আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আওয়ামী লীগারদের কীর্তি

..............................

মূল : সাইয়েদ নসরুল আহসান শুধুমাত্র বগুড়ায় স্টেট ব্যাংক থেকে লুট করা হয়েছিল ৫৬ কোটি টাকার উপরে। এ সমস্ত লুটপাটের সাথে জড়িত ছিলেন রাজনৈতিক নেতারা এবং আমলাদের একটা অংশ। কোটি কোটি টাকা নিয়ে বিদেশের মাটিতে বসে ছিনিমিনি খেলার ন্যাক্কারজনক ইতিহাসের কোন জবাব আওয়ামী লীগ সরকার প্রবাসে কিংবা স্বাধীনতার পর জনগণের কাছে দেয়ার কোন প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করেনি। লুটপাট সমিতির কার্যকলাপে কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের তথা সমস্ত বাঙ্গালী জাতির ভাবমূর্তি ুণড়ব হচ্ছিল তার কয়েকটি বিবরণ নিচে দেওয়া হলো : লুটপাট সমিতির সদস্যরা (আওয়ামী লীগাররা) তখন কোলকাতার অভিজাত পাড়াগুলোতে এবং বিশেষ করে পার্ক ষ্ট্রীটের হোটেল বার এবং রেস্তোঁরাগুলোতে তাদের বেহিসাবী খরচার জন্য জয় বাংলার শেঠ বলে পরিচিত। যেখানে তারা যান মুক্তহস্তে বেশুমার খরচ করেন।

থাকেন বিলাসবহুল ফাট কিংবা হোটেলে। সন্ধ্যার পর হোটেল গ্রান্ড, প্রিন্সেস, ম্যাগস, ট্রিংকাস, বুফকস, মলিন রুৎ, হিন্দুস্থান ইন্টার ন্যাশনাল প্রভৃতি বার রেষ্টুরেন্টগুলো জয় বাংলার শেঠদের ভিড়ে জমে উঠে। দামী পানীয় খাবারের সাথে সাথে পাশ্চাত্য সংগীতের আমেজে রঙিন হয়ে উঠে তাদের আয়েশী জীবন। বয় বাবুর্চিরাও তাদের আগমনে ভীষণ খুশী হয়। এমনই একজন নেতা তার দলবল নিয়ে প্রত্যেক দিন হোটেল গ্রান্ডের বারে মদ্যপান করতেন।

তিনি বগুড়া ব্যাংক লুটের টাকার একটা বিরাট অংশ কবজা করেছেন কোনভাবে। তার কাছে রয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। একদিন মধ্যরাতে তিনি হোটেল বারে গিয়ে মদ পরিবেশন করার জন্য বারম্যানদের হুকুম দেন। বারম্যান্যরা কাচু মাচু জবাব দেয়, সময় শেষ হয়ে যাওযায় বার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জবাব শুনে প্তি হয়ে উঠেন বাঙালি শেঠ।

টলমল অবস্থায় চিৎকার করে বলতে থাকেন তিনি হোটেলটাই পুরো কিনে নিতে চান। বেসামাল কিন্তু শাসাল খদ্দের, তাই বারম্যানরা চুপ করে সবকিছু হজম করে যাচ্ছিল। শেঠ আবোল তাবোল বকে পরে একজন বারম্যানকে হুকুম দেন ‘কাল বার খোলার সময় থেকে বন্ধ করার আগে পর্যন্ত তিনি ও তার সংগীদের ছাড়া অন্য কাউকে মদ পরিবেশন করা যাবে না। তারাই শুধু থাকবে বারে। তার হুকুম শুনে বারম্যানরা ম্যানেজারকে ডেকে পাঠায়।

ম্যানেজার এলে শেঠ তাকে প্রশড়ব করেন রোজ আপনার বারে সেল কত টাকা? ম্যানেজার একটা অংক তাকে জানায়। শেঠ তখন তাকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন পুরোদিনের সেলের টাকাই তিনি পরিশোধ করবেন, পুরো টাকার মদ খেয়ে ওরা শেষ করতে না পারলে বাকি মদ যেন তার বাথরুমের টাবে ভরে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি তাতে গোসল করবেন। ’ ম্যানেজার তার কথা শুনে ’থ হয়ে গিয়ে মাতালের প্রলাপ মনে করে কোন রকমে সেখানে থেকে কেটে পড়েন। আর একদিন আর এক জন জয় বাংলার শেঠ তার পুত্রের প্রথমবারের মত জুতা পরার দিনটি উদযাপন করার জন্য বুফকস রেষ্টুরেন্টের ১০০ জনের একটি শানদার পার্টি দেন।

এ ছাড়া অনেক শেঠ দিলী ও বোম্বেতে গিয়ে বাড়ী ঘরকিনতে থাকেন। অনেকে আবার ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়েউঠেন। তাদের এ সমস্ত কীর্তি কলাপের উপর শহীদ জহির রায়হান একটি প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার এ অভিপ্রায়ে অনেকেই ভীষণঅসন্তুষ্ট ছিলেন তার উপর, অনেকেই তার ঔদ্ধত্যে েেপ গিয়েছিলেন। তার রহস্যজনক মৃত্যুর পেছনে এটাও একটা কারণ হতে পারে।

কোন এক নায়িকার জন্মদিনে তখনকার দিনে তার এক গুণমুগ্ধ তাকে ৯ ল টাকা দামের হীরের নেকলেস উপহার দিয়েছিলেন। দরগা রোডের বিশু বাবুর বাড়ীতে থাকতেন মন্ত্রী পরিষদের পরিবারবর্গ। প্রবাসী সরকারের টাকার প্রায় সবটাই কালো কালো ট্রাঙ্কে ভরে রাখা হয়েছিল বিশুবাবুর বাড়ীতে এবং ৩নং সোহরাওয়ার্দী এভিন্যুর তিনতলা ছাদের দুটো কামরায়। সেখানে থাকতেন অর্থ সচিব জনাব শামসুজ্জামান, তার পরিবার ও রাফিয়া আকতার ডলি। এ টাকার কোন হিসেব ছিল না।

কোলকাতার বড় বাজারের মারোয়ারিদের সাহায্যে এগুলো এক্সচেঞ্জ করা হত। এ কাজের দালালী করেও অনেকেই কোটিপতি হয়ে উঠেন রাতারাতি। কিছুসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা লোভ সম্বরণ করতে না পেরে অসৎ হয়ে উঠেন। কোন এক সেক্টর কমান্ডার এক পাকিস্তানী সিএসপি অফিসারের অন্তসত্বা স্ত্রীকে বেয়নটের আঘাতে মেরে তার গা থেকে সোনার অলঙ্কার খুলে নিয়েছিলেন এমন ঘটনাও ঘটেছে। যুব শিবির, শরণার্থী শিবিরগুলো নিয়ে কেলেঙ্কারি হয়েছে অনেক।

তাদের জন্য সারা বিশ্ব থেকে রিলিফ সামগ্রী, যানবাহন ভারতীয় সরকারের প্রযতেড়ব এসেছিল। কিন্তু তার কতটুকু বা দেয়া হয়েছিল শরণার্থীদের প্রয়োজন মেটাতে। এসব রিলিফ সামগ্রী বিতরণের দায়িত্ব ছিল যৌথভাবে ভারত ও প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের । বগুড়ার স্টেট ব্যাঙ্ক ছাড়াও মোটা অংকের টাকা নিয়ে আসা হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম ভৈরব ও পাবনার ট্রেজারী থেকে, সে টাকারও কোন সুষ্ঠু হিসাব পাওয়া যায়নি। ’ (যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি পৃঃ ২২০-২২২) বিজয় হল ছিনতাই নিয়াজীর আত্মসমর্পণের প্রায় ১ সপ্তাহের পরে প্রবাসী আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে ফিরে এসে বিনা প্রশেড়ব গদিতে বসে।

মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কেন অনুপস্থিত ছিলেন সে সত্যটি উদঘাটন করার জন্য আজ পর্যন্ত কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হল না। অথচ মুক্তিযুদ্ধের এই অসহায় মহানায়ক কর্নেল ওসমানীর কতই না প্রশংসা। কেন এই মিছেমিছি প্রশংসা? এর অন্তরালে কি রহস্য? রহস্য তো নিশ্চয়ই রয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অধিনায়কের কাছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অধিনায়কের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে প্রকতৃপে ১৬ই ডিসেম্বর, যাকে আমরা ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে অবিহিত করি, সেই দিন থেকেই বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধকে ‘বিজয় দিবস’ এর পরিবর্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে ইতিহাসে আনুষ্ঠানিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে এই ষড়যন্ত্রের পিছনে আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামকে অস্বীকার করা এবং পাক-ভারত যুদ্ধে পূর্বাঞ্চলের রণাঙ্গণে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিজয় ঘোষণা করা। ‘এই বিজয়ে বাংলাদেশের মুক্তিপিপাসু জনগণ এবং মুক্তিযোদ্ধারা ছিল নীরব দর্শক, আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ছিল বিনয়ী তাঁবেদার এবং কর্ণেল ওসমানী ছিলেন অসহায় বন্দী।

এ যেন ছিল ভারতের বাংলাদেশ বিজয় এবং আওয়ামী লীগ সরকার এই নববিজিত ভারতভূমির যোগ্য লীজ গ্রহণকারী সত্তা। সুতরাং যেমন সত্তা তেমনই তার শর্ত- আর যার কোথায়। ’ (মেজর (অব) এম এ জলিল : অরতি স্বাধীনতাই পরাধীনতা, পৃঃ ৩৬

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।