অপ্রিয় এবং অবাঞ্ছিত...
হার্টবিট মিস আছে, মাগার ভার্সিটির বাস মিস নাই…!!! কারণ সময়, স্রোত এবং ভার্সিটির বাস কাহারও জন্য ওয়েট করে না। তাই সকাল পৌণে সাতটায় পরীর মা; আমার সবচেয়ে পেয়ারের বান্দুবীর Poke খাইয়া (পড়ুন মিসকল পাইয়া ) উঠে পড়লাম। সাতটা বিশে রওনা দিলাম মেইন রোডের উদ্দেশ্যে। তারপরও শান্তি নাই, শ্রেকের লাহান বডি দুলাইয়া দৌড়াইতে দৌড়াইতে বাসে উঠলাম। মালয়েশিয়া যখন পৌঁছাইলাম, তখন মনে হইল টাই আনি নাই, আমারে তো স্যারে কেলাসই করতে দিব না! মালয়েশিয়া হচ্ছে আব্দুল্লাহপুরের মাছের বাজার, সদা কটু গন্ধ বিতরণ করে! যাই হোক, ফোন দিলাম বন্ধুরে এক্সট্রা টাই আনার জন্য।
সে এনেছিল ঠিকই, কিন্তু তার মনে পরে গেল সে ভুলে পেনড্রাইভ রেখে এসেছে বাসায়। রিকশায় উঠলাম দুজন। যাইতে যাইতে দেখি, ভার্সিটির এক সিনিয়র লুল ভাই আরেক সিনিয়র লুল আফুরে লইয়া রিকশায় কইরা দাঁত কেলাইয়া একে অপরকে চিমটাইতে চিমটাইতে ভার্সিটির দিকে যাচ্ছে! কুন জায়গায় চিমটাইতেছে না-ই কইলাম!!
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ভাবতে ভালোই লাগে।
প্রথম ক্লাসের পর মিনিট বিশেক ছিল হাতে। প্রেমকাননে যাইয়া বইলাম।
পাশেই সিনিয়র-জুনিয়র পুলাপান-মাইয়াপান আড্ডা চলছে। সিনিয়র পুলাগুলা চাকরি-বাকরি নিয়া হা-হূতাশ করতেছে, এমন সময় এক মাইয়া কইল, ‘ভাইয়া, চিন্তা কইরেন না, আপনারা চাকরি পাবেন। আমাদের বিয়ের সময়, রান্নাবান্না করার চাকরি। ’
যাই হোক, শুরু হইল মার্কেটিং কেলাস। বিল্লি, ওরফে গ্যাদার মা, ওরফে অপু বিশ্বাস ঢুকল কেলাসে।
ইহাকে টিজ করতে আমার বড়ই ভাল্লাগে। “মিয়াঁও” বইলা ডাক দিয়া উঠলাম। বড় বড় চোখ আরও বড় বড় করে সে তাকাইল আমার দিকে। আমি ততক্ষণে “আমার মত সুবোধ বালক এই দুনিয়ায় দুটি নেই” এর মত মুখ করে বসে আছি।
স্যার আইয়াই কম্পিউটারের সিপিউ অন করলেন।
হার্ডডিস্ক ওপেন করামাত্র প্রজেক্টরের বড় পর্দায় ক্লাসবাসী দেখিল এক অভাবনীয় দৃশ্য!! পর্দায় বিক্ষিপ্ত কয়েকটা ফাইল দেখা গেল; ভিডিও ফাইল, নাম Porn, ফডুক ফাইল, নাম Sexy, একখান ফোল্ডার, নাম Secret, আরও একখান ফোল্ডার, তাতে হিজিবিজি করে জাপানি লেখা, লুলীয় লেখাই হবে হয়ত!
বলাই বাহুল্য, ভাইরাস।
পুলা-মাইয়াদের মাঝে চাপা গুঞ্জন শুরু হইল। স্যার আর কোনও ফাইল ওপেন করলেন না। আমরা ভাবসিলাম বাঁইচা গেছি, কেলাস ডিসমিস। মাগার কীয়ের কী! শুরু হইল আমগো পাপ-পূণ্যের হিসাব… ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষার খাতা বিতরন!!!
সারা কেলাস অপু বিশ্বাসরে টিজ করলাম।
বিলাইয়ের আদুরে ডাক, রাগান্বিত ডাক, মারামারির ডাক, বিলাইদের রণসঙ্গীত, কিছুই বাদ যায় নাই। এমনকি নাম ডাকার সময়ও মিঁউ কইরা রেসপন্স করছি।
কেলাস শেষে শাটল বাসে কইরা বাসায় যামু। ৭ আর ১১ নম্বর বাস যাইব। ৭ নাম্বার পুরাই ভর্তি।
কিন্তু কয়েকটা বাস পেছনে ১১ নম্বর পুরাই ফাঁকা, কাকপক্ষীও নাই। আধুনিক পুলাপাইন তো, একটু হাঁইটা ফাঁকা বাসটার কাছে যাওয়ার কষ্ট করতে মুঞ্চায় না! উঠলাম ১১ নম্বরে। দেখলাম অপু বিশ্বাসও এই দিকেই আইতাছে। মনে করার চেষ্টা করলাম বাসা থেকে বাইর হওনের টাইমে সেটওয়েট মাইখ্যা আইছি নাকি… নাহ, আমি তো ইন্ডিয়ান প্রোডাক্ট ইউজ করি না। রেক্সোনা তো দূরের কথা, গতকাল গোসলই করি না!!
তাহলে অপু বিশ্বাসের এইদিকে আগমনের হেতু কী? আমারে কি একা পাইয়া…ডট ডট ডট??
অপু বিশ্বাস বাসে উঠিয়াই কইল, ‘বাসে কেউ নাই কেন! বাস কি যাবে না?’
আমি চামে কইলামঃ ‘ক্যা, আমি আছি, আমারে পছন্দ হয় না?’
সে বসতে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
‘একী! বাসের সিট ভেজা কেন?’ আমি কহিলাম, ‘সামনে মহিলাদের জন্য সীটে যাইয়া বহ। ” অপু বিশ্বাস খেঁকাইয়া কইল, ‘আমাকে কোন এঙ্গেলে তোমার মহিলা মনে হয়?’
-’সব এঙ্গেলে!’
-’তোমার চোখে সমস্যা আছে!’
-’কুনু সমইস্যা নাই! আমার চোউখ এক্কেরে ফকফকা ফ্রেশ!’
-’হান্ড্রেড পারসেন্ট সমস্যা আছে। নাইলে ফেসবুকে আমার এত্ত কিউট ফটোগুলোতে এত পচা পচা কমেন্ট করতে না! তোমার তো পুরা বডিতেই সমস্যা!’
আমি থমকে গেলাম, পুরা ভার্সিটির মধ্যে আমারটার মত এত কিউট ভুঁড়ি আর কারও নাই, আর আমাকে বলে এই কথা!
আমি কইলাম, ‘তুমি কি আমাকে মেডিক্যাল এনালাইজ করে দেখেছ?’
-’এনালাইজ করে দেখা লাগে না, এমনিই বুঝা যায়!’
-’এমনি বুঝাইলে হইবে না, মেডিকেল রিপোর্ট দেখাও, আমার ওজন তোমার চেয়ে কত বেশি। ’
-’আমাকে মহিলা যে বললা, সেইটের রিপোর্ট আগে দেখাও। ’
-’ওটা আমার ল্যাপটপে আছে।
’
-’তাইলে তোমার রিপোর্টও আমার ল্যাপটপে আছে!’
-’তোমার আবার ল্যাপটপ আছে নাকি? ওইটাকে তো ল্যাপটপ বলে না, ওটা হচ্ছে চাচা চৌধুরীর সুটকেস। ’
-’আমার ল্যাপটপ আছে কি নাই সেটা তুমি জানো ক্যামনে? তুমি আমার বাসায় গেছো কখনও?’
-হ্যাঁ গেছি তো! কেন, খালাম্মা কয় নাই? উনি তো আমাকে জামাই আদর করছিলেন অইদিন!’
-’আমার আম্মুর চোখ এখনও এত খারাপ হয়নাই যে তোমাকে জামাই আদর করবে!’
-’করবে না কেন! তোমার আম্মুর চোখ হইল জহুরির মত, উনি হীরা চেনেন। আফসুস, তুমার জহুরীর চোখ নাই!’
-’তুমি? হীরা? হুহ!’
-’আমি হীরা না, হীরার খনি। ’
-’ধ্যাত বাল! ভাল্লাগে না!’ (ভাল্লাগেনা! - এটা মনে হয় ওর মুদ্রাদোষ)
আমি জানালার বাইরে মাথা বাইর কইরা ডাক দিলাম, ‘অই জাপান! জাপান! ডাইরেক্ট জাপান!’
-’হ্যাঁ এইত। তোমাকে এইভাবেই দেখতেই ভাল্লাগে।
’
-’তোমার জামাই তোমাকে এইকাজ করেই খাওয়াবে বুঝি? ব্যাপার না, শ্রমসাধ্য সকল কাজই সম্মানের। ’
আমার ডাকে সাড়া দিয়ে পুলাপান বাসে উঠে পড়ল। তাও ডেরাইভার মামা আসে না! কাহিনী হোয়াট?
আমি নেমে দেখতে গেলাম কাহিনী হোয়াট? মামা দেখি বিঁড়ি ফুকতাছে। আমি ব্যাক করলাম। অপু বিশ্বাস জিগাইল,’মামা কই?’ কইলামঃ ‘মামা কইল তুমারে গাড়ি ইস্টার্ট দিতে, উনি আইতাছেন।
’
বাস জসিমউদ্দিন আইতেই শেষ রকেট রেডি করলাম। সে নামবে এপার, আমি ওপার, এবং প্রথমে সে। সে নামার সময়ই রকেটটা ছাইড়া দিলাম… “মামা, ব্রেক… মহিলা নামবে…!!!”
সে ঠোঁটে মিচকি হাসি ঝুলাইয়া নেমে গেল!
...
কালো হিমুর নোটবুক
...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।