ছুডু বেলায় পড়ালিহা কিছু না পারলেও বিলাই আছিল ডাকপিয়নগিরিতে চরম এক্সপার্ট। হুনেন কাহিনী, আমার বয়স তখন চার হইব। ছুডু বেলার একটা বদভ্যাস হইল, কেও আমারে যদি ভূলেও ছুম্মা দিছে আমি কাইন্দা সাগর বানাই ফেলছি। এখন বড় হইছি কেও আর ছুম্মা দিতে আহে না আপচুচ অতি আপচুচ ( বড়বেলা মাইয়াদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)।
আমার এক পছন্দের বড় ভাই আছিল নাম সুমন।
তিনি আমারে প্রচন্ডই স্নেহ করিতেন। আর কেও না বুঝলেও উনি বুঝতেন যে এই বাচ্চারে ছুম্মা দেয়া ঠিক হবে না কান্না করিবে। এই সুমন ভাইরই প্রেমিকা আছিল আবার পাশের বাড়ির সামিন আপা (তখন প্রেম জিনিসটা কি বুঝতাম না, এইটা আরেকটা আপচুচ এর বিষয়)।
একদিন আমারে কোলে কইরা সুমন ভাই অনেক ঘুরল। মজা কিন্না দিল।
মজা পাইয়া আমার খুশি কিডা দেহে। খুশিতে বার বার দাত কিলাইতাছি। তারপর ঘুরতে ঘুরতে সামিন আপার বাড়ির সামনে আইস্যা আমারে কোল থিক্কা নামাই দিল ঃ-(
নামাই দিয়াই পকেট থিক্কা একটা কাগজ বাইর কইরা কইল যা এইটা সামিনকে দিয়া আয়। কাওরে কইবি না কইলাম, তোরে ডেইলি মজাক কিন্না খাওয়ামু। এইটা কুনু ব্যাপার হইল? একটা কাগজ দিয়া আসুম তার জন্যে গিফট হিসাবে এত্ত মজা কিন্না দিব খুশিতে মন খালি লাফাইতাছে।
কাগজ লুকাইয়া লইয়া গেছি সামিন আপার কাছে উনি কাগজ পাইয়া খুশিতে লাতুপুতু খাইতেছেন। বুঝলাম না কাগজ পাইয়া এত খুশি হওয়ার কি আছে। একটু পরেই খুশিতে আমিও লাতুপুতু খাইতে থাকিলাম যখন সামিন আপা তার ব্যাগ থিক্কা ১০টাকা বাইর কইরা দিল মজাক কিন্না খাওয়ার লাগি। কথা ছিল একটাই, কাওরে যাতে না কই। ১০টাকা পাইয়া নিজেরে তখন বিলগেটস মনে হইতেছিল।
ক্ষুদ্র স্বার্থের বিনিময়ে তারা বড় স্বার্থ ত্যাগ করিতেছে তাই তাদের জন্যে আমার ক্ষুদ্র উদার মন দু:খে দু:খিত হইল। মনে মনে শপথ নিল যে এই কথা কাওকে বলিবে না।
মাঝখানে অনেকদিন কাইটা গেল তাদের কুনু খবর নাই। মনে মনে ভাবতাছিলাম। মজা কি পাওয়া আর হইল না? সুমন ভাই কইছিল আরো মজাক কিন্না খাওয়াইবো।
এই প্রশ্ন জিগাইতে চলিলাম সুমন ভাইর ঘরের দিকে। গিয়া দেখি অতি ভয়ানক কান্ড ঘটিতেছে। সুমন ভাই সামিন আপাকে ছুম্মা দিতাছে। আমি গেলে আমারেও ছুম্মা দিতে পারে সেই ডরে আমি দূর থিক্কা দেইখ্যাই চইলা আইছি। তয় মাথার মধ্যে কইলাম এক্ষান প্রশ্ন ঘুরতেই লাগল: আমি ছুম্মা দিলে কান্দি, সামিন আপা কান্দে নাই ক্যান? এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে ঘুরতে ঘুরতে গেলাম সামিন আপার মার কাছে।
গিয়া কইলাম চাচী দেখেন না সুমন ভাই সামিন আপারে ছুম্মা দিতাছে কিন্তু হেয় কান্দে না। তারপর চাচী যা করল হেইডার লাইগ্যা মোটেও প্রস্তুত আছিলাম না, বটি লইয়া দিল দৌড়।
তার পরের কাহিনী খুবই অল্প। বাংলা ফিলিমের লাহান সামিন আপাকে বন্দি কইরা রাখল আর নায়ক সুমন ছ্যাকার গন্ধে বেহুশ হইয়া রুমে পইরা থাকত।
তয় প্রেম করা খুবই কষ্টকর।
তখন না বুজলেও এখন বুঝি। আহারে এই প্রেমের জন্যে কত কষ্টই না করলা তুমি সুমন ভাই। আমার মত মটকা বাচ্চারে তুমি কোলে লইয়া ক্যামনে ঘুরলা? আর আমারে কাগজের কথা মানা করছিলা, ছুম্মার ব্যাপারে ত কিছু কও নাই ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।