মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!
মফস্বলের আড্ডা- পুরোনো বন্ধুদের মাঝে বসে সেই পুরোনো আমেজ। মুঠোফোনের বদৌলতে দু এক বছর বাদে গেলেও কাউকে খুজে পেতে সমস্যা হয়না। বাল্য বন্ধু আর সহপাঠিদের ইমোশনাল ব্লাক মেইল করা বেশ সোজা।
একদিন থেকেই চলে যাব শুনে ছোট খাট অনেক জরুরী কাজকর্ম ফেলে ওরা ছুটে আসে। কামরুল আমাদের থেকে বয়সে বেশ খানিকটা বড়।
ঘনিষ্টতার সুত্র ধরে একমাত্র আমিই তাকে তুমি করে বলি -বাকি সবাই আপনি আজ্ঞে!
কলেজের লেকচারার। পাকা চুল ঢাকে -কড়া কলপ মেখে।
তবে দুদিন সেভ না করলেই উকি মারে কয়েক গাছা রুপালী গুম্ফ শ্মশ্রু!এইসব নিয়ে সে বেশ বিব্রত কেননা,সে এখনো ব্যাচেলর।
তার বয়সী সবার ছেলে মেয়েই এখন স্কুলে যায়। ভুল করে স্কুল সহপাঠিনী অনেকের ডাগর মেয়েদের দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিভে কামড় মারে।
চেহারা আর গায়ের রঙ তার আবিসিনিয়ার রাজপুত্রের মত!
তবে হাসতে পারে মন দিল খুলে- গানের কন্ঠ চমৎকার। গল্পের লাইন লেন্থ মাঝে মধ্যে ঠিক না থাকলেও বেশ মজা করে কথা বলে। স্বভাব কবি -একটু বোকা কিসিমের। ওকে নিয়ে দু চারজন হাসি ঠাট্টা করলেও বিশেষ কিছু মনে করেনা।
আড্ডার সব’চে রসিক সভ্য শফিতো দিন রাত তাকে উত্যাক্ত করে মারে! বাবা মা গত হয়েছে কয়েক বছর, ছোট ভাইকে নিজের হাতে বিয়ে দিয়েছে – এখন আর তাকে নিয়ে বিশেষ কেউ ভাবেনা।
গত শুক্রবার নাকি পাত্রী দেখতে গিয়েছিল। ধার করা মুরুব্বী আর আত্মীয় নিয়ে একখানা আস্ত মাইক্রোবাসে চড়ে।
আস্ত কেন বললাম? বিজ্ঞ দুলাল এর উত্তর দিতে পারবে ভাল-কামরুলের প্রতিটা পদক্ষেপ তার নখদর্পনে। কয়েক গন্ডা পাত্রী দেখেছে এই জীবনে সে- এই প্রথম নাকি এত খরচ করল! খরচ সব মিলিয়ে তিন সাড়ে তিন হাজারতো হবেই। তা এতগুলো টাকা কি জলে গেল? কামরুলের চেহারা দেখে মালুম হয়, ইনভেস্টমেন্ট পুরা ফেল মেরেছে!
-তা কি হল- পুরাটা কও? তাড়া দিলাম আমি...
-এই আর কি, গেলাম ওইখানে-খাওয়াটা দিছিল বাম্পার।
ইলিশ ভুনা, দুই ধরনের মাংশ সাথে পোলাও,দই আর সেভেন আপ।
-ওরে বাপরে টাকাতো এই খানেই উসুল!
কামরুলের মুখে বেদনার ছায়া- যদিও রঙ্গের কারনে তেমন বোঝা যায়না!সে একখানা চোস্ত গালি দিয়ে বলল,
-সাওয়ার(!) খাওয়া দাওয়া দিয়ে কি হবে। আসল কামেতো ফেল!
-'ক্যামনে?' আরেক ব্যাচেলর পিন্টুর প্রশ্ন...
-খাওয়া দাওয়া শেষে পাত্রী দেখাইল, পাঁচশ খান টাকাও দিলাম।
-দেখতে ক্যামন?
-'আমার মতই। ' হেলা ফেলা করে তার উত্তর।
-তাইলে প্যাচ লাগল কোনখানে?
-মেয়ের ভাই না চাচা আমাদের এক মুরুব্বীরে আড়ালে ডাইক্যা কইল, 'চাচা আমরা একটা ঝামেলায় পইড়্যা গেছি। '
-কি ঝামেলা?
-মেয়ের বড় বোনের এখনো বিয়া হয় নাই- ছোট বোনের বিয়া দিতে চাইছিলাম গোপনে। কিন্তু আপনেরা মাইক্রো টাইক্রো নিয়া আইস্যা প্যাচ লাগায় দিছেন। এলাকার লোকজন বুইঝ্যা ফ্যালাইলে বড়টার বিয়া হবে না।
-কি অদ্ভুত যুক্তি! তা তোমরা কি করলা?
-কি আর করব আমিতো আর কিছু কইতে পারিনা।
মুরুব্বীরা একটু গাইগুই কইরা ফিরা আসল- রাগে দুঃখে মুখ বিকৃত করে বলল সে, -শালার টাকা গুইলাই গচ্চা গেল!
কথা তার শেষ হতেই আড্ডায় শুরু হল তুমুল হট্টগোল।
-আপনি তারে কইতেন, ঠিক আছে বড়টারেই আনেন ওইটারেই বিয়া করব?ওরাতো ফাও প্যাচ লাগাইল। 'চামে চিকনে বিয়া দিতে চাইলে আগে থেইক্যাই কইত?’দুলাল ক্ষেপে গিয়ে বলল।
-আমি কব ক্যামনে? শালার সব গুইলা ভুদাইরে নিছি। বোকাচোদা শালারা কথা কইতে পারে না।
আমি বললাম, -'দুলালরে নিয়া যাইতা একটা প্যাচ লাগাইতে পারত। মেয়ের বড় বোনরো না দিলে মা খালারে আনতে কইতা। ছাগলের মত খামটি দিয়া কইতা- আজক্যা আমি বিয়া না কইরা যাব না...'
আড্ডায় হাসির হুল্লোড়।
শফি আসল তখুনি, ও সংক্ষেপে কাহিনী শুনে মাইক্রোবাসের কথা শুনে হাসতে হাসতে কামরুলকে বলল, কামরুল ভাই আপনিতো প্রায় বিবাহিত। খাওয়া দাওয়া করান?
কামরুল তখন ভীষন বিব্রত।
আচমকা ক্ষেপে গিয়ে বলল, 'শফি আমারা তুমি প্রায় বিবাহিত কইলা ক্যান?'
শফি সামান্যতম অপমানিত না হয়ে মুখের হাসি অমলিন রেখেই বলল, পরে কই তার আগে এর রেফারেন্সে একটা জোকস কই;
-এক বেকুব গ্যাছে শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। ফিরা আসল পরদিন খুব ভোরে মাথার চুল উস্কো খুস্কো, জামা কাপড় ছেড়া আর সারা গায়ে কাদা!
ওর মা দেখে আঁতকে উঠে বলল, কিরে বাজান-এই অবস্থা ক্যান? শ্বশুর বাড়ি যাইস নাই?
বলদ কাদো কাদো হয়ে বলল, প্রায় গেছিলাম!
-মানে?' স্ববিস্ময়ে মায়ের প্রশ্ন
শ্বশুর বাড়ির উঠানে পাড়া দিছি কি সেই সময় বিরাট একখান কুত্তা ঘাও ঘাও কইরা দিল দাবড়ানি- সারা রাইত ধইরা মাঠ ঘাট দিয়া দৌড়াইতে দৌড়াইতে বাড়িতে আইলাম।
ঘটনা ওইখানে ওইবার শেষ।
… পরের বার শ্বশুর থেকে পুরা একদিন থেকে সে দাত খিলাইতে খিলাইতে বাড়িতে আসল।
মা এবার জিগাইল, বাজান শ্বশুর বাড়িতে তোর যত্ন আত্তি কেমন করল?
ছেলে আকর্ণ দন্ত হেসে বলল, প্রায় ভাল মা!
মায়ের চোখ তখন কপালে, তিনি বেশ উদ্বগ্ন হয়ে বললেন, রাইতে শুইছিলি কোন জায়গায়?
‘এই প্রায় ঘরে মা।
-তার মানে -প্রায় ঘরে মানে কি?
ঘরে জায়গা ছিলনা বারান্দায় শুইছিলাম -খাট ছিল ছোট। ঘরের বেড়া ছিল পাট খড়ির-পা একখান সেই ফাক দিয়া ঘরের মধ্যে ঢুকায় দিছিলাম। প্রায় ঘরেইতো শোয়া নাকি?
-তা তুমি কি খাইলা বাজান?
-রাইতে তো খাই নাই- সকালে প্রায় ক্ষির খাইলাম!
-এর মানে প্রায় ক্ষির খাইছিস মানে? মায়ের তখন ভিমড়ি খাওয়া দশা
-মানে সকালে দিছিল ম্যালা খানিক ফ্যান( ভাতের মাড়) আর এক মুঠ ভাত। ওর সাথে গুড় চটকায় খাইয়া ফেলছি। প্রায় ক্ষির ই তো হইল নাকি? হো হো করে হাসতে হাসতে বেকুব কইল।
এখন কন জীবনের প্রথমবার মাইক্রো নিয়া পাত্রী দেখতে গেলে আপনি প্রায় বিবাহিত হন কিনা কন?
কামরুল ভীষন বোকা বনে গেছে- কেননা সবার অকুন্ঠ সমর্থন তখন শফির পক্ষে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।