমার জানা ছিল না । সবাই একটু হা হুতাশ করতে লাগলো কিন্তু আমার অবস্থা তো খারাপ হয়ে গেল । আমি তো পানি খেতে পারছি না । আচ্ছা পানির বোতল তো পকেটেই আছে এক ঢোক খেয়ে নিবো নাকি ? কেউ দেখবে না মনে হচ্ছে !! কিন্তু মন সায় দিল না ।

ময়না মনতির উপরে উঠে তো অবস্থা আরো কাহিল !! চারিদিকের চোখ বুলাতে লাগলাম ! ছায়া কোথায় আছে দেখার জন্য ! কিন্তু ছায়ার নাম নিশানাও আমি দেখতে পেলমা না ! দেখলাম ময়নামতিতে খননের কাজ চলতেছে । আরো চারি পাশে দেখতে লাগলাম । কিন্তু মনের এবং শরীরের ভিতর ভাল লাগছিল না । নিশি কেও দেখলাম আমাকে লক্ষ্য করছে । আমি ময়নামতি বিহারের একদম উপরে দাড়িয়ে সাবইকে দেখতে লাগলাম তখনই দেখলাম নিশি যেন কার সাথে কথা বলছে ফোনে ।

খুব ইচ্ছা থাকা সত্তেও ওর কাছে গেলাম না । নিশিই আসবে আমার কাছে । আসতে হবে ! আসলে আমি ভয় পাচ্ছিলাম দুপুরের খাবার নিয়ে ! ঐ সময়ে পানি না খেয়ে আমি কিভাবে থাকবো কে জানে !! আমাদের খাওয়ার ব্যাবস্থা যেখানে হয়েছে সেটা বিহার থেকে একটু দুরে । খাওয়ার সময় হলেই আমরা সবাই সে দিকে হাটতে লাগলাম । আমি একটু পিছিয়ে পড়েছিলাম ।

সবার পিছনেই হাটছিলাম । একে তো বাইরে খুব গরম তার উপর পানি পিপাসা লেগেছে খুব । পকেটে পানির বোতল আছে কিন্তু আমি খেতে পারছি না কিছুতেই । স্পটে ঢুকতে যাবো ঠিক একই সময়ে কেউ আমাকে পিছন থেকে আমার হাত ধরলো । তাকিয়ে দেখি নিশি ! -এদিকে এসো !! এই বলেই ও হাটা দিল ।

আমি হাটতে লাগলাম ওর পেছন পেছন ! কিছু দুরেই একটা ছোটা পাহার আছে ! নিশি ওখানে থামলো ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল -প্লিজ খাওয়ার সময় আর কোন সিন ক্রিয়েট কর না ! -মানে কি ? -মানে তুমি পানি খাচ্ছ না কেন ? যাক !! নিশি তাহলে আমার দিকে একটু লক্ষ্য করেছে !! আমি বললাম না কিছু ! নিশি আবার বলল -চুপ করে আছো কেন ? পানি খাবে তো ? -না ! -প্লিজ অপু !! এমন ছেলে মানুষী করে না ! আর সবাই কি মনে করবে ? আমি তবুও কোন কথা বললাম না । চুপ করেই রইলাম, কোন কথা বললাম না । নিশিও কিছুক্ষন চুপ করে রইলো ! তারপর বলল -তুমি এতো জেদি ! আচ্ছা বোতল দাও ! আমি নিশির দিকে তাকালাম । তারপর আমার পকেট থেকে পানির বোতলটা বের করে দিলাম । নিশি এবার আমার সামনেই পানি খেল ।

বোতল ফিরিয়ে দিতে দিতে বলল -খুশিতো এবার ? এবার অন্তত পানি খাও ! আমি বললাম -তুমি ঠোট লাগিয়ে খাও ! নিশি তাই করলো !! যখন বোতলে চুমুক দিলাম আসলেই মনে হচ্ছিল যেন আমি অমৃত সুধা খাচ্ছি !! আহ !! আহা !! আমার কথা: যদিও এটা গল্পই তবুও ছবি গুলো সত্য ! দুদিন আগে ময়নামতিতে গেছিলাম। সেখানকার ছবি গুলো নিয়েই এই গল্প !! ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.