(ল্যুভেন - লা - ন্যুউভ , বেলজিয়াম থেকে আমার অনুরোধে এই লেখাটা লিখেছেন আমার আপা নীলাঞ্জনা নীলা। আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ। তার মনটা আকাশের মতোই বিশাল। আচ্ছা একজন মানুষ এতো ভালো হয় কি করে?)
হিমিকে নিয়ে রাজীবের অনেক স্বপ্ন । এতো ভালোবাসা এই ডিজিটাল যুগে খুব কমই দেখা যায় ।
রূপকথার রাজ্যে নিজেদের নিয়ে এমন করে বাস করা এ শুধু সম্ভব রাজীব আর হিমির দ্বারা । মাঝ রাত্রে একদিন কি মাথায় চাপলো বেড়িয়ে পড়লো হিমিকে দেখার জন্য । কিন্তু এ তো আমার পরিচালকের উপর নির্ভর করা সিনেমা বা নাটকের কাহিনী নয় । গেটের কাছে সিকিউরিটি , বাইরে বোর্ডে টানানো "কুকুর থেকে সাবধান । " একদিন হিমি বলেছিলো তাদের কুকুরটা খুবই ভয়ঙ্কর ।
অপরিচিত কাউকে দেখলে কামড়ে ছিঁড়ে ফেলে । রাজ়ীব জানতে চাইলো তবে বেঁধে রাখে না কেন ? হিমির মতে বাবার হুকুম । তবু চাইলো একবার গেইটের উপরে উঠতে , শুধু শব্দ শুনেই কুকুরের তো তারস্বরে চিৎকার । পড়ি কি মরি করে দৌঁড় । ওই রকম অবস্থায় একমাত্র নায়ক ছাড়া সবাই পা পিছিয়ে নেয় ।
যদিও ব্যক্তি জীবনে সবাই নায়ক কিংবা নায়িকা , কিন্তু সবার তো আর স্ট্যান্টম্যান থাকে না । পরের দিন হিমিকে একথা জানানোর পর হিমি তো হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছিলো । তা এমন পাগলামী না করলেই কি নয় ? প্রতিদিন তো দেখাই হচ্ছে , তারপরও কেন এমন করো বলো তো ? তোমায় নিয়ে আর পারা গেলো না । পুরুষ মানুষ কে এমন প্রতিক্ষা সাজে না রাজ । রাজীব বলেই ফেললো তার মানে তুমি আমার জন্য প্রতিক্ষা করো না ? করবো না কেন , তবে তোমার মতো এমন পাগলামী করি না ।
কিভাবে যে তোমায় নিয়ে ঘর বাঁধবো , চিন্তা করছি । রাজীব রেগে তো আগুণ । ঠিক আছে আমি চললাম , এতো চিন্তা আর করতে হবে না তোমাকে । আর পেছনের দিকে না ফিরে সামনে হাঁটা শুরু করলো । হিমি পেছন থেকে ডাকছে এই রাজ যেও না , শোনো ।
রাজীব কি আর তাকায় ? এখন ভাবছে এমনটি আসলেই তার করা উচিৎ হয়নি । তারপর থেকেই তো হিমি কে আর দেখাই যাচ্ছে না । তবুও ভর দুপুর মাথায় করে পুরোটা কলা ভবন চক্কর দেয় । প্রতিটি চত্ত্বরে একটু করে থামে আবার চলা শুরু করে । হিমি কেন যে রাগ করলো আর আসছে না ।
এমনকি ফোন তাও রেখেছে বন্ধ করে । খুব কষ্ট হচ্ছে , বুকের ভেতর খামছে ধরছে শকুনী ঠোঁট ।
হিমি কে নিয়ে প্রচুর কবিতা লিখেছে রাজীব । আর সেগুলো এতোটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে অনেক মেয়েরাই নিজেকে হিমির মতো সাজায় । রাজীবের প্রিয় রঙ নীল ।
অবশ্য সব ছেলেরাই নীল রঙ পছন্দ করে । কিন্তু নিজেরা নীল বলতে গেলে পড়েই না । রাজীব তার কবিতায় হিমি কে নীল শাড়ীতে সাজিয়ে বৃষ্টিতে ভেঁজায় , সবুজ গ্রামের মেঠো পথ ধরিয়ে হলুদ ধানের শীষের ঘ্রাণ নেয় । হিমির হাত এতো নরম , কোমল মনে হয় একটু জোরে ধরলে যেনো গলে যাবে । খুব আলতো করে ধরে রাজীব ।
একদিন হিমি কে বলেছিলো তোমায় রাত্রির শিশিরে জ্যোৎস্না দেখাবো । সেটা আবার কেমন জানতে চাইলে রাজীব বললো দেখলে বুঝবে । হিমি বলেছিলো আগে তো স্টুডেন্ট লাইফ শেষ হোক , তারপর জব , এরপর না শিশিরের জ্যোৎস্না । তাও যে পাগলামী করছো , আদৌ স্বপ্ন সফল হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত আমি । কেন কেন ? হিমি তুমি কি আমায় ভালোবাসো না ? অনেক ভালোবাসে হিমি এতো ভালোবাসা আর কেউ কোনোদিন পাবে না ।
সেটা রাজীব ভালো করেই জানে । তা নইলে ওর এতো পাগলামী কিভাবে সহ্য করে ? সবাই বলে কি পেলি রে হিমি রাজীবের মাঝে ? ও তোর যোগ্য না । প্রিয় বান্ধবী অনির সাথে পর্যন্ত মুখ দেখাদেখি বন্ধ । শুধু রাজীব কে পাগল বলেছিল বলে । তবু রাজীব বোঝেনা ।
এমন কেন করে ?
কুয়াশা ভেঁজা জ্যোৎস্নায় নীল আকাশ নুয়ে পড়ে তোমার শাড়ীতে
কপালের মাঝের নীল টিপ
তারাও লজ্জ্বা পায় , লুকিয়ে ফেলে মুখ
এসো আমি তোমায় শিশিরের গান শোনাই
হিমি তোমার হিমে আমায় টেনে নাও
আচ্ছন্ন করো চোখের নীলে
দুপুরের উত্তাপ শুঁষে নিয়ে
এবার চলো গোধুলীর দিকে
রক্তিম রোদ্দুর খেলা করবে তোমার নীলে
সেই রাতে স্বপ্ন দেখলো হিমি কে নিয়ে রাস্তায় হাঁটছে রাজীব । ব্যস্ত ঢাকা শহরে আজ এই পথ অনেক শান্ত । হিমি বললো কি ব্যপার এতো শান্ত কেন , কোনো গন্ডগোল হলো নাকি রাজ ? আমার ভয় করছে চলো ফিরে যাই । আলতো করে হাত ধরলো রাজীব ভয় নেই হিমি আমি আছি না ? ধানমন্ডি লেকের পার ধরে আজ আর কোনো প্রেমিক জুটি নেই । আহ্ কি শান্তি ! হিমি চলো আজ নাচবো আর গাইবো , কেউ দেখবে না ।
কেউ আমায় পাগলও বলবে না । হিমি লজ্জ্বায় মুখ নামিয়ে নিলো । এই প্রথম রাজীব হিমি কে লজ্জ্বায় লাল হতে দেখে হেসে ফেললো । এই হিমি কি হলো ? আচ্ছা নাচবো না , কিন্তু তোমায় গাইতেই হবে । আজ অনেক গান শুনবো তোমার ।
কি হলো গাইবে তো ? হিমি ছোট্ট করে হু বললো ।
ভালোবাসি ভালোবাসি
এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশী
ভালোবাসি ভালোবাসি
আকাশে কার বুকের মাঝে ব্যথা বাজে দিগন্তে কার কালো আঁখি
আঁখির জলে যায় ভাসি
ভালোবাসি ভালোবাসি
সেই সুরে সাগরকূলে বাঁধন খুলে অতল রোদন উঠে দুলে
সেই সুরে বাজে মনে অকারণে ভুলে যাওয়া গানের বাণী
ভোলা দিনের কাঁদন হাসি
ভালোবাসি ভালোবাসি । ।
এই হিমি রবীন্দ্রনাথ কে খুব হিংসে হয় আমার , সব সুন্দর , প্রেম সে নিয়ে গেছে । আমার কবিতায় তোমার সুর লাগেনা তাই ।
এই আমার কবিতায় সুর দেবে ?
হিমি চলে যাও যখন
বড়ো একা , নিঃসঙ্গ বৃক্ষের মতো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে
প্রতিবাদহীন এক যুবক
পথে পথে কতো আলো ঝলমল করে
অন্ধকার শুধু অন্ধকার ছেয়ে থাকে আমার ডালপালায়
আবার প্রতীক্ষা শুরু হয়
ভোরের , দুপুরের , বিকেল , সন্ধ্যার
তুমি যে কি এটায় কি সুর দেয়া যায় ! এতো হিংসে করো কেন ? আমি তো তোমায় ভালোবাসি , রবীন্দ্রনাথ কে নয় । চলো উঠি সন্ধ্যা হয়ে গেলো । রাজ কি হলো এই আমি আর থাকতে পারবো না । আবার শুরু করে পথ চলা । হেঁটে হেঁটে আসছে নিশ্চুপ নীরবতায় দুজন ।
হঠাৎ দেখে রাজীব হিমি নেই পাশে । কষ্টে নুয়ে পড়ে , চোখ জলে ভরে উঠে । ঘুম ভেঙ্গে যায় । শীতের রাত অথচ ঘেমে গেছে পুরোটা শরীর । উঠে বসলো রাজীব ।
সকালের আলো ফুঁটতেই বেড়িয়ে পড়লো হিমিদের বাসার উদ্দেশ্যে । গিয়ে সটান দাঁড়ালো খোলা গেইটের কাছে , তারপর হিমিদের বিশাল অট্টালিকার সামনে , কুকুর দৌঁড়ে আসছে রাজ়ীবের দিকে , ভ্রূক্ষেপ না করেই কলিং বেল চাপলো । হিমি আছে ? তাকে বলুন রাজ এসেছে । খুব দরকার , এখুনি ডেকে দিন । তারপর সোফায় গিয়ে বসে রাজীব ।
প্রতিক্ষা করে , অবনত দৃষ্টি নিয়ে হিমি আসে । কি ব্যাপার রাজ ? হঠাৎ এখানে ? আজ তো যেতাম এখন সুস্থ । রাজীব জানতে চাইলো , কি হয়েছিলো তোমার ?
জ্বর ছিলো রাজ ।
তবে ফোন বন্ধ করে রেখেছিলে কেন ?
চার্জার পাচ্ছিনা , বাপি - মামনি দেশের বাইরে , আমি একা বাসায় , কে কিনে দেবে ? তাই ।
ল্যুভেন - লা - ন্যুউভ , বেলজিয়াম
১৬ - ০৩ - ১০ ইং
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।