আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আর্জেন্টিনার সাপোর্ট কইরা কাঁদতে কাঁদতে জীবন গেল.....একটি আফসুস পোস্ট!

অকাট মূর্খ যাকে বলে আমি তাই। সুতরাং জ্ঞানীরা বেশি জ্ঞান দিলে আমি চাইয়া চাইয়া দেখা ছাড়া কিচ্ছু করতে পারিনা। পোড়া কপাল!!
সামনে আসছে ফুটবল বিশ্বকাপ। আমার এ ক্ষুদ্র জীবনে আমার মাত্র তিনটা বিশ্বকাপ দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আর একটা দেখার সৌভাগ্য বোধহয় হতে যাচ্ছে।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, তিনটা বিশ্বকাপের কোনটারই স্মৃতি আমার জন্যে সুখকর নয়। কারন আর কিছুনা। কারন হচ্ছে আমি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। আর্জেন্টিনা আর ম্যারাডোনার গল্প শুনতাম আমার বাবার কাছ থেকে। তখন খেলা বুঝতাম না।

ক্লাস টু'তে পরি। অজ পাড়াগাঁয়ে থাকি, বিশ্বকাপ কী জিনিস তা বোঝার কথাও না। কিন্তু বাবার কাছে গল্প শুনে মনে হত ম্যারাডোনা না জানি কি একটা!! দেবতা টেবতাও হতে পারে। ১৯৯৪ সালে বাবা বাড়িতে পেপারের একটা পেজ নিয়ে গেলেন। ওই পেজে '৯৪ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা সব কয়টি দেশের স্কোয়াডের ছবি ছিল।

পেজটি দেয়ালে টানিয়ে আমাকে ডেকে এনে পিচ্চি একটা লোকের ছবির দিক ইঙ্গিত করে বললেন এই দেখ, এইটা ম্যারাডোনা। সত্যি, আমার প্রথম কথা ছিল "এতটুকু লোকটা ম্যারাডোনা?" তখন থেকেই শুরু। ওই বিশ্বকাপেই ম্যারাডোনা নিষিদ্ধ হলেন। আমি অবশ্য ওই বিশ্বকাপটা দেখিনি। কিন্তু বাবার কাছে শুনে বুঝেছিলাম ম্যারাডোনা নিষিদ্ধ না হলে সেবারেও একটা চান্স ছিল আর্জেন্টিনার।

খেলা দেখার আগ থেকেই আমি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। প্রথম বিশ্বকাপ দেখি '৯৮ এ। ক্লাস সিক্স এ পড়ি। খুব একটা খেলা না বুঝলেও বুঝেছিলাম যে আমার আর্জেন্টিনা নামের দলটা ভালো খেলে বাদ পড়েছে। কিন্তু অনুভুতি ততটা স্পর্শ করেনি।

২০০২'এ তো স্কুল পালিয়ে খেলা দেখতাম। আর্জেন্টিনা যেদিন বাদ পড়ে ওই দিনও স্কুল পালিয়ে এসেছিলাম। হেরে যখন বাতিস্তুতারা মাঠের মধ্যে শুয়ে পড়ে কাঁদছিল, নিজেকে সামলিয়ে রাখতে তখন খুব সংগ্রাম করতে হয়েছিল। সর্বশেষ ২০০৬ এ খেলার প্রথম দিকে বাড়িতে ছিলাম। আমার বাবা আর্জেন্টিনার খেলার সময় আমার উত্তেজনা দেখে বলত, 'এটা তো খেলাই, নাকি? এত উত্তেজিত হস ক্যান? এরকম উত্তেজিত হলে তো তোর হার্ট এ্যাটাক হবে!' কিন্তু কে রাখে আমার উত্তেজনা দমিয়ে রাখতে!!অবশেষে কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির সাথে খেলার সময়ে মেসে ছিলাম।

সবাই খেলা দেখতে টি.এস.সি. তে গেছিল। আমি অসুস্থ থাকায় রুমের ছোট টি.ভি.টাতেই একা একা খেলা দেখছিলাম। আর্জেন্টিনা হারার সাথে সাথেই আমার বাবার ফোন, "খেলা দেখছিস?" আমি কই "হুমম দেখছি"। তখন বাবা কয় "হারা-জেতা খেলারই অংশ। এগুলো ব্যাপার না...ইত্যাদি ইত্যাদি"।

আমারে বুঝায় আর কি! যদি উত্তেজনার বশে কিছু করে ফেলি!! আমি অবশ্য শুধু আয়ালাদের ছবি সিগারেটের আগুন দিয়ে পুড়িয়েই ক্ষান্ত দিয়েছিলাম। তবে সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হচ্ছে আমার ছোট ভাই। ওইডারে আমি সব কিছু শিখাইতে পারলেও আর্জেন্টিনার সাপোর্ট করা শিখাইতে পারিনাই। ওইটা খাস ব্রাজিলের সাপোর্টার। কত বুঝাইলাম, কিছুতেই কিছু হয়না।

বাসায় আর তিনটা মানুষ আর্জেন্টিনার সাপোর্টার, আর ও একাই ব্রাজিলের!!আর্জেন্টিনা হারার পর অবশ্য সেও ফোন দিয়েছিল। ফোন দিয়া কয়......"হারছে, হারছে......আর্জেন্টিনা হারছে। খুশি হইছি"। আর আমি মনে মনে কই " তোরে খালি যদি হাতের কাছে পাইতাম একবার!!!" কোন একটা পত্রিকায় পড়েছিলাম, "ম্যারাডোনা '৮৬ এ ইংল্যান্ডের সাথে যে খেলা খেলেছে, ওই একটা ম্যাচের জন্যেই '৮৬ সালের আগের এবং পরের ১০০ বছর ম্যারাডোনার বা আর্জেন্টিনার সাপোর্ট করে কাঁদলেও শান্তি!!" সেই কানতে কানতেই এতদুর আসা.........এবারও কি তারই পুনরাবৃত্তি হবে? যেহেতু '৮৬ তে জন্মই হয়নাই, সুতরাং এখন কিছু একটা দেখাইয়া তারপর আমাদের কাঁদা। এরকম খালি খালি কষ্ট পেতে আর ভাল্লাগেনা!!
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.