খুনীরা নিজেদের কে মহাবীর । খুনের পরে ওদের ব্যাচ পরিয়েছিল । জিয়া ওদের পুরুস্কৃত করেছিল । ওরা বলত ওরা গ্রেট জব করেছে , দেশোদ্ধার করেছে - তবু আদালতের কাঠগরায় দারিয়ে চোখের পানি ফেলেছিল যখন বিচারপতি তাদের ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে মারার রায় দিয়েছিল ।
বিচারপতি জিগ্গাসা করেছিলেন যে , তোমরা যদি বংগবন্ধুকে মেরে মহৎ কাজই করে থাকো তবে আজ কেন এই চোখের জল ? -- খুনীরা মাথা নীচু করে নিশ্চুপ ছিল ।
আর এখন ফাসির সময় বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনির কেউ কেউ জল্লাদের পা জড়িয়ে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিল। বলেছিল, আমাকে মাফ করো। আমি বাঁচতে চাই।
মহিউদ্দিন চিৎকার করেছে_ বলেছে, 'আমাকে ছেড়ে দাও, শেষবারের মতো মাফ করে দাও। '
জল্লাদ শাহজাহান, কালু আর হাফিজ মিলে চ্যাংদোলা করে মহিউদ্দিন কে ফাসির মন্চে নিয়েছিল
ওরা নাকি মহাবীর ।
মহৎ .....ওরা নাকি বিদ্রোহী সেনা ..
লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) কোনোভাবেই যেতে রাজি হয়নি ফাঁসির মঞ্চে। শেষ পর্যন্ত ভীষণ দর্শন হাফিজ ও শাহজাহান নামের দুই জল্লাদ পাঁজাকোলা করেই তাকে নিয়ে যায় ফাঁসির মঞ্চে। সেখানেও জল্লাদ কালু তাকে ধরে রেখেছিল।
সন্ধায় শুনলাম রবিবারের মধ্যে ফাসি হবে । তখন স্বপ্নের মত মনে হয়েছিল ..সত্যি ফাসি হবে তো ? কোন ঝামেলায় আবার আরো ৪০ বছরের জন্য ব্যাপার ঝুলে যাবেনা তো ? আমার এমন মনে হচ্ছিল ।
রাত সারে আট টার দিকে আমাকে একজন ফোন করল । হাপাচ্ছিল - হাবীব হাবীব ..সিভিল সার্জন , সোবহান সাহেব আরো সবাই যাচ্ছে , যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে..
- কোথায় ?
আরে আজ রাতেই ওদের ঝুলিয়ে দেবে - জয় বাংলা জয় বাংলা , বলে কেদে ফেলল...
আমি হতবাক - তাই নাকি ? আজই ? এখনই
- ইয়েস ..ইটস টু নাইট ।
.....
কথা শেষ করে আমি আরেকজনকে ফোন করলাম - শুনলাম রাতে কিছু হচ্ছে ।
- হ্যা , সামান্যতম দেরী করার কোন কারন নাই । যত দ্রুত হয় ততই ভালো ।
আমার বাসায় টিভি নাই , নেট নাই । সারাদিন কাজ করে খুব টায়ার্ড ছিলাম , সেদিন সারাদিন খাবার পর্যন্ত সময় আমি পাইনি শুধু চা ছারা ।
বাসায় ইকটু খাবার চেষ্টা করলাম । ভাবছিলাম টিভি বা নেট পেলে খুব ভাল হত ...
কিছুক্ষন পর আবার সেই ভাই ফোন করল - হাবীব ওরা নাজিমুদ্দিন রোড এ পৌছে গেছে ।
আমি বল্লাম ভাইয়া টিভিতে আসা উচিত ।
না হলে পরে আবার বলবে গোপনে ফাসি দিচ্ছে ।
- হ্যা টিভি নিউজ প্রচার শুরূ করবে । তুমি টিভি দেখো । ওদের তো নিউজ শুরূ করে দেবার কথা । পাবলিক গ্যাদারিং শুরু হচ্ছে নাজিমুদ্দিন রোডে ।
- আমি বল্লাম ভাইয়া টিভি নাই , আমাকে কাইন্ডলি আপডেট কইরেন , আমি এক্সাইটেড । ভাবতেছি বেরোয় পরব.. ঝুলাবে কখন ? শেষ রাতের আগে তো ফাসি হওয়ার ঘটনা কখনও শুনিনাই ..
- অ্যাজ আরলি অ্যাজ পসিবল ।
- তার মানে কি এখনি নাকি ? আরে কন কি পোলাপান সব জানান দেন ..জেল ঘিরে চিৎকার করূক - জয় বাংলা , জয় বংগবন্ধু - শালারা মরার আগ পর্যন্ত যেন ঐ নাম শোনে, ঐ নাম শুনতে শুনতে মরে - পূরা জেলখানা , ফাসির মন্চ , পায়ের নীচের মাটি , ফাসির কূপ যেন " জয় বংগবন্ধু " - চিৎকারে কাপতে থাকে ...
আমার গলা ধরে আসতেছিল ...চোখ ভিজে আসতেছিল..
আমি চুলা বন্ধ করে বের হয়ে পরলাম ....
The Execution of Killer of Bongobondhu
৭৫ এর ১৫ই আগষ্টে যখন বংগবন্ধু গুলির আওয়াজ শুনে একসময় নীচে নামতে গেলেন এবং বললেন এই তোমরা কি করছ বাইরে গুলি হচ্ছে বলে আবার উপরে উঠে আসলেন এবং শফিউল্লাহ সাহেব কে ফোন দিলেন ততক্ষনে জামাল নীচে নেমে গেছেন । একজন কাজের লোক ছিল সাথে সম্ভবত রমা ।
তখন বজলুল হুদা গুলি করতে করতে ৩২ নম্বরে ঢুকতেছিল ।
বারান্দার কাছে এসে জামালের দিকে গুলি ছুরছিল , তখন ঐ কাজের লোক চিৎকার করে হুদাকে বলল- আপনি কি করছেন উনি বংগবন্ধুর ছেলে ।
এই কথা শুনে হুদা পাশ ঘুরে ভাল করে ব্রাশ ফায়ার করল এবং জামাল সাথে সাথে নিহত হয়েছিল ..
রাত ১০টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার তৌহিদুল ইসলাম কনডেম সেলে গিয়ে খুনিদের ফাঁসির কথা জানায়-- 'হয়তো, আর আপনারা বেশি সময় পাবেন না। এখন থেকেই প্রস্তুতি নিন। আপনাদের কোনো শেষ ইচ্ছা আছে কি-না। থাকলে বলুন, সাধ্যমতো পূরণ করার চেষ্টা করা হবে।
' তাদের ভাবার জন্য কিছু সময়ও দেন সুপার। শেষ পর্যন্ত তারা কোনো ইচ্ছার কথাই
বলেনি।
রাত ১১টার দিকে সেলগুলোতে পাঠানো হয় রাতের খাবার। ভাত, রুটি ও সবজি।
সৈয়দ ফারুক রহমান চায় তার প্রিয় খাবার গরুর মাংস।
সুলতান শাহরিয়ার রশিদ পান করতে চায় দুধ।
তাদের এইসব খায়েশ পুরন করা হয় ।
আর পচাত্তরে যখন ৭ বছরের রাসেল মাঝরাতের প্রচন্ড গুলির আওয়াজে ভয়ে বাব মা পাশে কাউকে না দেখে চিৎকার করছিল - আমি মার কাছে যাব আমি মার কাছে যাব ...
তখন মায়ের কাছে নেবার কথা বলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয় ।
৭ বছরের একটা বাচ্চাকে মায়ের কাছে নেবার কথা বলে হত্যা করার মত ঘটনা প্রিথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন বর্বরতা আর কি আছে ?- আমি জানি নাই , কিন্তু যারা জাতীর জনকে এখনও কলন্কিত করতে চায় অপব্যাখা এবং মিথ্যা দিয়ে তাদের কাছে আমার এই প্রশ্ন ।
১৫ ই আগষ্টের পরের মূহুর্তে যখন খবর লন্ডন গেল ---
শেখ হাসিনা শোকে পাগল হয়ে কাদছিল চিৎকার করে বলছিল - আরে তোমরা কেউ রাসেল কে এনে দাও ।
বাচ্চা ছেলে ..কোথায় আছে ও ..ওকে ইকটু খাইয়ে দেই । ওকে খাওয়াতে হবে.. ওকে কে খাওয়াবে ...
তখনও শেখ হাসিনা পুরো নারোকীয় ঘটনা তখনো জানতেন না । তখনও তিনি পুরো খবর পাননি । বুঝতে পারেনি যে খুনীরা খোদার আরশ পর্যন্ত কাপিয়ে দিয়েছে । ৭ বছরের বাচ্চাকে মায়ের কাছে নেবার কথা বলে ব্রাশ ফায়ার করেছে ...
সেই শেখ হাসিনা সেই চির কষ্ট বুকে নিয়ে ২১ শে অগষ্টের পরে আজ প্রধানমন্ত্রী ।
১৫ কোটি লোকের প্রধানমন্ত্রী । আমি বলি- প্রিথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী ।
খুনীরা ফাসির আগে দুধ খায় , গরূ খায়...তাদের আত্মীয় আসে , স্বজন আসে দেখা করতে আবার টিভি পর্দায় দারায় গা জ্বালানো বক্তব্য দেয় ....এবং শ্পেশাল ট্রাইবুনাল না সাধারন বিচারিক কায়দায় তাদের বিচার করে ফাসির পরের দিন দালালরা জিকির করে - " আসামীর ফাসি "
আল কোরআনে আমি পরেছিলাম - " নিশ্চয়ই বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে উত্তম নিদর্শন । "
আর এখনও খুনীদের সন্তানরা এই বাংলার মাটিতে আছে - বংগবন্ধুর খুনীর আত্মীয় বা সন্তান হওয়া সত্বেও দেশের মানুষ তাদের সাথে সহাবস্হানে আছে ...১৫ ই আগষ্টের পরে থেকে এখন পর্যন্ত । এখনও তারা প্ল্যান করে ... ষরযন্ত্র করে ... আগষ্ট ট্রাজেডি ঘটায় ... শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র এই একটি কারনে সবকিছু ছাপিয়ে জাতী হিসাবে সম্ভবত প্রিথিবীর সবচেয়ে শালীনতা এবং শান্তিপ্রিয়তার উদাহারন বাংগালীই দিল , বংগবন্ধুর দেখানো পথে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।