আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অণুগল্পঃ অন্ধকারের খেলা



আসলেই সময় বড় অদ্ভুত! একটু আগে যাকে দেখে চিড়িয়াখানার বানরের খাচার সামনে দাঁড়িয়ে যেরকম মজা দেখি সেরকম মজা দেখছিলাম তার জন্যই খুব মায়া হলো। মনে হলো সামনে গিয়ে দাড়াই। মাথা নিচু করে হাত জোড় করে বলি ‘ক্ষমা করো। ’ এক বন্ধুর সাথে দাঁড়িয়ে আছি ফার্মগেটে। আনন্দ সিনেমা হলের পাশ ঘেষে যে বাস থামার সাব-লেন করা হয়েছে তার একটা ফুটপাতের উপর।

বাসের আশায়। সুর্য ডুববে ডুববে করছে। যে কোন সময় টুপ করে ডুবে যাবে। মনে মনে বিরক্ত হচ্ছি। সেই বিরক্ত ভাবটা আরো বেড়ে যাচ্ছে আনন্দ সিনেমা হলে লাগানো জায়ান্ট স্ক্রিনের ‘বাঁচতে হলে জানতে হবে’ এডভারটাইজ।

এত বাঁচারই কি দরকার বাবা? ঢাকা শহরটা আস্তে আস্তে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। একটা বাসের জন্য পচিশ মিনিট অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছি, তারপরেও কখন বাস আসবে কেউ জানি না। - দোস্ত খেয়াল করছ? - কি? - ওইযে ওই মেয়েটাকে। একটা মাল। - তোমার তো চোখ শালা ঐদিকেই যাইবো।

খুব ভালো লাগতাছে নাকি? আমার কাছে তো ক্ষেত লাগতাছে। মনে হইতাছে ক্ষেতের থেকে উইঠা আসছে। সাজ দেখছ। - আরে মামা, ঐটাই তো তোমারে কইতাছি, শালী একটা মাল। - মাল মানে? - মাল মানে মাল।

দুই নম্বর। নিবা নাকি, লাগবা বাজী। এতক্ষনে আমার খেয়াল হলো। ফার্মগেটে এইসময় এরকম কিছু মেয়ের আবির্ভাব ঘটে। জীবনের নির্মমতাটা যারা নিজেদের দেহ দিয়ে উপলব্দি করে।

এদের অবস্থানটা হয় আনন্দ-ছন্দ সিনেমা হলের একটু অন্ধকারাছন্ন যায়গায়। জীবন যাদের অন্ধকারে নিমজ্জিত তারা আলোতে আসতে ভয় পাবে এটাই স্বাভাবিক। এই মেয়েটা যে কোন কারনেই হোক আলোতে এসেছে। বোধকরি সাহস পেয়েছে সুর্য ডুবু ডুবু ভেবে অথবা জীবনের প্রয়োজনটা খুব বেশি। একজন থেকে একজনে ছুটে চলছে।

কথাবার্তা কি হয় তা কল্পনা করে নেয়া খুব কি কঠিন? গল্প উপন্যাসে কত কিছুই তো পড়া হয়। - কিরে যাবি নাকি? - কই? - আমার লগে। - আমি কি আপনের বউ লাগি নাকি? - হইলি একরাইতের জন্য। নিবি কত? - আমি কি রিকশা নাকি যে ভাড়া দিবেন। - তাইলে ভাড়া ছাড়াই চল।

পোসাইয়া দিমুনে। - কয়জন? - একলাই। - পাঁচশ টেকা লাগব। - পাঁচশ টাকায় তো কারিনারে পাওয়া যায়। তরে নিমু কেন? যা ভাগ।

তারপরেও ভেগে যায় না মেয়েটা। অন্য কারো চোখের ইশারায় বুঝে যায় সেখানে সম্ভাবনা। দে ছুট সেখানে। কখনো ভাগ্য ভাল হয় কখনো হয় না। যাক বাবা।

এতক্ষনে বিরক্ত ভাবটা কাটানোর একটা সুজোগ আসল। একটু আগে যেরকম বলেছি চিড়িয়াখানার বানরে খাচার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা যেমন ফিরে যাই আমাদের অতীতে, খুব করে ডারউইনের সুত্রটাকে যৌক্তিক প্রমানের জন্য লেগে যাই তেমনি এখন ফার্মগেটের বাস স্টান্ডে দাঁড়িয়ে আমরা দুই বন্ধুতে পতিতাদের অন্ধকার জীবনের কান্নাটাকে উপভোগ করি তাড়িয়ে তাড়িয়ে। একবারের জন্য মনে হয় না যে লোকটার সাথে মেয়েটা কথা বলেছে তার সাথে আমাদের পার্থক্য খুব বেশি না। হটাৎ দেখি একজায়গায় ভীড়। আরে, মহিলাটা তো সেন্সলেস হয়ে রাস্তায় পড়ে গেল।

একটু আগে এই মহিলাটা তো আমাদের সামনে দিয়েই গেল চৌদ্দ পনের বছরের একটা ছেলের হাত ধরে। ছেলেটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। ‘আরে বোন্ধার মতো দাড়াইয়া আছস কেন, পানি আন’ ‘কেন যে এইসব মহিলারা রাস্তায় বের হয়’ ‘গ্যাস্টিক আছে নাকি? ওই তাড়াতাড়ি গ্যাস্টিকের ঔষধ আইনা খাওয়া’ ‘আহারে’- এরকম অনেক শব্দ হতে হতে ভীড় বেড়ে যায়। সবাই কিন্তু কথাই বলে কেউ কিছু করে না।

যেন এইমাত্র চিড়িয়াখানার বানরের খাচার একটা বানর ডিগবাজী দিয়ে পড়েছে পানির চৌবাচ্চায়। আর আমরা দর্শকরা হাততালি দিচ্ছি সমানে। নজরটা সেন্সলেস মহিলার দিকে যাওয়ায় মেয়েটা হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আবার ফিরে এসেছে সে। হাতে একটা গ্লাসে পানি ভর্তি করে এসে ছেলেটাকে বলছে ‘বাবু তুমি গ্লাসটা ধরে পানি ছিটাওতো।

আমি ধরতেছি। ’ তারপর মহিলাটাকে জড়িয়ে ধরে নিজের ওড়না দিয়ে বাতাস করতে থাকে। আমি নিশ্চিত ওড়না দিয়ে বাতাসের এই সুজোগে কেউ কেউ অন্য কিছু খুজবে মেয়েটার স্ফিত বুকে। একটু আগাতেই বন্ধু আমাকে থামায় ‘করস কি হারামী, এইটা পকেটমারগো চাল হতে পারে। ভীড়ের সুজোগে পকেট কাটব।

’ তাইতো! থেমে যাই আমি। বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকি। কেন যে বাসটা আসছে না?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।