‘মাছে ভাতে বাঙালি’ সময়ের পরিক্রমায় প্রবাদ বাক্য হারিয়ে যাওয়ার পর, ‘সবার জন্য ডাল-ভাত’ তত্ত্ব নতুন করে প্রবর্তনের প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু সে ডালও এখন সস্তা নয়, সহজলভ্য নয়।
বাজারে ডালের দাম অকল্পনীয় হারে বাড়ছে। কিছু দিন পূর্বের ১০৫-১১০ টাকা কেজির ডালের দাম এখন হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকা। অথচ কয়েক বছর পূর্বে এ দামেই ২ কেজি গোশত পাওয়া যেত।
বলাবাহুল্য, তখন গরিব মানুষ যে অহরহ গোশত খেত, তা নয়। তবে এখন অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এখন গোশত মনে করে গরিবকে কদাচিৎ ডাল খেতে হচ্ছে। অর্থাৎ ডাল খাওয়াটাই এখন গরিবের জন্য গোশত কেনার মতই কষ্টসাধ্য ও দুরূহ হয়ে পড়েছে।
প্রকৃতপক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে ডালের দাম বড় জোর ত্রিশ/চল্লিশ টাকা হতে পারে। বর্তমান ১৪০ টাকা দাম হওয়ার তো কোন প্রশ্নই আসে না।
এ মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণই নেই। উল্লেখ্য, দেশের চাহিদার সিংহভাগ ডালই আমদানিনির্ভর।
প্রতিবছর বিদেশ থেকে দুই হাজার কোটি টাকার ডাল আমদানি করা হচ্ছে। দেশে চাহিদার মাত্র ৩০ শতাংশ ডাল উৎপাদন হচ্ছে।
দেশে বছরে ডালের চাহিদা ১২ থেকে ১৪ লাখ মেট্রিক টন; কিন্তু বর্তমানে ডাল উৎপাদিত হচ্ছে চার লাখ ৫০ হাজার টন।
বছরে আট লাখ মেট্রিক টন ডাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। এ খাতে খরচ হচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় ডালের চাষ বাড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ দরকার। পাশাপাশি কৃষকদের ডাল চাষে উদ্বুদ্ধ করা দরকার। উদ্ভাবিত ডালবীজ কৃষকদের কাছে সহজে পৌঁছে দেয়া দরকার।
যদিও ইতোমধ্যে ডাল চাষে জমির পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ এ বিষয়ক সেমিনার-কর্মশালার আয়োজন করেছে। কিন্তু তা আদৌ যথেষ্ট নয়। কারণ, ডাল সম্পর্কে কৃষি গবেষণা ইতোমধ্যে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু সাধারণ কৃষক তা অবগত নয়। কৃষি বিজ্ঞানীরা এ যাবৎ ৪৩টি শস্যের জাত উদ্ভাবন করেছেন।
এর মধ্যে ডাল জাতীয় ফসল ছোলা, মসুর, মুগ, খেসারি, মাষকলাই রয়েছে।
কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, ধান চাষ করতে গিয়ে মাটির উর্বরশক্তি কমে যাচ্ছে। পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। বর্তমান পরিসি'তিতে আমিষের ঘাটতি পূরণের জন্য ডাল উৎপাদন বাড়াতে হবে। ডাল উৎপাদন বাড়লে দুই হাজার কোটি টাকার ডাল আমদানি বন্ধ হবে।
আগামী মৌসুমে ডাল চাষের জমির পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে কৃষক লাভবান হবে। ‘বিনা মুগ-৫’ ডাল চাষ করলে ফলনও বেশি হবে। বিনা মুগ-৫ আর প্রস্তাবিত বিনা মুগ-৮ ডালবীজ ডাল চাষের অপার সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে।
দেশের কোথায় ডাল ভাল উৎপন্ন হয় সে ব্যাপারে সরকারের কাছে নেই কোন বস্থনিষ্ঠ ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য।
ডাল চাষীদের সমস্যা সমাধানেও নেই কোন পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠপোষকতা। নেই যথাযথ উদ্যোগ, যথাযথ তদারকি ও সমন্বয়। ফলত প্রতিবছরই বৈদেশিক মুদ্রার একটা বিরাট অংশ ব্যয় করে বিদেশ থেকে ডাল আমদানি করতে হয়। কিন্তু এভাবে কি বছরের পর বছর চলতে দেয়া যায়? যে পাট চাষে, চাষীরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলছিল, কিছু মাত্র সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করায় এখন তারা নতুন উদ্যমে পাট চাষ শুরু করছে। প্রসঙ্গতঃ ডাল চাষেও একই কথা প্রযোজ্য।
উল্লেখ্য, ধানের তুলনায় ডাল শস্যের জন্য অনেক কম পানির প্রয়োজন হয়। একই পরিমাণ পানির সাহায্যে বোরো ধানের দশ গুণ পরিমাণ জমিতে ডালশস্যের চাষ করা সম্ভব। অভিজ্ঞমহল মনে করেন, যতদিন পর্যন্ত অভিজ্ঞমহল মনে করেন ডালের সত্যিকারের উফশী জাত উদ্ভাবন করতে না পারা যায়, ততদিন পর্যন্ত ডাল শস্যের জমির পরিমাণ বাড়িয়ে হলেও দেশে ডাল উৎপাদন সি'তিশীল করতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মাছে-ভাতে বাঙালি এ ঐতিহ্য হারানোর পর সবার জন্য ডাল ভাতের ব্যবস্থা করতে গিয়েও যদি আমাদের নির্ভর করতে হয় বিদেশের উপর; তবে এর চেয়ে দুঃখজনক, পীড়াদায়ক ও লজ্জাকর আর কি হতে পারে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।