আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাদের প্রেম কোন নীলচোখের প্রিয়তমার জন্য নয়। বরং দেশমাতৃকার জন্য- মানবতার প্রেম

তোমার অপেক্ষায় আমার ধূধূ দিগন্ত

সুত্র- ফেসবুক। । জাফর ইকবাল স্যারকে কেন্দ্র করে লেখাটি রচিত আমার ক্যাডেট কলেজের এক ছোট ভাই এ বছর একই সাথে ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান (applied physics) এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে ভর্তির সুযোগ পায়। সে ঢাবি’র ফলিত পদার্থাবজ্ঞান ছেড়ে শাবিপ্রবি-তে ভর্তি হয়। কারণ সেখানে জাফর ইকবাল স্যার আছেন।

জাফর ইকবাল স্যারের প্রতি তরুণ প্রজন্মের এ আস্থা ও ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করে। গতবছর ডিজিটাল বাংলাদেশের বিদ্যুত খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে সরকার ঘড়ির কাঁটা একঘন্টা এগিয়ে আনে। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে আনার ফলে সরকারের কোন লাভ হয়েছে কিনা তা জানা না গেলেও এটা জানা গেছে যে, এতে জনগণকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি বিপত্তি হয়েছে স্কুলগামী শিশুদের। কাকডাকা ভোরে, এমনকি ফযরের নামাযের অনেক আগে, রাতের আঁধার ভেঙে তাদের স্কুলে যেতে হয়েছে।

এ বছরও এপ্রিলের প্রথম দিনে ঘড়ির কাঁটা এক ঘন্টা এগিয়ে আনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পত্রপত্রিকায় জাফর ইকবাল স্যারের কয়েকটি কলাম পড়ে সরকারের ভাবোদয় হয়। মন্ত্রীপরিষদ ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত বাতিল করে। জাফর ইকবাল স্যারের এ ক্ষমতা বিশাল একটি ব্যাপার। তাঁর এ ক্ষমতাও আমাকে বিমোহিত করে।

জাফর ইকবাল স্যারের মত কয়েকজন প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের সহযোগিতায় প্রতিবছরই দেশের প্রায় সব জায়গাতেই গণিত অলিম্পিয়াড, ভাষা প্রতিযোগিতার মত অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানগুলো সফল করার জন্য জাফর ইকবাল স্যারের পেরেশানি আমি কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারি। গত কয়েক বছর ধরে এ অনুষ্ঠানগুলো আমাদের তরুণ প্রজন্মের মেধা ও মননের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু কয়েক বছর আগে গণিত অলিম্পিয়াডে জাফর ইকবাল স্যারের একটি আচরণ আমাকে খুব পীড়া দেয়। আমি তখন ক্যাডেট কলেজে পড়ি।

আমার কিছু বন্ধুরা কলেজের পক্ষ থেকে গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে যায়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাফর ইকবাল স্যার। আমার এক বন্ধু স্যারের খুব ভক্ত ছিল। তার খুব ইচ্ছা ছিল স্যারকে সরাসরি কিছু প্রশ্ন করবে। এ কারণে প্রশ্নোত্তর পর্বের সময় সে অনেকক্ষণ হাত তুলে বষে ছিল।

কিনাতু স্যঅন তার প্রশ্ন শুনেননি। পরে আমার সে বন্ধুটি কাগজে লিখে প্রশ্ন করেছিল। কিন্তু তিঁনি কাগজে লেখা সব প্রশ্নের জবাব দিলেও আমার বন্ধুটির প্রশ্নের জবাব দেননি। পরে জেনেছি আমার বন্ধুর অপরাধ ছিল সে ক্যাডেট কলেজের ছাত্র। স্যার নাকি আবার ক্যাডেট কলেজের ছাত্র পছন্দ করেন না।

কিন্তু যাকে পছন্দ করিনা তার প্রশ্নের উত্তর দেয়া কি নাজায়েয ???? জাফর ইকবাল স্যার আমাদের তরুণ প্রজন্মের প্রতি গভীর মমতা পোষণ করেন। নতুন প্রজন্মকে নিয়ে তিনি অনেক স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু যাদের নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেন, তাদের সাথে আমি যখন কথা বলি, সমাজ-স্বদেশ-স্বাধীনতা নিয়ে আমার চিন্তাগুলো যখন তাদের সাথে ভাগ করি, তখন আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কারণ এ তরুণ প্রজন্ম নিজেদের djuice generation বলে পরিচয় দেয়। তাদের চিন্তার বিষয়গুলো হল আড্ডা, বন্ধু, গান আর হারিয়ে যাওয়া তরুণদের আড্ডায় সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে অনেক সৃজনশীল ভাবনা উঠে আসে।

যার প্রমাণ আমরা ৫২, ৬৯, ৭১, ৯০ সহ অনেকবার পেয়েছি। কিন্তু বর্তমান সময়ে তরুণদের আড্ডা জুড়ে থাকে নারী ,প্রেম, গার্লফ্রেন্ড, পরকীয়া, ব্লুফিল্ম, লিভটুগেদার, হিন্দি সিরিয়াল কিংবা হাল আমলের ফ্যাশনের গল্প। আর এই গল্পগুলো করতে করতে তারা হারিয়ে যায় জাঁকজমকপূর্ণ পাশ্চাত্যের আভিজাত্যে। অথচ ক্ষুধা-দারিদ্র্যে দু’বেলা দু’মুঠো পেট পুরে খেতে পায়না আমাদের দেশের মানুষ, আইলা-সিডর দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই, চোখ রাঙিয়ে আমাদের সম্পদ কেড়ে নেয় প্রাতবেশী বড় ভাই, আমাদের সমুদ্রসীমা নিয়ে টানাটানি চলে, দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের গার্মেন্টস্-এর দিদিমণিরা মাস শেষে মাইনে পায় মাত্র ৬০০-৯০০ টাকা, আমাদের শিশুরাও রক্ষা পায়না লম্পট ধর্ষকের লোলুপ দৃষ্টি থেকে। এমনকি আমাদের যুদ্ধাহত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের ভিক্ষে করে জীবন চালাতে হয়।

অথচ আমাদের তরুণরা ক্যাটস আই কিংবা এক্সটেসি’র শার্ট আর বেলবটম জিন্স পরে, প্লেবয়ের সুরভি ছড়িয়ে, ম্যাকডোনাল্ডসের হ্যামবার্গার ও পেপসির ক্যান হাতে নিয়ে, তাদের মেয়েবন্ধুদের কাঁধে হাত রেখে পুজিঁর জৌলুসে ভবিষ্যত্ এর স্বপ্ন আঁকে। এদের নিয়ে জাফর ইকবাল স্যার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু কিভাবে? আমি অনেকবার কল্পনা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বুঝতে পারিনি। জাতি হিসেবে আমরা খুব উত্সবপ্রিয়।

তাই বছরের বিশেষ দিনগুলোতে আমরা অনেক অনুষ্ঠান আয়োজন করি। সেসব অনুষ্ঠানে জাফর ইকবাল স্যাররা আমন্ত্রিত হন। আমাদের তরুণসমাজও সেদিনগুলোতে দেশীয় সাজে সেজে, হাতে-মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে, গানে ও স্লোগানে দেশপ্রেম জাহির করে। এসব দেখে স্যার হয়ত ছেলেমানুষী আনন্দ ও অহংকার অনুভব করেন। এই আনন্দ ও অহংকারই বোধহয় তাকে তরুণ প্রজন্ম নিয়ে স্বপ্ন দেখার সাহস যোগায়।

কিন্তু আমি যখন এদেরকেই বছরের অন্য দিনগুলোতে চাঁদাবাজি করতে দেখি, সাধারণ ছাত্রদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করতে দেখি, নিজেরা পরস্পর দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে অস্ত্রবাজি করতে দেখি, এদের দ্বারা রোগীর সাথে আসা দর্শনার্থীকে ধর্ষন করার কথা শুনি, তখন আমার খুব ভয় হয়। এই প্রজন্ম স্বপ্ন দেখা তো দূরে থাক- স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবে তো???? এই বছর স্বাধীনতা দিবসে জাফর ইকবাল স্যার চমত্কার একটি কলাম লিখেছেন। এই কলামে তিনি তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করতে চেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি স্যারের আবেগ, ভালোবাসা সত্যিই প্রেরণাদায়ক। কলামের এক জায়গায় স্যার লিখেছেন, ছাত্রশিবিরের ছেলেদের প্রতি তিনি নাকি একধরনের করুণা অনুভব করেন।

তাঁর মতে ছাত্রশিবিরের সদস্যরা হর এ দেশের সবচেয়ে দুর্ভাগা শ্রেণী। কারণ তারা নাকি গান গায়না, কবিতা আবৃত্তি করেনা, নাটক করেনা, কনসার্ট করেনা, এমনকি প্রেমও করেনা। সবচেয়ে বড় কথা তারা নাকি দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেনা, দেশকে ভালোবাসেনা। আমার কিছু বন্ধু আছে যারা ছাত্রশিবিরের সদস্য। সংখ্যায় হয়ত তারা কম, কিন্তু তাদের চিন্তা-ভাবনা অনেক বেশি পরিণত।

তারা দেশকে অনেক বেশি ভালোবাশে, দেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখে, দেশের জন্য চিন্তা করে। তারাও নাটক করে, কবিতা আবৃত্তি করে, গান গায়, তর্ক-বিতর্ক করে। এমনকি তারা প্রেমও করে। তবে তাদের প্রেম কোন নীলচোখের প্রিয়তমার জন্য নয়। বরং দেশমাতৃকার জন্য- মানবতার প্রেম।

আমি যখন তাদের সাথে কথা বলি, তখন জাফর ইকবাল স্যারকে আমার খুব দুর্ভাগা মনে হয়। কেননা তিঁনি নাকি ছাত্রশিবিরের কোন সদস্যকেই চিনেননা। আমার কাছে মনে হয়, এতে তিঁনি একদল নিষ্পাপ, প্রগতিশীল, দেশপ্রেমিক, স্বপ্নবাজ তরুণের সৃজনশীল চিন্তা ও গবেষণা থেকে বঞ্চিত। এদের বাদ দিয়ে তিঁনি এমন একদল তরুণদের নিয়ে দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছেন যাদের স্বপ্নগুলোও পুঁজির পণ্যে পরিণত। আরেকটি কারণে জাফর ইকবাল স্যারের প্রতি আমি একধরনের করুণা অনুভব করি।

আমাদের দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। তারা সবাই প্রাণ দিয়ে ইসলামকে ভালোবাসে। ইসলামপ্রিয় এ মানুষগুলো বিশ্বাস করে স্রষ্টার উপর বিশ্বাস থাকলেই একদিন না একদিন জান্নাতে যাওয়া যাবে। কিন্তু স্রষ্টার অস্তিত্বে অবিশ্বাসী হলে চিরস্থায়ী আবাস জাহান্নাম। লোকমুখে শুনেছি, আমাদের শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যার নাকি স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করেননা।

কিন্তু যদি সত্যি সত্যি স্রষ্টা বলে কেউ থেকে থাকেন, জান্নাত-জাহান্নামও থাকে, তখন স্যারের কি অবস্থা হবে???? স্বাধীনতার এ মাসে আমাদের সবারই ভবিষ্যত্ নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছা করে, স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছা করে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, স্বাধীনতার চেতনা জাতীয় ঐক্যের, বিভক্তির নয়। তাই আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। [ লেখাটি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত। সূত্র উপরে লিংক দেওয়া হয়েছে।

]

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.