বড়াইগ্রাম(নাটোর) উপজেলার সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে এই ব্লগে আলোচনা করা হবে। বেশী করে নিমগাছ লাগান, আপনার পরিবেশ ভাল থাকবে।
এক কালের খরস্রোতা বড়াল নদী নাব্যতা হারিয়ে বর্তমানে পুরোদস্তুর ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। নদীর বুক জুড়ে ধান, সরিষা ও রসুনের আবাদ করা হয়েছে। এক সময় যে বড়ালের পানি দিয়ে নদী তীরবর্তী মানুষের পানির চাহিদা মিটত, আশেপাশের জমিতে আবাদ হতো, বর্তমানে খোদ সে নদীর বুকেই অগভীর নলকুপ (স্যালো মেশিন) বসিয়ে চলছে ধান চাষ।
এক দিন যে নদীতে পাল তোলা নৌকা চলত, সে নদী এখন সবুজ-শ্যামল ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে।
রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মার শাখা হিসাবে উৎপন্ন হয়ে বড়াল নদী পুঠিয়া, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার মধ্যদিয়ে বাঘাবাড়ি হয়ে হুরাসাগাগরের বুকে মিশে নাকালিয়ায় যমুনায় পড়েছে। লেখক প্রমথনাথ বিশী লিখেছেন, মুর্শিদাবাদ থেকে নদীপথে ঢাকায় আসার সংপ্তি পথ হওয়ার কারণে তৎকালীন নবাব-বাদশাহরা এই পথেই যাতায়াত করতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ ড্রেজিংসহ নদীটি রায় সরকারীভাবে কোন উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো বড়ালের উৎস্য মুখসহ বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ ও যাতায়াতের জন্য নদীর বুক চিড়ে রাস্তা নির্মাণ করে নদীতে পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ রুদ্ধ করে দেয়ায় এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী খরস্রোতা বড়াল এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।
সরকারী নজরদারী না থাকায় ভূমিদস্যুরা নদীর দুপারে মাটি ভরাট করে দখল করে নিয়েছে।
পাশাপাশি স্রোত না থাকায় নদীর বুক জুড়ে পলি জমে এর গভীরতা কমে গেছে। এ কারণে নদী দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে উভয় দিকেই শীর্ণ হয়ে গেছে। বর্ষায় নদীতে কিছু পানি জমলেও কার্তিক আসতে না আসতেই আবার পানি শুকিয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়।
এক সময় যোগাযোগ সুবিধার কারণে বড়াল নদীর দু পাড়ে বড়াইগ্রাম থানা ভবন, লক্ষীকোল বাজার, জোনাইল বাজার, চাটমোহর, ফরিদপুরের মত বিভিন্ন হাট-বাজার ও গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনা গড়ে উঠেছিল। এ নদীকে ঘিরেই রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, ও সিরাজগঞ্জ জেলার ১৬টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা হাট-বাজারসমূহে ব্যবসার জন্য ধান, পাট, আলু, বেগুন, সরিষা, গমসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ছোট-বড় নৌকায় করে মাঝিমাল্লা ও সওদাগরেরা ছুটে চলতেন।
শুধু হাটবাজারই নয়, এ নদীতীরে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য জনপদ। জীবিকার সন্ধানে নদী সংলগ্ন এলাকায় অসংখ্য জেলে পল্লী গড়ে উঠেছিল। ছোট-বড় নানা জাতের মাছ ছিল এ নদীতে। জেলেরা রাতদিন সেসব মাছ ধরে বিক্রি করত আশেপাশের বাজারে। সে সময় এলাকায় মাছের অভাব ছিল না।
সে সময় নদীটি ছিল পূর্ণ যৌবনা।
১৯৮১-৮২ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী তীরবর্তী ১৬টি উপজেলাকে তথাকথিত বন্যামুক্ত করার জন্য রাজশাহীর চারঘাটে বড়ালের উৎস্য মুখে বাঁধ দিয়ে নদীতে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে বড়াইগ্রাম উপজেলার ধামানিয়াপাড়া ও রয়না মোড়ে দুটি বক্স কালভার্ট, চাটমোহরের নুননগরে স্লুইসগেট এবং একই উপজেলার নতুন বাজার, বোথর ও রামনগরে নদীর বুক চীরে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন স্থানে স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের ফলে ক্রমাণ্বয়ে বড়াল এখন শুকিয়ে শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। বড়াল নদীতে পানি না থাকায় এখন নদী পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
আর এ সুযোগে শুষ্ক মওসুমে এলাকার কৃষকেরা নদীর বুক জুড়ে ফসলের আবাদ করেছেন। নদীতে পানি না থাকায় এ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলো কালক্রমে ম্রিয়মান হয়ে উঠেছে। কৃষি জমিগুলো বিরানভুমিতে পরিণত হয়েছে। এ এলাকার প্রধান নদী বড়াল শুকিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে গ্রামের মানুষেরা পানির জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। সেচসহ প্রাত্যহিক প্রয়োজনে অতিরিক্ত মাত্রায় ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় ভূ-গর্ভের পানির স্তর ক্রমশ নীচে নেমে যাচ্ছে।
অচিরেই বড়ালসহ আশেপাশের নদীগুলো পুন:খনন বা সংস্কার না করলে ভবিষ্যতে এ এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানিরও অভাব দেখা দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।