ছোটবেলায়, তখন আমাদের পুতুল খেলার বয়স। ছেলেরা অবশ্য পুতুল খেলে না, তুই ছাড়া আর কোন খেলার সাথী না থাকায় আমাকে খেলতেই হতো। পুরো বিল্ডিঙ্গে মাত্র দুটো পিচ্চিই ছিলাম আমরা। সেই হিসেবে তোরও আর কেউ ছিল না আমি ছাড়া। কিন্তু তোর স্বভাবে চাপিয়ে দেয়ার অভ্যাস সেই ছোটবেলা থেকেই ছিল।
তাই আমাকেই মানিয়ে চলতে হতো। তোর কথা না শুনলে হুলস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে দিতি, কেঁদেকেটে একাকার করতি। সেদিন যেমন, বৃষ্টির দিন ছিল, আমাদের বারান্দায় বসে খেলছিলাম। কি একটা কথা নিয়ে রেগে তোকে 'তুই' বলে ফেললাম। আর তোর সে কি রাগ।
কাঁদলি, আমার আম্মুর কাছে বলে দিলি। আম্মু মুচকি হেসেছিল সেদিন, মিথ্যে করে আমাকে একটু বকাও দিয়ে দিয়েছিল। তোর ছেলেমানুষির কথা মনে হলে এখনো হাসি আমরা মা-ছেলে। তারপরো তোর রাগ কমলো না, কয়েকদিন আমার সাথে কথাই বললি না। শুধু ভুলে একবার 'তুই' বলে ফেলার জন্য।
তারপর অনেকদিন চলে গেলো, অনেক শীত শেষে বর্ষা এলো, পৃথিবীটা সূর্যকে ঘুরে এলো অনেকবার। মাঝে বড় হয়ে গেলি তুই, আমি। তোর ফ্রকের জায়গা দখল করলো সালোয়ার-কামিজ, আমিও আর হাফপ্যান্ট পড়ি না। স্কুলের শেষভাগে পড়ি দুজনই। তুই সিরিয়াস ভালো স্টুডেন্ট হয়ে গেলি, এক্সামে প্লেস করিস, স্কুল ডিবেটের লিডার, সায়েন্স ফেয়ারে প্রজেক্ট দিস, শিশু আ্যাকাডেমি থেকে নৃত্যের পুরষ্কার নিয়ে আসিস।
আর আমি লেবেনডিস, কিচ্ছু করি না। না পড়াশোনা, না অন্যকিছু। আমার শুধু ডায়েরীর পাতাগুলো ভরে যেতে থাকে, কবিতা লিখে, তোকে ভেবে লেখা কবিতায়। আমার মনটাও বদলে গেছে, তোকে দেখার দৃষ্টি বদলে গেছে। আমাদের সম্মোধনটাও বদলে গেছে, আমরা 'তুই' ই বলি এখন, এখন আর তুই রাগ করিস না।
রাগ তুই অবশ্য করলি আবার, আবার কাঁদলি খুব তোকে একটা চিরকুট দেয়ায়। আবার তুই আম্মুকে বিচার দিলি, এবার আম্মু আমাকে বকা দিলো না, এবারো হাসলো, সে হাসি খুব করুণ ছিল। আম্মুর যে আমার ডায়েরী সব পাতা পড়া ছিল, তোকে ঘিরে আমার অনুভূতিগুলো জানা ছিল তার। আম্মু তার ছেলের জন্য শেষ চেষ্টা টুকু করেনি বলে আক্ষেপও ছিল। হয়তো বলতে চেয়েছিল তোকে, 'কি এমন ক্ষতি রে মা, আমার ছেলেটাকে একটু ভালোবাসলে!?' বলেনি, হয়তো আস্থা রাখতে পারেনি, নিজের যোগ্যতাহীন ছেলের জন্য তোকে চাইতে সাহস পায়নি।
এখনো আমরা মা-ছেলে তোর কথা বলি, দুজনই অভিনয় করি যেন কিছুই হয়নি, বেশ আছি। লুকিয়ে রাখি অনুভূতিগুলোকে!
ও, চিরকুটে লিখেছিলাম,
''তোকে আমার 'তুমি' ডাকতে ইচ্ছে করে খুব,
তুই কি আমার 'তুমি' হবি ?'' ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।