স্বপনের সমাধি খোঁড়া এ জীবন ... মনের গোপন ঘরে যে শ্বাপদ ঘর করে তাকেই লালন করে চলা এ জীবন!
২০০৮ সালে দেশ ছেড়েছিলাম উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে; ৫ বছর প্রবাসী জীবন কাটালাম! প্রথম মিশন শেষ, এখন পরবর্তী দিনের পরিকল্পনা করার সময় এসেছে। এতদিন এরকম দোদুল্যমান অবস্থার কথা অন্যের মুখে শুনেছি, এখন সেই অবস্থায় পড়েছি নিজে । দেশে ফিরব, নাকি বাইরে সেটেল হব???? ছোট্ট একটা প্রশ্ন, উত্তরও হয়ত খুবই ছোট, হ্যাঁ অথবা না! কিন্তু সবদিক মিলিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা যে কতটা কঠিন তা ভুক্তভুগী না হলে বোঝান কঠিন!
বিদেশে সবসময় যে খুব ভাল কেটেছে সেটা বলব না, কিন্তু এই ৫ বছর লাইফটা কেটেছে একদম স্মুথ! অপ্রত্যাশিত কোন ঝামেলা হঠাত সামনে এসে হাজির হতে পারে সেটা প্রায় ভুলেই গেছি। সুইচে টিপলে লাইট জলবে, ট্যাপ খুললে পানি পড়বে, চুলার সুইচ ঘুরালে আগুন জ্বলবে, বাসা থেকে সঠিক সময়ে বের হলে গন্তব্যে পৌঁছাতে হিসাবের বাইরে ১ মিনিটও দেরী হবে না, লাখ টাকা পকেটে নিয়ে বের হলেও সেটা কেও ছুরি ঠেকিয়ে নিয়ে যাবে না, কোন অফিসে কাজে গেলে কর্মকর্তারা ছুটে আসবে হেল্প করার জন্য ... ... ... এমন অনেক ব্যাপার এই ৫ বছরে ছিল স্বতঃসিদ্ধ! একবারের জন্য এসবের ব্যাতয় ঘটেনি।
এসব নাগরিক সুবিধার ব্যাপারে দেশের অবস্থা না-ই বলি; কারো অজানা নয়! কিন্তু দেশে যা আছে তা বিশ্বের অন্য কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়, সে যত উন্নত দেশই হোক না কেন।
মা; মাটি; মায়া... নাড়ীর টান উপেক্ষা করি কেমনে! বিদেশে যত সুযোগ-সুবিধার মধ্যেই থাকি না কেন, এ তো সোনার খাঁচা ব-ই অন্য কিছু নয়। মাঝে মাঝে খুব হাঁসফাঁস লাগে!!
যায় হোক; আবেগের কথা বাদ দিয়ে কাজের কথায় আসি! নিজেদের আবেগ-বাস্তবতার কথা বাদ দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটু আলোচনা করতে চাই। আমাদের জীবনে যা হওয়ার অনেকটাই হয়ে গেছে, এখন বাকী জীবনের সফলতা ব্যর্থতা অনেকটাই নির্ভর করছে আমাদের সন্তানদের উপরে। সন্তানের জন্য সুন্দর একটা পরিবেশ সব পিতা-মাতার ই কাম্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে “প্রকৃত সুন্দর পরিবেশ” কোনটি? উন্নত বিশ্বের উন্নত জীবন ব্যবস্থা? নাকি নিজ দেশের মায়াময় পরিবেশ???
এই বিষয় নিয়ে আমার ছেলের বাবা-মায়ের মধ্যে কিছুদিন থেকে তুমুল যুক্তিতর্ক চলছে! বাবা’র বক্তব্য, সন্তান দেশের মাটিতে দেশের মানুষের সাথে সুখে-দুখে বড় হলেই প্রকৃত মানুষ হতে পারবে।
একজন মানুষ যত বড়ই হোক না কেন তার ভিতর যদি শিকড়ের টান না থাকে তাহলে তা তার নিজের জীবনের, পরিবারের, দেশের, এমনকি বিশ্বের কোন কাজে আসে না। ডিফ্রেন্ট কালচারে বাচ্চা বড় হলে কিছুদিন পরেই তার সাথে আমাদের কালচারাল কনফ্লিক্ট শুরু হবে সেটা আমাদের কারো জন্য সুখকর হবে না। আর ছেলের মায়ের বক্তব্য; এসব পুরাণ সেন্টিমেন্ট! এখনকার প্রজন্ম হবে গ্লোবাল জেনারেশন; এখনকার বাচ্চারা পুরা পৃথিবীকে নিজেদের দেশ মনে করবে। সুতরাং যেখানেই সে বেশী উন্নত পরিবেশ পাবে সেখানেই সুযোগ থাকলে তার যাওয়া উচিত!
অবশ্য আমরা দু’জনেই একটা ব্যাপারে একমত হয়েছি যে প্রকৃতপক্ষে কোনটা (দেশ নাকি বিদেশ) সন্তানের বড় হওয়ার জন্য বেটার পরিবেশ; কোন পরিবেশে বড় হলে বাচ্চারা কেমন হয় সেটা কম্পিয়ার করার জন্য পর্যাপ্ত ডাটা আমাদের হাতে নেই। বিশেষ করে যে সব বাচ্চারা বিদেশের বড় হচ্ছে তারা জীবনে কেমন করছে অথবা তারা পরবর্তীতে কি কি সমস্যায় পড়ছে বা তাদের দ্বারা পরিবার কোন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কি না... ইত্যাদি বিষয়ে খুব বেশী জানা শোনা আমাদের নেই।
আসলে দুই দশক আগেও দেশের বাইরে সেটেল হওয়া পরিবার খুব বেশী ছিল না। ইদানিং পরিবার সহ বিদেশের স্থায়ীভাবে বসবাসকারীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বিদেশে সেটেল হওয়ার পিছনে সবার মূলত একটাই যুক্তি, সন্তানের জন্য উন্নত ভবিষ্যৎ রেখে যাওয়া! তাই ব্যাপারটা আলোচনার দাবী রাখে!
শুধু আবেগ দিয়ে নয়, আবার আবেগ বর্জিত হয়েও নয়, আমি আপনাদের কাছে যুক্তিযুক্ত আলোচনা আশা করছি। অভিজ্ঞতার আলোকে আলোচনা হলে সেটা আরো ভাল হয়, আপনার পরিচিত কারো সন্তান বিদেশে বড় হয়ে কেমন আছে সেটা শেয়ার করার অনুরোধ রইল!
আপনার মতামত দিনঃ সার্বিক দিক বিবেচনা করে আপনি আপনার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কোনটা বেটার পরিবেশ মনে করেন? উন্নত বিশ্বের উন্নত জীবন ব্যবস্থা???? নাকি নিজ দেশের মায়াময় পরিবেশ????
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।