মায়ের আবৃত্তিটা খুব মনোযোগ দিয়ে শোনে এগার বছরের মৌমিতা। চুপচাপ। মায়ের গলাটা খুব সুন্দর। মাঝেমাঝে মৌমিতার খুব ইচ্ছা হয় মায়ের মতো করে পড়তে, আবৃত্তি করতে। অনেক সময় কবিতা বুঝে না, তবুও মায়ের গলায় কেমন জানি হয়ে উঠে পুরোটা।
এই যেমন এখন, কবিতা বুঝতে পারেনি কিন্তু এত সুন্দর লেগেছে যে আবারও মাকে আবৃত্তিটা করতে বলেছে মৌমিতা। মা, অনামিকা হক মেয়ের থুতনী ধরে একটু আদর করে। আবারও আবৃত্তি করে শামসুর রাহমানের কবিতা ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা। ’
নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছো আমার সত্তায়।
........................................................
..............................................
....................
..............
হে আমার আঁখিতারা তুমি উন্মিলিত সর্বক্ষণজাগরণে।
তোমাকে উপড়ে নিলে, বলো তবে, কী থাকে আমার ?
উনিশ শো' বাহন্নোর দারুণ রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি
বুকে নিয়ে আছো সগৌরবে মহীয়সী।
সে ফুলের একটি পাপড়িও ছিন্ন হ'লে আমার সত্তার দিকে
কতো নোংরা হাতের হিংশ্রতা ধেয়ে আসে।
এখন তোমাকে নিয়ে খেঙরার নোংরামি,
এখন তোমাকে ঘিরে খিস্তি-খেউড়ের পৌষমাস !
তোমার মুখের দিকে আজ আর যায় না তাকানো,
বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা।
- আচ্ছা মামনি, বর্ণমালা কি?
- বর্ণমালা হচ্ছে অ, আ, ই, ক, খ এগুলো।
- এগুলো দুঃখিনী কেন মা? এগুলোর কি মুখ আছে? সব তো একই রকম।
- না, মা। এগুলো সব একই রকম না। ধরো অ, অ এর সাথে যদি একটা আ-কার যোগ হয় তাহলে তা হয়ে যায় আ। ব এর সাথে যদি একটা ১ যোগ হয় তা হয়ে যায় ক।
- যাহ! মামনি, তুমি আমার সাথে মিথ্যা বলছো কেন?
- আমি মিথ্যা বলিনি মা।
এগুলো সব আলাদা আলাদা। একেকটা একেক রকম।
- আমিও তো জানি মামনি এগুলো একেকটা একেক রকম কিন্তু সব তো ছয় ডটের মধ্যেই। ১ নম্বর ডটে অ; ৩,৪ আর ৫ নম্বর ডটে আ; ১, ৩ নম্বর ডটে ক; ৪, ৬ নম্বর ডটে খ। তুমি মিথ্যা বলছো মামনি।
অনামিকা কোন কথা বলতে পারে না। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে অন্ধ মেয়েটার দিকে। কি করে সে তাকে বুঝাবে বর্ণমালা দেখতে কত সুন্দর। মেয়েটার কাছে তো সব কিছু ছয় ডটে বন্দী। ডটের স্পর্শে যে খুজে নেয় তার বর্ণমালা।
দুঃখিনী বর্ণমালা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।