আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো

"কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরিয়া গেছে.। "

অতি বেশী জ্ঞান কখনো কখনো মানুষের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। জ্ঞানের ভার সইতে না পেরে অপ্রকৃতিস্থ কিংবা বদ্ধ উম্মাদ হয়ে যাওয়ার বহু ঘটনা চোখে পড়ে। "বশর মিয়া "পোশাক আশাকে কেতাদূরস্ত ভদ্রলোক। ডেইলি অভজারবার বগলদাবা করে নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে কলেজ অধ্যক্ষের অফিস সর্বত্র ছুটে বেড়ানো এই প্রৌঢ় ভদ্রলোক কোন এক স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

অনর্গল শুদ্ধ ইংরেজী ভাষায় কথা বলেন। সকাল বেলা নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা দাবি করে বসেন তো বিকেল বেলা দেখা যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপরে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। কারণ উনার মস্তিস্ক বিকৃত হয়েছে। জনশ্রুতি আছে অতি বেশি জ্ঞানই উনার মস্তিস্ক বিকৃতির অন্যতম কারণ.. বিডিআর বিদ্রোহের পর সেনাবাহিনী ও প্রাধানমন্ত্রীর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের অডিও ভার্সন নিরাপত্তার ফাঁক গলে অন্তর্জালিয় কারিশমায় বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে। তৎক্ষনাৎ সরকার বাংলাদেশে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবসহ কয়েকটি সাইট বন্ধ করে দেয়।

উদ্দেশ্য একটাই উক্ত অডিওটির প্রচার রহিত করা। বিটিআরসির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়া আহমেদ -এর মতে "রাষ্ট্রীয় সংহতি ও জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করে এমন কিছু প্রচার করা যাবে না। ২৫-২৬ মার্চ বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার পর প্রধারমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ১ মার্চ ক্যান্টনমেন্টে সেনা কর্মকর্তাদের বৈঠকের অডিও রেকর্ড এ দুটি সাইটে দেবার পরপরই সাইট দুটি ব্লক করে দেওয়া হলো। " বিটিআরসি'র চেয়ারম্যান সাহেব এবং তথ্য মন্ত্রনালয়ের কর্তাব্যক্তিরা গাঁজায় আসক্ত এমন কথা বলা যাবেনা। তাহলে এমন গাঁজাখোরি সিদ্ধান্তটা নিল কি করে?তাহলে কি এইসব মহাজ্ঞানী ব্যক্তিরা জ্ঞানের ভারে বশর সাহেবের মত অপ্রকৃতস্থ হয়ে গেছেন?নাকি আদতে এদের সত্যিকারের কোন জ্ঞান নেই? নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কি সব কিছু শেষ করা যায়?এই প্রসঙ্গে তাসলিমা নাসরীনের নিষিদ্ধ ঘোষিত ব্ই গুলোর কথা মনে পড়ে যায়।

নিষিদ্ধ করে কি উক্ত বই গুলোর প্রচার ও প্রকাশনা ঠেকানো গিয়েছিল?বরং বই গুলোর পাঠক আরো বেড়ে গিয়েছিল। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষন মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। যা কিছুর গায়ে নিষিদ্ধের তকমা লাগে তা কিছুই মানুষের মনে গোপন রোমান্টিসিজমের জন্ম দেয়। ফলে মানুষ নিষিদ্ধ জিনিসটির প্রতি আরো বেশী ঝুঁকে পড়ে। বাংলাদেশ সরকারের ইউটিউব নিষিদ্ধ ঘোষনা করার ক্ষেত্রেও একি ঘটনা ঘটছে বা ঘটবে।

ইতিমধ্যে সবার মুখে মুখে রটে গেছে ইউটিউব নিষিদ্ধ হয়েছে। সবার মনে তাৎক্ষনিক প্রশ্ন কেন নিষিদ্ধ হল?উত্তরে যখন জানতে পারে সেনাবাহিনীর সাথে প্রধানমন্ত্রীর কনফিডেনসিয়াল কথাবার্তা ইউটিউবের মাধ্যমে নেটে আপলোড করা হয়েছে তাই নিষিদ্ধের ঘোষনা তখনই মানুষের মনে তা শুনার আগ্রহ তীব্র হয়ে উঠেছে। সে যেভাবেই হোক তা শুনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং সফল হচ্ছে। নিজের বাসায় নেট না থাকলে বন্ধু কিংবা আত্মীয়ের বাসায় ছুটে যাচ্ছে মানুষ। এখন কথা হল সাইট তো ব্লক কি করে দেখবে? কতখানি বোকার স্বর্গে বাস করেন আমাদের কর্তা ব্যক্তিরা? একটি সাইট ব্লক করে দিলেই কি সব শেষ হয়ে যায়? বাংলার আম জনতাকে না হয় উনারা বোকা ভাবেন তাই বলে ইন্টারনেটের জগতে পিপিলীকার মত ঘুরে বেড়ানো মানুষগুলোও কি বোকা?একটা সাইট বন্ধ হয়ে গেলে তা দেখার কোন উপায় কি তাদের জানা নেই? প্রযুক্তি কি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মত এক জায়গায় থেমে আছে? বাস্তবতা হল ইতিমধ্যে বিকল্প উপায়ের ব্যবহারও শুরু হয়ে গেছে এবং মানুষ ইউটিউব দেখছে এবং দেখবে।

তাহলে ফলাফল কি দাঁড়ালো?এক কথায় বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো। কাজের কাজ কিছু হয়নি। যে অডিও প্রচার বন্ধ করার জন্য এমন সিদ্ধান্ত সে অডিও আরো হিট হয়ে গেল। স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুন বেশি বেগে প্রচারিত হল। যে লোকের শোনার কথা না সেও আগ্রহ নিয়ে শুনলো বা শুনবে।

শুধুই নষ্ট হল সরকারের ইমেজ। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় আর গনতান্ত্রিক ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হল জনগনের কাছে....

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.