আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুষ্টিয়া কলেজে আবার ভর্তি বন্ধ করে দিল ছাত্রলীগ

..............................

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে সম্মান (স্নাতক) প্রথম বর্ষে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা আবারও ছাত্রলীগের হামলায় পণ্ড হয়ে গেছে। গতকাল রোববার সকালে মৌখিক পরীক্ষা শুরুর পরপরই হামলাকারীরা কলেজের পরীক্ষাকক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়। খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধরের শিকার হন প্রথম আলো ও দেশ টিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি। সাংবাদিকদের রক্ষা করতে গিয়ে আহত হন কলেজের এক শিক্ষক। এ ঘটনায় পুলিশ ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে আটক করেছে।

কলেজে ২০০ আসনে নিজেদের পছন্দের শিক্ষার্থীকে ভর্তির দাবিতে ছাত্রলীগ এই নিয়ে দুই দফায় ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দিল। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা লজ্জিত, দুঃখিত। যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’ মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডে দায়িত্বরত শিক্ষক কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক গোলাম মোস্তফা বলেন, গতকাল কলেজে প্রথম বর্ষের মানবিক বিভাগে ৯২২-১১২১ মেধাক্রমের ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার নির্ধারিত দিন ছিল। সকাল ১০টার দিকে কিছু ছাত্র গ্রন্থাগার ভবনে মৌখিক পরীক্ষাকক্ষে ঢুকে পরীক্ষা বন্ধ করে দেন।

তাঁরা ভর্তিপ্রার্থীদেরও ওই কক্ষ থেকে বের করে দেন। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন দায়িত্বরত চারজন শিক্ষক। একপর্যায়ে নেতা-কর্মীরা ওই ভবনের প্রধান ফটক বন্ধ করে রাখেন। ভর্তি-প্রক্রিয়ায় বাধার খবর পেয়ে সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলে গেলে ছাত্রলীগের তোপের মুখে পড়েন। তারা ছবি তুলতে বাধা দেয়।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা না বলার জন্য হুমকি দেয়। একপর্যায়ে শিক্ষকদের অনুমতি নিয়ে সাংবাদিকেরা ভেতরে ঢোকেন। বেলা ১১টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মীর সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা গ্রন্থাগার ভবনের একটি কক্ষে সাংবাদিকদের অবরুদ্ধ করে চেয়ার-টেবিলের ভাঙা অংশ দিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন। সাংবাদিকদের রক্ষা করতে গিয়ে কলেজের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম আলাউদ্দিন হাতে আঘাত পান। খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিক ও পুলিশ কলেজে গিয়ে অবরুদ্ধ সাংবাদিকদের মুক্ত করার চেষ্টা করেন।

কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবরুদ্ধ সাংবাদিকসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের ওপর আবারও চড়াও হন। পরে পুলিশ গুরুতর আহত দুজন সাংবাদিক প্রথম আলোর তৌহিদী হাসান ও দেশ টিভির শরীফ বিশ্বাসকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। ওই ঘটনার পরপরই তাত্ক্ষণিকভাবে কুষ্টিয়ার সাংবাদিকেরা স্থানীয় প্রেসক্লাবে প্রতিবাদ সভা করেছেন। সভা শেষে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন খানের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে বৈঠকও করেন সাংবাদিকেরা। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পুলিশের দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ হাসানুজ্জামান বলেন, ভর্তি কার্যক্রমের বিষয়টি আগেই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। তিনি বলেন, আজ সোমবার আবারও ভর্তি-প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে কলেজের অধ্যক্ষের দাবি অস্বীকার করে এসপি শাহাবুদ্দিন খান জানান, এ ধরনের কোনো আবেদন তাঁর কাছে করা হয়নি। এমনকি গতকালের উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়টিও অধ্যক্ষ পুলিশকে জানাননি।

পুলিশ অন্য মাধ্যম থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। জানা যায়, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন কলেজে ভর্তিবাণিজ্য চালিয়ে আসছিলেন। এবার ভর্তিবাণিজ্য ঠেকাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী ভর্তির কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশে ক্ষুব্ধ হন তাঁরা। তাঁরা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন বিভাগে নিজেদের পছন্দের শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য ২০০ আসন দাবি করেন। অন্যথায় ভর্তি বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.