অনেকের মাঝেও একা থাকা যায়, নি:সঙ্গতায় কারো অনুভব ছুঁয়ে যায় ...
***
হাতেখড়ির সময় থেকেই 'ঈ' লিখতে বিরক্ত হতাম। কি এক প্যাঁচানো প্যাঁচানো অক্ষর! এরপর যখন শব্দ পড়তে-লিখতে শুরু করি তখন তো বানানের আরেক হ্যাপা! ই-কার আর ঈ-কার মিলে কত যে নাকানি-চুবানি খাওয়ালো! কোন মতে বামে চাপিয়ে লিখতে শিখলাম একটাকে, এরপর দেখি ওটা আবার ডানে সটকে পড়লো! দুটোই যখন ’ইইইইইই’ ধ্বনিত হচ্ছে তবে এমন বামপন্থি, ডানপন্থি গল্প কেন তা নিয়েও ক্ষোভের কমতি ছিল না! কোন সন্দেহ নেই হাতে-পায়ে বেড়ে ওঠা বড় বড় ডিগ্রীধারিদেরও ি আর ী -তে মিলে এখনো সমান তালে ভোগায়।
যদিও আধুনিক ভাষাতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে 'ঈ' স্বরধ্বনিটির লিখিত রূপ থাকলেও বাংলা ভাষার উচ্চারণগত তারতম্যে এই স্বরটির আলাদা বিশেষত্ব পাওয়া যায় না তথাপি হ্রস্ব-ই-কার (ি) -এর নামে বোঝা যায় এর উচ্চারণ হ্রস্ব এবং দীর্ঘ-ঈ-কার (ী) -এর উচ্চারণ তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ।
যা দীর্ঘ তা হয়ত গভীর হয়। গভীরতার সাথে আবেগ জড়িত।
আবেগের সাথে চেতনা। চেতনা মানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। চেতনা মানে আমাদের ভাষা। ভাষা মানে টগবগে একুশ। একুশ মানে ফেব্রুয়ারি।
আমরা শ্রদ্ধাবনত হই। শ্রদ্ধা প্রকাশের সুযোগ খুঁজি। পুষ্পে পুষ্পে সাজানো শব্দের আশ্রয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই। অতি উচ্ছ্বসিত আবেগে অন্ধ হয়ে অতি যত্নের সাথে বহু বছর ধরেই গড়পড়তা এক ভুলকে লালন করে চলি। তাই একদিকে যখন সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন নিয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ হই, সেসময়ই ব্যানারে, নয়তো পোস্টারে ভুল বানানে লিখিত 'শ্রদ্ধাঞ্জলী' আমাদের অঙ্গীকারকে প্রত্যাহ্বান করে।
ভাষা-সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশে গভীর প্রীতিতে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির সাথে 'ী' জুড়ে ফেব্রুয়ারির সেই অমর একুশের গানের প্রথম দু’টি চরণ দিয়ে আমরা আবারো ব্যানার, পোস্টার সাজিয়ে ফেলি -আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী / আমি কি ভুলিতে পারি!
দু’দিন আগে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ এক তরুণের টি-শার্টের বুকে ঝকঝকে ছাপায় শহীদ মিনার আর শহীদের নিয়ে ছন্দময় চরণ দেখলাম। পংক্তিমালা ভুলে গেছি তবে ঝকঝকে ছাপায় 'ফেব্রুয়ারী' চোখে আটকে আছে এখনো।
১৯৫২ থেকে ১৯৭১...অতঃপর আজ ২০১০। এ পর্যন্ত কতবার এ জাতি শহীদ মিনারে প্রভাত ফেরিতে নাঙ্গা পায়ে হাজির হয়েছে! স্মৃতিসৌধতে ফুল বিছিয়ে দিয়েছে! অথচ প্রতি বছরই বিশেষত এই দুটো বানান ভুল নিয়ে একবার না একবার কথা বলতেই হয়। তারপরও ভুল হচ্ছেই ...।
আমাদের এই বাড়তি দীর্ঘ-ঈ-কার প্রীতি কাটিয়ে উঠতে আর কতটা দীর্ঘ সময় লাগবে?
***
তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে দুনিয়া কাঁপানো ৩০ মিনিট -এর মঞ্চে উঠে এলেন ভাষা সৈনিক আহমদ রফিক। স্মৃতিচারণে আপ্লুত হলেন। ভাষার সঠিক ব্যবহারের স্লোগান দিলেন। আর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন যে ”৫২” -কে ঘিরে আমাদের এতো আয়োজন, সেই ৫২' সাল কি করে ১৯৫৩ হয়ে যায়! তিনি এর নাম দিলেন অমনোযোগ। বললেন, এই অমনোযোগ কাটিয়ে উঠতে হবে আমাদের।
আমরা কি সত্যিকারের মনোযোগী হবো আমাদের চেতনার প্রতি?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।