শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু, জাতির জনক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ইত্যাদি বিশেষণে বিভূষিত করা হয়। কিন্ত তাঁকে কি মুক্তিযোদ্ধা বলা যায়?
American Heritage® Dictionary of the English Language এ মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে এ ভাবে One engaged in armed rebellion or resistance against an oppressive government. অর্থাৎ যিনি প্রকটি নির্যাতনকারী সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ বা প্রতিরোধে অংশ গ্রহণ করেছেন, তিনিই ফ্রীডম ফাইটার। শেখ মুজিব কোন সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হন নি, ফলে এ সংজ্ঞায় তিনি ফ্রীডম ফাইটার নন। শেখ মুজিব কোন শক্তি প্রযোগ ত করেনইনি, বরং তিনি পাকিস্তানীরে দ্বারা গ্রেপ্তার হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে বসেছিলেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাস্ট Order, 1972. Sec 2 (h) এ মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে এভাবে, “freedom fighter” means any person who had served as a member of any force engaged in the war of liberation but shall not include the serving members of the defence services, police or the civil armed forces, or any Government pensioner, or any other person having any regular source of income; এ সংজ্ঞায়ও শেখ মুজিব মুক্তিযোদ্ধার ক্যাটাগরিতে পড়েন না।
তাহলে আমরা কোন যুক্তিতে তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা বলব? শেখ মুজিব দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে কোন সিদ্ধান্ত দেয়ার পূর্বেই পাকিস্তানী সৈন্যরা ২৫ মার্চ রাত ১১.০০টায় অপারেশন সার্চলাইট শুরু করেছিল। তখন মানুষ আত্মরক্ষার তাগিদেই পাকিস্তানীদের প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছে এবং লিপ্ত হয়েছে প্রতিরোধ যুদ্ধে। এজন্য কারো কোন বাণী বা ঘোষণার অপেক্ষায় কেউ বসেছিল না। যেজন্য সংবিধানের প্রথমেই উল্লেখ করা হয়, '' আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ১৯৭১ খ্রীস্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্টিত করিয়াছি। '' বাঙালি সৈন্যরা ২৫ মার্চের আগেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে (দেখুনঃ মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস, মেজর জেনারেল একেএম সফিউল্লাহ)।
৭ মার্চের বক্তৃতায় বরং শেখ মুজিব স্বাধীনতার প্রশ্নে যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ছিলেন জয় পাকিস্তান বলে (দেখুন আমার জীবনে একাত্তর, নির্মল সেন, প্রকাশকঃ বর্তমান সময়, পৃ ১১), এবং এর পর থেকে লাটভবনে ইয়াহিয়া ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের সাথে তিনি নিজেও বৈঠকের পর বৈঠক করে সাংবাদিক সন্মেলনে দেশবাসীকে আশ্বস্থ করার মধ্যে দিয়ে অদূরদর্শীতা প্রদর্শন করেছিলেন, সচেতন জনগণ ও সেনাবাহিনীর বাঙালি সৈন্যরা কিন্ত তাতে আসল বিষয় উপলব্ধী করতে বিভ্রান্ত হন নি। ২৩ মার্চ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকেরা শেখ মুজিবের বাড়ীতে গিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার কথা বলেছিল, মুজিব তাতে কান দেন নি (দৈনিক আজাদ, ২৩ মার্চ ১৯৭১)। তারপরও জনগণ মুজিবের কথায় কান না দিয়ে নিজেরাই যুদ্ধ প্রস্ততী গড়ে তোলে। নিজেদেরকে রক্ষা করার এই প্রতিরোধ সংগ্রামে শেখ মুজিব কিন্ত অংশ নিলেন না। তিনি বসে রইলেন নিজ বাসভবনে (মূলধারা ৭১, মঈদুল হাসান, ইউপিএল, ২০০৮, পৃ ৪), কখন পাকিস্তানীরা তাকে তোলে নিয়ে যায়, সেজন্য।
২৫ মার্চ রাতের শেষে ২৬মার্চের প্রথম প্রহরেই শেখ মুজিব পাকিস্তানীদের কাছে আত্মসমর্পন করলেন। তাই ২৫ মার্চ থেকে ১০ই এপ্রিল পর্যন্ত মানুষ কোন কেন্দ্রীয় কমান্ড ও নেতৃত্ব ছাড়াই স্বপ্রণোদিত হয়ে যুদ্ধ চালিয়ে গেল। ১০ এপ্রিল তেলিয়াপাড়ায় মুক্তিযুদ্ধের একটা কমান্ড বেস তৈরী হল। তখন থেকে যুদ্ধরত সৈনিকদের (বাঙালি সৈনিক, ইপিআর) নাম হল মুক্তিফৌজ বা M F এবং ছাত্র যুবশ্রেণীর মধ্যে যারা যুদ্ধে যোগদান করেছিল তাদের নাম হল ফ্রীডম ফাইটার বা F F। এম এফ ও এফ এফ নামগুলো অবশ্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর দেয়া।
(মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় এখন অবশ্য এফ এফ-এর স্থলে গণবাহিনী লিখে। ) এম এফ ও এফ এফ সম্মিলিতভাবে অভিহিত হয় মুক্তিযোদ্ধা নামে। (বিএলএফ নামে ভারত সরকার একটি সংগঠন গড়ে তোলে, এখন এই ভারতীয় সংগঠনের সদস্যরাও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে দাবী করছেন। ) যাহোক এ প্রক্রিয়ার মধ্যেও শেখ মুজিব স্বভাবতই অনুপস্থিত। সুতরাং বাংলাদেশের ফাউন্ডিং ফাদার হওয়া সত্বেও কেউ যদি বলে শেখ মুজিব মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, তাহলে কি মিথ্যা হবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।