মাঝে মাঝে মনে গভীর ভাবের উদয় হয়। এইসব উচ্চমার্গীয় চিন্তা চেতনা অন্যের সাথে শেয়ার করতে না পারলে ঠিক জমে না। হাতের কাছেই একজনকে পেয়ে বলতে লাগলাম, ”ভাই, মাঝে মাঝে ভাবি এই মেসি আমার চেয়ে বয়সে ছোটই হবে!” আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে ভদ্রলোক আরও উচ্চমার্গে চড়ে বসলেন, ”এই কথা যদি বলেন তো বলতে হয়, পৃথিবীর কমপক্ষে বিশটা দেশের রাস্ট্রপতি আমার চেয়ে বয়সে ছোট!” আমি আর কথা বাড়ালাম না। বুঝলাম ভুল সময়ে ভুল যায়গায় জন্ম নেয়া বলে পেপার পত্রিকায় এতদিন যা পড়েছি তার প্রকৃত মানে কী।
তবে যে যাই বলুক এইসব কিন্তু আসলেই মাঝে মাঝে আমার মাথায় আসে।
হঠাৎই মনে হয় সম্রাট আকবর কোনদিন ধারনা করতে পেড়েছেন বিমান কী জিনিস? টাকার কোন অভাব ছিল ভদ্রলোকের? অথচ আমাদের দেশের শ্রমিকেরাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জীবিকার সন্ধানে যায় বিমানে চড়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনও পেয়েছেন রাত জেগে মোবাইলে কথোপকথনের আনন্দ? অথচ এখন পোলাপান কথা শেখার আগে হ্যালো বলা শেখে। রবীন্দ্রনাথের তো কোন কিছুরই কোন অভাব ছিল না, তবুও এ যুগের একটা ছোকড়ার সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে গুরুতো সারা জীবনে কিছুই পাননি-- না রঙিন টিভি, না আইফোন, আইপড, গুগল, মাইক্রোসফট, কিছুই না, কিছুই না।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি মারা গেলেন। সারা দেশে শোকের ছায়া।
তিন দিনের রাষ্ট্রিয় শোক। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ হয়ে গেল। শত শোকের মাঝেও বিদ্যালয়গামীরা খুশী। অফিসগামীরা খুশি কিনা এভাবে দিনে দুপুরে তা বলা যাবে না। কারন ছাত্র-ছাত্রীদের আবেগকে যে øেহের দৃষ্টিতে দেখা হয়, প্রশ্রয়ের দৃষ্টিতে দেখা হয়া, অফিসযাত্রীর সেই আপাত নিরিহ অনুভূতিই রাষ্ট্রদ্রোহীতার মত অপরাধ হতে পারে।
যাই হোক, মহামান্য রাষ্ট্রপতির মৃত্যু শোকই আবার কারও কারও জন্য হতে পারে সুখের খবর। সবই রিলেটিভ, এ্যাবসল্যুট বলে কিছু নেই।
ছেলেদের বিয়ের বয়সের বেলাতেই যেমন। কেউ বলবে পঁচিশ, কেউ বলবে ত্রিশ। কিন্তু যারা পঁচিশ-ত্রিশ সংখ্যার কথা বলে তারা ভুল করে।
কারণ পঁচিশ-ত্রিশ হচ্ছে এ্যাবসল্যুট এইজ। কিন্তু ছেলেদের বিয়ের বয়সতো আর ফিজিক্যাল এইজ দিয়ে হয়না, ছেলেদের বিয়ের বয়স হয় ফিনানসিয়াল এইজ দিয়ে। ত্রিশেও বেকার মানে, এখনও বিয়ের বয়স হয়নি। আবার চব্বিশেই সাবলম্বি মানে ছেলে বিয়ের লায়েক হয়ে গেছে। সবই রিলেটিভিটি।
কিংবা মামা-চাচাদের ক্ষেত্রেও। মোটামুটি বেশীরভাগ মানুষেরই দেখা যায় মামাদের সাথে মধুর সম্পর্ক। কিন্তু চাচাদের সাথে তেমন একটা না। চাচারা বাবাকে বোকা পেয়ে সব সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছে। বাবা সহজ সরল, চাচাদের এত কিছুর পরও ভাইদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু মামারা শুধু দিয়েই গেলেন, দিয়েই গেলেন। অনেকের মধ্যেই এই ধরনের একটা ডিসপজিশন থাকে। জানিনা কেন। কিন্তু একজনের চাচাই কারো মামা, আর একজন মামাই আবার কারো চাচা হন। একই ব্যক্তি তখন আবার চেঞ্জ হয়ে যান নাকি মামাদের কথা ভাবতে গেলে আমরাই চেঞ্জ হয়ে যাই কে জানে।
স্কুল, কোচিং, কলেজ এমনকি ভার্সিটিতে পর্যন্ত টিচারদের কাছে একটা কথা নিয়মিত শুনতে হতো। কেন পড়া শেখা হয় নাই। যত গুরুতর সমস্যার কথাই অবতারনা করা হোক না কেন, তাদের সন্তুষ্ট করা যেত না। এবং তাদের কনক্লুডিং রিমার্ক থাকতো একজন ছাত্রের পড়ালেখা ছাড়া আর কী এমন কাজ থাকতে পারে? কিন্তু প্রিয় শিক্ষকদের কখনই বুঝিয়ে বলা হয় নি থিওরী অব রিলেটিভিটি। তারা এ্যবসল্যুট সেন্স-এ আমাদের ছাত্র ধরে নিত।
কিন্তু এর বাইরেওতো ছাত্ররা আরও অনেক কিছু-- মাঠের কাছে খেলোয়ার, টিভির কাছে দর্শক, গার্ল ফ্রেন্ডের কাছে বয়ফ্রেন্ড, বন্ধুর কাছে বন্ধু, এমনকি টিউশনিতে টিচার! সেখানে যেয়ে আমরাও স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির মতো একই কথা আওরাই, কেন স্টুডেন্ট পড়া শিখতে পারেনি।
মোবাইলের ফোন বুকে নামের এক্সটেনশনও আপেক্ষিকতার চেঞ্জ হয় নিয়মে। এলাকার শাওন, ভার্সিটির শাওন, কাজিন শাওন, স্টুডেন্ট শাওন এরকম অনেকের নাম্বার ফোনবুকে। সবার নামের শেষেই যথাযোগ্য সাফিক্স। বিবিএর ’শাওন ভার্সিটি’ এমবিএতে এসে হয়ে গেল ’শাওন আইবি’।
কিছুদিন পর চাকরির সুবাদে হয়ে গেল ’শাওন ইউনিকলো’।
একটা সুন্দর পাখি দেখলে মনটা ভালো হয়ে যায়, একটা সুন্দর শিশু দেখলে মনটা ভালো হয়ে যায়, এমনকি একট সুন্দর গাড়ি, সুন্দর একটা বিল্ডিং, একটা সুন্দর মনুমেন্ট দেখলে মনটা ভালো হয়ে যায়। সব সুন্দর দেখলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। শুধু একজন সুন্দর নারী দেখলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। বিবাহিত লোকজনের এই মনভাবকে হয়তো ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হতে পারে।
তবে এই মন খারাপটা যাদের হয়, তাদের বিবাহিত-অবিবাহিত কোন ব্যপার নেই, সব সময়ই হয়। সুন্দর নারী দেখলে মনটা খারাপ হয়, খা খা করে, সব শূন্য শূন্য লাগে। আগেও হতো, হয় আজও।
সবারই হয় কিনা কে জানে, সব সময়ই হয় কিনা কে জানে। এখানে থিওরী অব রিলেটিভিটির কথা বলা হচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।