সত্য অথবা মিথ্যা দুটোই হতে পারে। বিশ্বাস করা আর না করা আপনার ব্যপার। আরও একবার এলাম পাত্রি দেখার গল্প নিয়ে। না এবার দেখাতে না দেখতে গিয়েছিলাম। প্রথমেই বলে রাখি সবটা ফান হিসেবে নিলেই ভাল।
জিবনের সব কিছুতেই সিরিয়াস না হলেও চলে। তাহলে এবার গল্প শুরু করি।
আমার ছোট ভাইয়ার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে। সব সময় দেখতে যাওয়ার সময় মা, আপা, বড় ভাইয়া আর দুলাভাই যান। এবার আপার কিছু অসুবিধার জন্য যেতে পারবে না।
তাই আম্মু আমাকে যেতে বললেন। আমার আবার দেখতে যাওয়া অথবা দেখাতে যাওয়া ২ ব্যপারেই সমান আপত্তি আছে। তাই রাজি ছিলাম না। কিন্তু আম্মার বকাবকির পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়াতে অবশেষে রাজি হলাম যেতে। কিছুক্ষণ পর সবাই রেডি হয়ে রওনা দিলাম।
এই বিয়ের প্রস্তাব এনেছে আমার এক পরিচিত আপু। তিনি ৭ বছর প্রেম করে তারপর বিয়ে করেছেন। তাও অনেক কাঠ-খড় পুরিয়ে। উনার বিয়ের প্রধান সমস্যা ছিল ছেলের জেলা। মানে ছেলের বাড়ি এমন জেলায় ছিল যেটা আপুর পরিবার পছন্দ করতেন না।
কিন্তু শেষে যে ভাবেই হোক বিয়েটা হয়েছিল। এবং আপাত দৃষ্টিতে তাদের হ্যাপি ফ্যামিলি বলা যেতে পারে। পরিবারের পছন্দ যেমনি হোক আপু যেন তারপর থেকে প্রতিজ্ঞা করেছেন, তার পরিচিত সব মেয়েকেই তিনি ঐ জেলার বউ বানিয়ে ছাড়বেন। নিরব প্রতিশধের মত।
এবার আসল কাহিনিতে আসি।
এতখন তো রাস্তায় ছিলাম তাই এগুলা বলছিলাম। এখন এসে পরেছি। পরে টের পাবেন কেন বলেছিলাম। গাড়ি থেকেই নামার পর প্রথমেই দেখলাম রাস্তায় বেশ কাদা। আর ঠিক তখন একটা গাড়ি বেশ সফলতার সাথে আমার গায়ে কাদা নিক্ষেপ করে চলে গেল।
পায়ে কাদা লেগে যাচ্ছেতাই অবস্থা। আম্মা আমাকে দেখে ফিক করে হেসে ফেললেন। এবং হাসি টা কিছুক্ষণের মধ্যে সবার মদ্ধেই সংক্রমিত হল। আমি তখন রাগে দুঃখে কান্না করব এমন প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু শুরুর আগেই আম্মা শেষ করে দিলেন।
বললেন এখন শুরু কইরো না। বাসায় গিয়ে অনেক সময় পাবা। মেনে নিলাম।
অবশেষে আপুর সেই আত্মীয়ের বাসায় গেলাম। আপুর সাথে আমার প্রথম কথা ছিল, আপু পানি দাও।
আর কিছু বলার আগেই আপু তারাতারি করে একগ্লাস পানি নিয়ে এলেন। পরে জিজ্ঞেস করলাম এই এলাকায় কি পানির ক্রাইসিস চলছে?? আপু বললেন নাতো!! বলেই খেয়াল করলেন যে পায়ে কাদা লেগে আছে। তখন তারাতারি নিয়ে গেলেন পা ধুতে। সবাই সামনে দাঁড়ানো, আর আমি পা ধুচ্ছি। মনে হচ্ছে এটা একটা বিরাট মজার ঘটনা।
পা ধুয়ে গিয়ে বসলাম। আমি আর দুলাভাই একসাথে বসেছি। এটা আমার ওয়ান এন্ড অনলি দুলাভাই। খুব খুব খুব ভাল ও মজার একজন মানুষ। একসাথে বসলে বাকি সবাই নাই হয়ে যায়।
তো সবাই বসলাম কথা বলছি সবার সাথে। বেশ মিশুক একটা পরিবার। কিছু কথার আধিক্য ছাড়া বাকি সব কিছুই খুব ভাল লেগেছে। আপু আমাদের সাথেই বসা। এটা সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব ও শুরু হয়েছে।
এমন সময় আপু বলে উঠলেন, দেখেন দুলাভাই আমি কত ভাল একটা প্রস্তাব আনলাম( যথারিতি ঐ এলাকার) শিলার জন্য। অথচ এই ছেলে ( আমার ছোট ভাইয়া) রাজিই হয় না। এটা একটা কথা?? ছেলে হেন করে, তেন করে। ২ দিন পর মেয়েকে নিয়ে বিদেশ চলে যাবে।
আমি বললাম, মেয়ে নিয়ে গিয়ে লাভ কি?? বউ নিয়ে যেতে বল। আমার দুলাভাই ও বলেন, ঠিক ঠিক মেয়ে নিয়ে কেন যাবে??? বউ নিবে না?? আপু রেগে আর কিছু বলেন না। পরে বললেন এমন করলে এই বিচ্ছু মেয়ের বিয়েই হবে না। আমি বললাম, এতক্ষণে ভাল কথা কইছেন একটা। দুলাভাই আবার আমাকে বলেন, সাবধান তোমারে নিয়া গোপন ষড়যন্ত্র চলতেছে কইলাম!!
খাওয়া দাওয়া হল।
তারপর ছিল মেয়ে দেখার প্রক্রিয়া। সেটাও ঠিকমত হল। চিরায়িত কাজ কর্ম। অসহায় মেয়ে আর তার ইন্টার ভিও নেয়া। তারপর আবার কথা বার্তা চলছে।
আযান দিল। ভাইয়ারা নামাযে গেলেন। তারা আসলেই বের হব। এমন সময় আপু এসে বসলেন আমার পাশে। মাকে বলছিলেন, দেখেন খালাম্মা আমাদের বাড়ির মেয়েরা সবাই খুব ভাল।
লেখাপড়া বলেন আর চালচলন বলেন। প্রেম ট্রেম করার মধ্যে নাই। আমি শুনে আর হাসি ধরে রাখতে পারলাম না। আপুকে কানে কানে বললাম, আপু কয় বছরের প্রেম যেন ছিল আপনার?? আপু নিজেও হেসে দিলেন। বললেন, সব খানেই কিছু এক্সট্রা অরডিনারি মানুষ থাকে।
ওদের গোনায় ধরতে হয় না বিচ্ছু। নিজে তো কিছু করতে পারো নাই তাই হিংসায় জ্বলতেছ। আমি তো পুরাই হা হয়ে গেলাম। এত বড় অপমান?? বললাম আপুকে, ঠিক আছে এক মাসের মধ্যে প্রেম করে দেখাব। তবে যদি করতে পারি তাহলে কি হবে?? আপু বললেন যা চাইবা তাই হবে।
আমিও ভাবলাম লেটস ট্রাই।
তারপর ভাইয়ারা চলে আসলেন। বিদায় নিলাম সবার কাছ থেকে। আপু বললেন আমাদের সাথে ফার্মগেট পর্যন্ত যাবেন। গাড়িতে সবাই একসাথে।
আবার আপুর বিয়ার বকবকানি শুরু। সেই এলাকা, সেই পোলা, আর সেই একি কাহিনি। শেষে আমার দুলাভাই বলে বসলেন, আরে মাইয়া সিরিয়াল মেনে চল। বড় ভাইয়া রেখে কি এখন শিলার বিয়ে করা উচিত?? মানুসে কি বলবে?? আমিও সায় দেই, ঠিক ঠিক। আম্মা শুধু হাসেন আর কিছু বলেন না।
আপু যথারিতি রেগে যান, আপনাদের মেয়ে নিয়ে বসায় রাখেন। বিয়া দেয়া লাগব না। আমি একটু শান্তনা দেই, আরে কিছু দিন মাত্র। প্রেম শুরু হল বলে। এবার আপু সত্যি সত্যি রেগে চুপ করে বসে থাকেন।
কিন্তু রাগ ভাঙ্গানোর কাজটা করি নাই। কারন আপু আমার উপর রেগে থাকতেই পারবেন না। ঠিকই একদিন পর ফোন দিয়ে বলবেন, কিরে ঐ ব্যপারে ভাবছিস কিছু??
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।