আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তিযুদ্ধে কারা জিতেছিল? কারা হেরেছিল? অথবা জীবন কেন পালিয়ে বেড়ায়

উঁকি দাও ফুল!

আমি প্রায়ই অবাক হয়ে ভাবি, একাত্তুরে মুক্তিযোদ্ধারা যদি হেরে যেতেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র কি তাদের ক্ষমা করত? সম্ভবত না। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের পর তারা কেন ক্ষমা পেয়েছিল? পেটের দায়ে, ভয়ভীতি বা এ জাতীয় কোন কারণে যারা সাধারণ সহযোগিতা করেছিল, তাদের কথা নয়। বলছি ঘাতকরা, তাদের পরিকল্পক কিংবা সংগঠকদের কথা। এই বোধহয় আমাদের রাষ্ট্রের আদিপাপ। যে পাপের বিচার না হওয়া শেষ পর্যন্ত আরও বহু কিন্তু ঘাতকদের বিচার কেন হয়নি? একটাই উত্তর দেয়া সম্ভব: যারা জিতেছিল, আর যারা পরাজিত হয়েছিল, তারা উভয়েই ছিল একই শ্রেণীস্বার্থের মানুষ।

মরণপণ লড়াইয়ের র্পও তাদের এই ঐক্য সম্ভব হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জনগণের মধ্যে যে স্বপ্ন জেগে উঠেছিল, তাদের যে সংগ্রামী সংগঠন ও ঐক্য গড়ে উঠেছিলÑ তাকে রুখতে। তাই ৭১-৭৫ সালের মাঝে নিকেশ হয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধাদের বেসামরিক অংশ। নতুন রাষ্ট্রে কর্ণধারদের তৎপরতায় যাদের স্বপ্ন দ্রুত চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল, তাদের বিরোধিতা সহ্য হয়নি রাষ্ট্রের। জাসদ, সর্বহারা কিংবা নক্সাল নাম দিয়ে তাদের দ্রুত খতম করা হয়। ৭৫-৮২ সালের মাঝে স্বপ্নবান মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক অংশও খতম হল অনেকগুলো প্রহসনমূলক বিচারে।

বাকিরা হতোদ্যম, হতাশ, নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লেন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলেন, বিচ্ছিন্ন হয়ে রইলেন। কেউ কেউ হয়তো ভিড়েও গেলেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাণিজ্যে। জন্মের পরের এক দশকের রাষ্ট্রের সহিংসতা আমাদের গোটা মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের সেরা অংশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষকে করেছে হতাশ আর নৈরাশ্যবাদী।

বড় গলায় লড়াইয়ের গল্প করছে এমন একটা অংশকে আমরা যদি দেখি এত বছরের লুটপাটের নাযক, তবে তার লড়াই থেকে কেন উদ্ধুদ্ধ হব! আর পত্রিকার কোনায় কোনায় যদি দেখি বিপুল-বিশাল সংখ্যক লড়াকুর ভিক্ষাবৃত্তি, মোটটানা আর অসহায় জীবন সংগ্রামের কাহিনী কি আশা তা আর জাগায়! যেনবা শহীদুল জহিরের সেই জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার মত, যেখানে পুরান ঢাকা ছেড়ে না পালিয়ে গিয়ে আর কোন উপায় থাকল না, কেননা রাজনৈতিক বাস্তবতা তো স্বাধীনতার পক্ষ আর বিপক্ষকে এক করে দিয়েছে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে! জীবনই তাই পিছু হটে, পালিয়ে বেড়ায়, আতঙ্কিত হয়, সুযোগ পেলেই আত্মকেন্দ্রীকও হয়ে ওঠে। নব্বইয়ের গণঅভ্যুানে এত এত গণমানুষের রক্তদান সত্বেওনব্বই পরবর্তী সবগুলো সরকার কি প্রমাণ করেনি যে মহাচোর এরশাদের বিরুদ্ধবাদীরাও চোরই ছিল, সামান্য ঘুষের লোভে বিদেশীদের কাছে দেশকে যারা বন্ধক দিয়েছে, দেশের উৎপাদিকা শক্তির ধ্বংস করে এদেশকে যারা কেবল সস্তা মজুরের দেশে পরিনত করেছে? ৯০ পরবর্তীতে সক্রিয় রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের অনীহার কারণও এটাই। স্বপ্নভঙ্গ। পুরো নব্বইয়ের দশক জুড়ে তাই দেখতে পাই আত্মকেন্দ্রীক, ব্যক্তিগত লাভালাভের স্বপ্ন। সমাজকে নিয়ে কোন স্বপ্ন নেই।

তাইতো লীগ-বিএনপি-শিবির মাস্তানদের হাত থেকে নিরাপত্তার আশায় প্রায়ই উচ্চমধ্যবিত্তের বিকারগ্রস্তের মত আত্মসমর্পণ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কাছে। হতাশা আর গ্লানির এই রাজত্ব কতকাল চলবে! হয়তো এর অবসানের কিছু লক্ষণও আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু আদি পাপের ফয়সালা না করে কোন সমাধানই হবে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.