উঁকি দাও ফুল!
মুন্সী তার চিন্তার অসততা বিষয়ক পোস্টটাতে Click This Link দাবি করলেন,
" পাহাড়ীরা আদিবাসী নয় - এই তর্ক করতে আমাকে কোথায় দেখলেন?
পাহাড়ীরা আদিবাসী কি না - এটা আমার তর্ক নয়, তর্কের পক্ষ বিপক্ষে আমি কেউ নই; কারণ এটা আমার বলার কথার সাথে অপ্রাসঙ্গিক। অথচ আমি যেন "পাহাড়ীরা আদিবাসী নয়" - এটা প্রমাণের পক্ষে কেউ একজন এটা ধরে নিয়ে স্পষ্ট করে সায় দিয়েছেন শুধু তাই নয় সেই সাথে একটা গালাগালি বিশেষণ লাগিয়ে হিপোক্র্যাসি বলেছেন। ..."
পি মুন্সী আসলেই কিন্তু রাগ ইমনের মত কোথাও দাবি করেন নাই, পাহাড়িরা আদিবাসী নন। কিন্তু তার এই অভিযোগটাও চরম অসত যে, আমি বা অন্য কেউ তার বিরুদ্ধে এই তর্ক তোলার অভিযোগ উত্থাপন করেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি শুধু বলেছি, মুন্সী রাগ ইমনের সাথে সুর মিলিয়ে এ বিষয় ধোয়াশা তৈরি করেছেন! মুন্সীর ধোয়াশা মুন্সীর নিজের বয়ানেই শুনুন:
" লেখক বলেছেন: লক্ষ্য করেছেন বোধহয়, indigenous peoples শব্দটা।
১. এখন বাংলাদেশের পাহাড়ীরা indigenous peoples কি না সে নিয়ে মেলা বিতর্ক শুরু হয়ে যাবে - এটা আমার জন্য এখানের কথার উদ্দেশ্য মাটি হয়ে যাবে। ২. বাংলাদেশ ঐ সনদ সংসদে সম্পূর্ণত রেটিফাই না করে থাকলে এর কোন প্রভাব বাংলাদেশে নাই। এছাড়া পাহাড়ীরা "আদিবাসী" কিনা এটা সরকারের স্বীকার-অস্বীকার করার ব্যাপার আছে। সম্প্রতি সারকুলার দিয়ে সরকার indigenous peoples বা আদিবাসী বলা বন্ধ করতে বলেছে। ৩. এমন কী মনিটর থেকে কী-বোর্ড হয়ে যাওয়া উকিল খোদ CHT Commission সাম্প্রতিক ঘটনায় যে প্রেস রিলিজ দিয়েছে সেখানেও ইংরাজীতে Pahari এভাবে উল্লেখ করেছে।
নীচে দেখুন বক্তব্যের প্রথম লাইন: "The CHT Commission (CHTC) is appalled to receive reports of the arson attacks carried out on over 200 Pahari homes......." ৪. সন্তু লারমা শান্তিচুক্তির পর ঢাকায় এসে সর্বপ্রথম এই "পাহাড়ী" শব্দটা চালু করেছিলেন। মনে রাখতে হবে ঢাকার বাবুভদ্রলোকদের সামনে সেই তার প্রথম এসে সভা সমিতিতে কথা বলা, এর আগে তিনি তো গোপন আন্ডারগ্রউন্ড, আইনের চোখে অবৈধ রাজনীতিক, ফলে প্রকাশ্য কথাবার্তা বলতে হয়নি। তবে উনার এই শব্দটা দরকার পড়েছিল পাহাড়িদের চাকমা, মারমা ইত্যাদি নৃবৈশিষ্ট বিভেদ এড়িয়ে একটা শব্দে সবাইকে জড়ো করার দরকারে। পরে এনজিও প্রজেক্টের খপ্পড়ে পরতে গিয়ে আবার নতুন নাম "আদিবাসী" নিতে হয়েছিল। ৫. জাতিসংঘের ঐ উল্লেখিত প্রস্তাব উঠে আসার পিছনের কথা কী, কেন এধরণের একটা প্রস্তাব করার বা দরকার পড়ল।
আমরা অনুমান করতে পারি কেবল বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে এটা করা হয়নি। আর এই ধরণের আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোকে কিভাবে লবী করতে হয়, ভিতরের ডায়নামিক্স কী এগুলো পাহাড়ি-সমতলীর রাজনীতি প্রায় কিছুই জানা নাই যদি না কেউ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে শিখিয়ে হাতে ধরে পরামর্শ দেয়। .... সারকথায় জাতিসংঘের "আদিবাসী অধিকার সনদ" এর প্রেক্ষিত indigenous peoples এলাকায় তেল, খনিজ তোলার দিকে নজর পড়া থেকে। এমন কী এজন্য indigenous peoples বলে ক্যাটাগরিতে ফেললেই একমাত্র এনজিও ফান্ড সংগ্রহ সবচেয়ে সহজ। বাংলাদেশে পাহাড়ীদের "আদিবাসী" শব্দটা যত না স্হানীয় দরকারে এর চেয়ে বেশি এনজিও, ইউএনডিপির ফান্ড সংগ্রহের দরকারে।
..."
ধোঁয়াশা যদি একে না বলা যায়, শব্দটা তুলে দেই ভাষা থেকে! পাহাড়িরা আদিবাসী কিনা, এই কথা তুলেই তো এই ব্লগেই বহু ব্লগার তাদের চিরায়ত অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছে। ফলে, পাহাড়িদের জন্য খুব জরুরি যে বিষয়, তাদের আদিবাসী পরিচয়, যা তাদের চিরায়ত ভূমির ওপর তাদের ন্যয্য অধিকারের নীতিগত বৈধতার জন্য খুব জরুরি, তা মুন্সীর কাছে ব্যাপরস না। ব্যাপারসনা হলেও তিনিই আবার এটাকে কেবল এনজিও ফান্ড পাবার জন্য সুবিধাজনক ইত্যাদি ইত্যাদি বলে রিডিকিউলও করার চেষ্টা করেছেন। আর য্যানো এনজিও ফান্ড আসে বলেই আমরা আর কখনো কোনদিন নারী নিয়া কথা বলবো না!!! আমাদের কেবল মাত্র সেই সব ক্ষেত্র খুইজা বাইর করতে হবে, যেইখানে এনজিওরা ফান্ড দিতে অক্ষম। যেন রাগ ইমনরা এইটারে ইস্যু কৈরা পাহাড়িদের ভূমি দখলকরাটারে বৈধতা দেয় নাই! আবার সরকারের প্রতি মুন্সীর আনুগত্যও দেখবার মতো, সরকার আদিবাসী মেনে নেবে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি, সরকার আদিবাসী ব্যবহার করতে না করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি সুর তিনি ভাঁজলেন।
পাহাড়িদের 'আদিবাসী' হওয়াটা যেখানে তার লড়াইয়ের একটা শক্তিশালী হাতিয়ার, সেইখানে তাদেরকে এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে সরকারের পক্ষাবলম্বী হতেই আমরা মুন্সীকে দেখলাম।
[sbএইবার সংবিধানটা পড়ি!
নিরুপায় মুন্সী এইবার সংবিধানের ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করলেন। শুরু হল সংবিধানের কাটাছেড়া। সংবিধানে কি আছে আর কি নাই। কি কি যুক্তিতে দেশের সর্বত্র সকল নাগরিকের সর্বত্র জমি কেনার মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে! তাসলিমা মুন, আইনের ছাত্র, মনজু ভাইয়ের পোস্টে এক ঝটকায় মুন্সীরে উড়ায়া দিল এই বইলা, আমরা কি সংবিধানে আছে বৈলা কোন কিছুরে ন্যায্য বৈলা মানি, না কোন কিছু আমাদের কাছে ন্যায় সঙ্গত বৈলা সেইটা করার চেষ্টা করি? এবং সেইটারে সংবিধানে অন্তভূক্ত করার চেষ্টা করি? এইবার আম্রা টের পাইলাম, মুন্সীর কাছে সংবিধানটা অতি পবিত্র।
কোর্টকাচারিও। কেননা, সৎউদ্দেশ্যে করা হৈলেও সংবিধানের ভায়োলেশন তো তারা ঠেকায়া দিবে।
এই দেশে আমরা কত সংবিধানের আগড়ম বাগড়ম দেখলাম। দেখলাম এইটারে কাইটা ছিইড়া ইচ্ছামত কত রকমের সাইজ দেয়া যায়। এই সংবিধান এমনকি তার নিজের স্বীকৃত অধিকারগুলার রদও ঠেকাইতে অক্ষম।
সর্বদাই হয় শাসকরা তাদের ক্ষমতা জনগণের ওপরে চাপায়া দেয়, কিংবা জনগণ তাদের যৌথ ক্ষমতা রাষ্ট্রের ওপরে। এই দেশে, আমারারে সংবিধান চেনাইলে চলে!!
তারপর মুন্সী ধরলেন আরেক নতুন লাইন। আম্রা কি অতমত সালের পাহাড়ের ম্যানুয়ালে ফেরত যামু কি না। কিন্তু পোস্ট অতীব লম্বা হয়া গেল। আর লিখতে প্রাণ সরে না।
রাইতও পার হয়া সকাল। এই বিষয়ে খালি একটা ছোট কথা বললেই চলে, পাহাড়িদের ভূমির ব্যবহার আর মালিকানার ধরন তাদের নিজস্ব। কোন নিজস্বতাই চিরকাল অটুট থাকে না। পুঁজির বিকাশ, কৃষির বিকাশ, উৎপাদনের বিকাশ ও গোত্রসম্পর্ক ভেঙে সম্পর্কের বিকাশ তাদের ভূমির ব্যবহার ও গঠনকেও পাল্টে ফেলবে সন্দেহাতীত ভাবেই। কিন্তু ওইটার সাথে আমাদের ফেরত যাবার কি? কিছু না।
ওইখানে আমাদের হস্তক্ষেপ না করাটাই বাঞ্ছনীয়। বরং তাদের প্রতি ইতিবাচক সহযোগিতা এই রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা আর সংহতিকেই হয়তো আরও শক্তিশালী করবে ইতিবাচক অর্থেই।
আগের কিস্তি
Click This Link
পয়লা কিস্তি
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।