আমরা জানি একদিন আমরা মরে যাব এই জন্যেই পৃথিবীটাকে এত সুন্দর লাগে। যদি জানতাম আমাদের মৃত্যু নেই তাহলে পৃথিবীটা কখনোই এত সুন্দর লাগতো না বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম অগ্রপথিক শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক। তদানীন্তন পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর যেব অকুতোভয় কর্মকর্তা পাকিস্তানী স্বৈরশান ও পরে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন তথা স্বাধীনতার দাবীতে সোচ্চার হয়েছিলেন সার্জেন্ট জহুরুল হক ছিলেন তাদের অন্যতম।
সার্জেন্ট জহুরুল হক ১৯৩৫ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারী নোয়াখালী জেলার সুধারামপুর থানার সোনাগুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী মজিবুল হক।
এই পরিবারের বহু কৃতি সন্তান জন্ম নিয়েছে। বাংলাদেশের সাবেক এর্টনী জেনারেল আমিনুল হক সার্জেন্ট জহুরের বড় ভাই এবং প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. মজহারুল হক এই পরিবারের কৃতী সন্তান।
সার্জেন্ট জহুর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন, সে সময় তিনি কোহাটে থাকতেন। ১৯৬৫-৬৮ সালে তিনি ট্রেনিং ইন্সষ্ট্রাকটার হিসেবে করাচীতে অবস্থান করতেন। ১৯৬৮ সালের ২৬শে জানুয়ারী বিমান বাহিনীতে বারো বছর চাকুরী শেষে তিনি অবসর গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ২২শে জানুয়ারী তারিখে তাকে গ্রেফতার ও তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী করে গোপন বিচারে সোপর্দ করা হয়।
জহুরুল হক ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও নির্ভীক। খেলাধূলায় ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী। ততকালীন পাকিস্তানে তিনি একাধারে বেশ কয়েক বছর বিমান বাহিনীর সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তিনি ছবি আঁকাতে ভালবাসতেন। তাঁর যে ছবিটি সবচেয়ে পরিচিত সেটি তাঁর নিবেরই আঁকা।
এছাড়াও তিনি নানা রকম হাতের কাজে পারদর্শী ছিলেন। তিনি কাঠ খোদাই করে নানা রকম শিল্পকর্ম করতেন। কাঠের ছোট ছোট টুকরো সংযুক্ত করে ছবি আকতেন। জাতীয় যাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ জাতিঘরে তার স্বহস্তে নির্মিত বেশ কিছু শিল্পকর্ম নিদর্শন রক্ষিত আছে।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তরুপে ঢাকা ক্যান্টমেন্টে বন্দী অবস্থায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী গুলি এবং উপর্যুপরি বেয়োনেটের আঘাতে ১৯৬৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী তারিখে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
সেই সময়ে স্বৈরাচারী আয়ুব খানের কুশাসনের বিরুদ্ধে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল অভিযুক্তের নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে দেশব্যাপী যে গণআন্দোলন চলছিল সার্জেন্ট জহুরুল হকের হত্যাকান্ডে তা অসাধারণ তীব্রতা লাভ করে। বাংলাদেশের মানুষ দেশ-মাতৃকার মুক্তি প্রয়াসী এই বীর যুবককে সেদিন কেবল শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেনি, দেশে স্বায়ত্বশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর নামে শপথ গ্রহণ করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ সেদিনই ইকবাল হলের নাম পরিবর্তন করে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল নাম প্রবর্তন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বিমান বাহিনীর চট্রগ্রাম ঘাটির সার্জেন্ট জহুরুল হকের নামাংকিত হয়।
বাংলাদেশের স্বীধীনতা সংগ্রামে চরম আত্যত্যাগের জন্য তিনি আজও বাংলার মানুষের অন্তরে চিরস্মরণীয হয়ে রয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।