আজকে এক হবু মা কে নিয়ে তার শাশুড়ি এসেছে। সব কিছু দেখে দেয়ার পর শাশুড়ি জিজ্ঞেস করল,
আপা ছেলে হবে না মেয়ে।
আমি বললাম, দরকারটা কী জানার?
-না একটু মনের শান্তি আর কি। কন না।
--অত শান্তির দরকার নাই, যখন হবে তখন জানবেন।
-কইলে সমস্যা কী?
--না কইলে সমস্যা কী?
-আপা জানার একটা শখ তো হয়।
--যখন আলট্রাসনো করেছে তখন জানতে চান নাই?
-জিগাইছিলাম, ঐ ডাক্তারে কয়, আমি কমু না, আপনারা যে ডাক্তাররে দেখাবেন তাকে জিজ্ঞেস করবেন।
আমি এর মধ্যেই সনোলজিস্টের দেয়া সংকেতটা দেখে ফেলেছি, ছেলে হবে তার। বললাম, আমি বলব না, বাচ্চা হলে দেখে নিয়েন।
এই প্রসঙ্গে আগেও একটা পোস্ট দিয়েছিলাম।
আজকে আসলে অন্য একটা বিষয়ে লিখতে গিয়ে শুরুতেই এটার কথা মনে পড়ে গেল।
আজকে যেটা লিখতে চাচ্ছিলাম সেটা হল, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখি (সব সময় না কিন্তু) ছেলে বাবুরা অনেক চঞ্চল হয়, আর মেয়ে বাবুরা শান্ত-শিষ্ট। গতকাল এক মহিলা রোগী এসেছিল, সাথে তার স্বামী আর ছেলে। ছেলের বয়স ৮-৯ বছর হবে। এসেই আমার টেবিলের জিনিসপত্র ঘাটাঘাটি শুরু করে দিল।
আমি যতক্ষণ মহিলাকে দেখছিলাম ততক্ষণ সে তার গবেষণা চালিয়ে গেল। তার বাবা তাকে মানা করছে, কয়েকবার হাত ধরে টেনে সরিয়েও নিয়েছে, তবু তার গবেষণার উৎসাহের কমতি নেই। রুমে ঢুকেই ওয়েট মেশিনের উপর লাফ দিয়ে উঠে দেখল কত ওজন হয়েছে তার। পরে আমার কলমদানি উল্টে পাল্টে দেখতে গিয়ে সব কলম ফেলে দিল, আবার নিজেই সব তুলে সাজালো, পেপারওয়েটটার ওজন নিয়েও কিছুক্ষণ গবেষণা করল। এরপর ডেস্ক ক্যালেন্ডার নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বাবার হাতে একটা মারও খেল, ক্যালন্ডারটা হাতে তুলে নিয়ে আর কিছুতেই বসাতে পারছিল না।
শেষে আমিই তার হাত থেকে নিয়ে ঠিক করে বসালাম। যাবার সময় তার বাবা বকতে বকতে গেল, এই জন্য তোরে নিয়া কোথাও যাইতে ইচ্ছা করে না।
এর আগের দিনই এক মহিলা এসে আমাকে বলল, আপা আমার মেয়েটাকে নিয়ে আসব আপনার কাছে, আপনি একটু তাকে বলে দিবেন যেন ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করে আর আমার কথা শোনে, ও আবার ডাক্তার আন্টি যা বলে তাই করে। এরপর নিয়ে আসল একটা সাড়ে তিন বছরের ফুটফুটে মেয়েকে। সে রুমে ঢুকেই আমাকে মিষ্টি গলায় সালাম দিল।
আমি সালামের উত্তর দিয়ে তাকে বসালাম। সে আমার প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর খুব সুন্দর করে দিল। পুরোটা সময় শান্ত হয়ে বসেছিল। প্রেসক্রিপশন লেখার পর আমি বললাম,
তুমি কিন্তু মামনি ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করবে, নাহলে তোমার অসুখ ভালো হবে না আর আম্মু যা বলবে শুনবে, যা খেতে বলবে খাবে, কেমন?
সে সাথে সাথে ঘাড় নেড়ে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে খাবো, কিন্তু আমি আজকে ভাত খেয়েছি তো।
-তাই নাকি? খুব ভালো মেয়ে তো তুমি।
প্রতিদিন এভাবে ঠিকমত খেয়ো তাহলে।
-আচ্ছা খাবো।
যাবার সময় নিজেই আবার সালাম দিয়ে দিল।
মনে মনে ভাবলাম, এই দুই পিচ্চিকে পাশাপাশি দেখলে কেউ আর ছেলে বাবুর জন্য উতলা হত না মনে হয়।
তাই বলে আবার এমন না যে ছেলে বাবু আমার পছন্দ না।
আমার দুই ভাগ্নে আমার খুব খুব প্রিয়। ওরাও কিন্তু ভীষণ রকমের চঞ্চল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।