অপরিসীম কষ্ট, গভীর বেদনা ও সীমাহীন যন্ত্রণা নিয়ে আপনার কাছে চিঠি লিখছি। আপনার সাথে সরাসরি দেখা করার কোনো সুযোগ আমরা পাইনি। রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইডেন গার্লস কলেজের ছাত্রীদের আমরা হতভাগ্য অভিভাবক। আমরা কোনো কোনো ছাত্রীর মা এবং কারো কারো বড় বোন। আমরা কেউ কেউ ঢাকায় থাকি।
তবে বেশির ভাগই ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় বাস করি। আমাদের মেয়েরা কিংবা বোনেরা ঢাকার ইডেন কলেজের বিভিন্ন হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করে। মধ্যবিত্ত কিংবা নিু মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের। কাজেই আপনার মতো আমাদের সামর্থ্য নেই ছেলেমেয়েদের বিদেশে রেখে লেখাপড়া করানোর। আমরা অনেক কষ্টে মেয়েদের ইডেন কলেজের হোস্টেলে রেখে লেখাপড়ার খরচ জুগিয়ে যাচ্ছি এই আশায় যে, এক দিন তারা মানুষ হবে, পরিবারের দুঃখ-কষ্ট ঘোচাবে।
আমাদের সেই আশা চুরমার হয়ে গেছে। দুঃখে, যন্ত্রণায় আমাদের বুক ভেঙে গেছে। পড়তে গিয়ে আমাদের নিষ্পাপ মেয়েরা, ফুলের মতো পবিত্র আমাদের ছোটো বোনেরা আজ তাদের ইজ্জত ও সম্ভ্রম হারিয়েছে। আপনার দলের মন্ত্রী, এমপি, বড় নেতা, পাতি নেতা এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের প্রভাবশালী নেতার ভোগের সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে আমাদের মেয়ে ও ছোটো বোনদের। ইডেন কলেজের প্রশাসন ও শিক্ষকরা সেখানে আজ অসহায়।
ছাত্রী নয় এমন কিছু ক্রিমিনাল আজ ইডেন কলেজে আপনাদের ছাত্রলীগের নেত্রী হয়ে আছে। কাজেই সরকার ও প্রশাসনের সবাই তাদের তাঁবেদার। আওয়ামী লীগ নেতা ইসমত কাদির গামার ইতিহাস আপনি জানেন। গামা সাহেবের স্ত্রীকে আপনি ইডেন কলেজের প্রিন্সিপাল বানিয়েছেন। তিনি এখন ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেত্রীদের আজ্ঞাবহ।
তার অধীনেই ছাত্রলীগ নেত্রীরা ইডেন কলেজে ভর্তি বাণিজ্য এবং হোস্টেলে সিট বরাদ্দের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাতেও আমাদের আপত্তি ছিল না। তারা আমাদের মেয়েদের এবং ছোট বোনদের তাদের সেবায় এবং বাসার কাজে ব্যবহার করেছে, চাকরানির মতো খাটাচ্ছে। পান থেকে চুন খসলেই মেয়েদের ওপর চালাচ্ছে অবর্ণনীয় দৈহিক নির্যাতন।
ছাত্রলীগের নেত্রীরা আমাদের মেয়েদের, আমাদের ছোট বোনদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে আপনার দলের ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের কাছে পাঠিয়েছে তাদের মনোরঞ্জনের জন্য ভোগের সামগ্রী হিসেবে।
ক্ষমতাশালী পাপিষ্ঠ ওই দানবদের লালসার শিকার হয়ে ফুলের মতো পবিত্র আমাদের মেয়েরা ও ছোট বোনেরা দুঃখে, লজ্জায়, ক্ষোভে, অপমানে আজ মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। ধর্ষিত-লাঞ্ছিত, এই মেয়েদের কাছে জীবন আজ মৃতুøর চেয়েও ভয়ঙ্কর। তাদের মহাসর্বনাশ হয়ে গেছে, জীবন ছত্রখান হয়ে গেছে। আমাদের পরিবারগুলো আজ দারুণভাবে বিপর্যস্ত। অনেকে হোস্টেল ও কলেজ ছেড়ে গেছে সীমাহীন লজ্জায়, অপমানে, ঘৃণায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনিও মায়ের পেটে জন্মেছেন। আপনারও মেয়ে আছে, ছোট বোন আছে। আপনি নিজে একজন নারী। আপনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনও একজন মহিলা। আমরা আশা করেছিলাম, আমাদের মর্মবেদনা ও অন্তজ্বêালা আপনি বুঝতে পারবেন।
কিন্তু কী দেখলাম আমরা?
ইডেন কলেজে ছাত্রলীগ নেত্রীদের পৈশাচিক, নারকীয় ও ঘৃণ্য অপকর্মের কথা আমাদের মেয়েরা ও বোনেরা অপমানের ভয়ে নির্যাতিত হওয়ার আশঙ্কায় চেপেই রেখেছিল। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় ছাত্রলীগেরই কয়েকজন মেয়ে এই ক্লেদাক্ত কাহিনী ফাঁস করে দিয়েছে। বেশির ভাগ জাতীয় দৈনিকে সেই বীভতস অপকর্মের বিবরণ সবিস্তারে প্রকাশিত হয়েছে।
যে মন্ত্রীরা, এমপিরা এবং দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা হায়েনার মতো ইজ্জত লুটেছে আমাদের নিষ্পাপ মেয়েদের ও বোনদের আপনি সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদের অন্তত বরখাস্ত করলেও পাপের কিছুটা সাজা হতো। ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের ক্রিমিনাল নেত্রীদের গ্রেফতার করে আপনি বিচারের নির্দেশ দিতে পারতেন।
সরিয়ে দিতে পারতেন কুকর্মের দোসর প্রিন্সিপালকে।
তাতে সম্ভ্রম হারানো মেয়েরা তাদের ইজ্জত ফিরে না পেলেও কিছুটা সান্ত্বনা হয়তো পেত। ছাত্রলীগের ক্রিমিনাল নেত্রীদের কাউকে কিছু বলা হলো না। বরং শাস্তি দেয়া হলো যারা ঘটনা ফাঁস করে দিয়েছে তাদের। তাদের ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করে দেয়া হয়েছে।
এই হলো সুবিচার! এই হলো ইনসাফ!
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনী এ দেশের মা-বোনদের ওপর উতপীড়ন করেছিল। সেই পাপের কারণে তাদের শোচনীয়ভাবে অপমানজনক পরাজয়বরণ করতে হয়েছে। ক্ষমতার দম্ভে অসহায় মেয়েদের ভোগের সামগ্রÞী হিসেবে যারাই ব্যবহার করেছে তারাই ধ্বংস হয়ে গেছে। আপনাদের দলের নেতা-নেত্রীরা জঘন্যতম অপরাধ করেও আজ পার পেয়ে যাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ জানাতে গেলেই নেমে আসছে সীমাহীন নির্যাতন।
কাজেই এত জঘন্য পাপ ও অপরাধকেও আজ আমাদের মুখ বুজে সইতে হচ্ছে। হূদয় বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে আমাদের কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছি না। ইডেন কলেজের কয়েক শ’ নিরপরাধ ছাত্রী আজ গুমরে গুমরে কাঁদছে। নীরব আর্তনাদে বিদীর্ণ হচ্ছে আমাদের পরিবারের সদস্যদের হূদয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের আকুল আবেদন, আমাদের মেয়ে ও বোনদের ইজ্জত লুটে যারা উল্লাস করেছে অবিলম্বে সেই মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের সাজা দিন, বিচার করুন, দল থেকে তাড়িয়ে দিন।
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন ছাত্রলীগের ক্রিমিনাল নেত্রীদের।
৩৯ বছর আগে যারা এ দেশের মেয়েদের ওপর অত্যাচার করেছে, আপনি তাদের বিচারের আয়োজন করছেন; কিন্তু আজ আপনার লোকরা আমাদের মেয়েদের ইজ্জত লুটে বহাল তবিয়তে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছে। আপনার কাছ থেকে বিচার না পেলে আমরা বিচারের ভার সর্বশক্তিমান আল্লাহ এবং এ দেশের আপামর জনসাধারণের ওপর দিয়ে রাখলাম।
ইতিন্ধ
ইডেন কলেজে নির্যাতিত ছাত্রীদের হতভাগ্য মা ও বোনেরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।