আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডায়েরীর পাতা থেকে



খালাতো ভাই রুহিনের অবস্থা আরো অবনতির দিকে। গত রাতই তাকে ক্লিনিকে নিয়ে আসি। কোন ক্লিনিক বা হাসপাতালে এটাই আমার প্রথম অভিজজ্ঞতা। রাত দশটা- বাসায় শুয়েশুয়ে সমরেশ মজুমদারের "শেশের খুব কাছে" বইটি পড়ছি। এমন সময় রুহিনের অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে পড়ল।

খালা আমাকে ডাকলেন। দু‌তলা থেকে নিচে নেমে ওর মাথায় কিছু সময় পানি দিলাম। খালাকে বেশ নার্ভাস দেখাচ্ছে। বার বার আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন কি করবো? আমি ওকে শান্তনা দিয়ে বললাম রাতটা পোহালেই ওকে আবারো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। কিন্তু উনাকে বুঝাতে পারলাম না।

পাশের পাশের ম্যাচের বিধান ভাইকে ডাকলাম। উনি এসে আমাদের বললেন ওকে ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়াই বেস্ট হবে। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। । আমি, খালা বিধান ভাই এবং খালার এক আত্মীয়(তেরাব আলী ভাই) রুহিনকে নিয়ে ক্লিনিকে গেলাম।

সেখানে ডাক্তার তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ভর্তি করে দিলেন। তারপর তাঁদের যা করণীয় অর্থাৎ নার্স এসে ডাক্তারের পরামর্শ মত স্যালাইন দিল, ৗষধ খাওয়াল এবং কোন অসুবিধা হলে তাকে কল করতে বলে গেল। তখন বিধান ভাই চবাসায় চলে গেলেন। ক্লিনিকে রোগীর পাশে থাকলাম আমি, খালা এবং তেরাব আলী ভাই। রাত বাড়ছে।

শহরের কোলাহল আস্তে আস্তে কমে আসছে। কিন্তু রমজান মাস তো? তাই প্রায় দোকানসহ টেইলার্স এবং রেস্তোরা খোলা। পাশের রুম থেকে একজন রোগীর গোঙানীর শব্দ কানে ভেসে আসছে। রোগীর পাশে জাগ্রত তার ঘনিষ্ঠজনেরা কালেমা শুনাচ্ছেন। খালা আমাকে বললেন এ রোগীর গলার আওয়াজে মনে হচ্ছে যেন উনি খুবই বয়স্ক, রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম।

উনাকে বাসায় নিয়ে যাওয়াই ভাল হবে। আমি বললাম "খালা , উনার ঘনিষ্ঠজনরা ভাবছে উনি হয়তো সুস্তহয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এস তাদের পরিবারের আশির্বাদ হয়ে থাকবেন। " আমার একদম ভাল লাগছে না। মনে হচ্ছে যেন কত দিন যাবত একানে পড়েআছি। ভাবলাম বাসা থেকে যদি উপন্যাসের বইটা নিয়ে আসতাম তবে রাতটা ভালভাবেই কাটতো।

আবার ভাবছি যদি ডায়েরীটা নিয়ে আসতাম তবে রাতের অভিজ্ঞতা লিখে রাখতাম। দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসলাম। নাইট গার্ডটি ছোট্ট একখানা কম্বল গায়ে দিয়ে নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে। পাশের দোকানের দো‌তলার একটা ক্লাবে কয়েকজন ক্যারাম খেলছে। মাঝে মধ্যে দু-একট রিকশা চলছে।

আবার ফিরে এলাম রুমে। রুহিন ঘুমাচ্ছে। জ্বরের মাত্রা কিছুটা কমেছে। পাশে হেলান দিয়ে ঘুমু ঘুমু চোখে খালা। সোফায় ঘুমিয়ে তেরাব আলী ভাই।

সময়তো আর অতিবাহীত হচ্ছেনা । কী করবো? অস্বস্থি বোধ করছি। একটু পর ক্লিনিকের তালাবদ্ধ গেটে কযেকজন যুবক লাথি মেরে গার্ডকে গেট খোলার জন্য বলছে। গার্ডটি তাড়াতাড়ি গেট খোলে দিল। দেখি মটর সাইকেল এক্সিডেন্টেআহত তিনজন যুবককে নিয়ে কয়েকজন এসেছে।

ডাক্তার তাদের চিকিৎসা করছেন। আমি আবার রুমে গেলাম। এভাবে একসময় রাত তিনটা বাজল। অদুরে কোন এক মসজিদ থেকে সাইরেনের আওয়াজ মেঅনা গেল। আমি সেহরী খাওয়ার জন্য তেরাবআলী ভাইকে নিয়ে বের হলাম।

পাশের রেস্তোরা থেকে সেহরী খেয়ে খালার জন্যও সেহরী নিয়ে আসলাম। ফজরের নামাজ পড়ে খালা শুয়ে পড়লেন। এক সময় রাত পোহাল্ রুহিনের স্যালাইনও শেষ হলো। খালা আমাকে একটু ঘুমুতে বললেন। আমি বললাম এরকম পরিবেশে আমি কোন সময় ঘুমাই নি।

বাসায় গিয়ে ঘুমাবো। ডাক্তার আসতে আসতে দুপুর বারোটা বেজে গেল। ডাক্তার এস তাকে পরীক্ষা করলেন। আগের রাতের তুলনায় তাকে অনেকটা সুস্থ দেখাচ্ছে। ডাক্তার চলে যাবার পর আমি বাসায় আসলাম।

গোসল করে কিছু সময় ঘুমানোর জন্য বিছানায় যাচ্ছি। (তাং- ১৯ ফেব্রু: ১৯৯৫খ্রি

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।