Bangladesh: Dream
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নাট্যকার ও বাংলাদেশে অ্যাবসার্ড নাটকের পথিকৃৎ সাবেক সচিব সাঈদ আহমদ (৭৯) আর নেই। গতকাল ভোর সাড়ে ৫টায় ঢাকায়
ল্যাব এইড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। গত ৩১ ডিসেম্বর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তিনি স্ত্রী পারভীন আহমদ এবং বহু আত্মীয়, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তার মৃত্যু সংবাদে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
দেশের বরেণ্য শিল্পী-সাহিত্যিকরা ছুটে যান ল্যাব এইড হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় লালমাটিয়ায় নামাজে জানাজা শেষে বিকেলে আজিমপুর পারিবারিক গোরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। এর আগে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। সৈয়দ শামসুল হকসহ বিশিষ্ট লেখক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ লাশ অ্যাম্বুলেন্স থেকে কাঁধে তুলে নিয়ে আসেন মিনার প্রাঙ্গণে।
মরদেহে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে অন্তিম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের, সৈয়দ শামসুল হক, আতিকুল হক চৌধুরী, কাইয়ুম চৌধুরী, আতাউর রহমান, মফিদুল হক, ম হামিদ, সৈয়দ হাসান ইমাম, রামেন্দু মজুমদার, কামাল লোহানী, মামুনুর রশীদ, খ ম হারুন, গোলাম কুদ্দুছ, হাসান আরিফ, পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস, সংস্কৃতি সচিব হেদায়েত উল্লাহ আল মামুন, খুশী কবির, ঝুনা চৌধুরী, ফকির আলমগীর, সঙ্গীতা ইমামসহ শিল্প-সাহিত্যাঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবৃন্দ।
এছাড়া বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়, থিয়েটার, আরণ্যক, নাগরিক নাট্যাঙ্গন, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঋষিজ, পদাতিক নাট্য সংসদসহ বহু সংগঠন ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে সাঈদ আহমদের মরদেহে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে অনার্সসহ এমএ এবং লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকসের পোস্ট গ্রাজুয়েট সাঈদ আহমদ ছিলেন বহু গুণের অধিকারী। ছাত্রজীবনেই সঙ্গীত, চিত্রকলা আর নাটকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং ভাষা আন্দোলন চলাকালে এমএ ক্লাসের ছাত্র সাঈদ আহমদ নাটক রচনা শুরু করেন ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে। প্রখ্যাত এই নাট্যকার ছিলেন চিত্রকলা ও সঙ্গীতেরও একজন উচ্চমানের বোদ্ধা। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন অত্যন্ত মিশুক আর রসজ্ঞ আড্ডাবাজ।
পুরান ঢাকার সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান সাঈদ আহমদ এক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বড় হয়েছিলেন। ফলে মেধা আর সৃজনশীলতার বহুমাত্রিক দীপ্তি তিনি ছড়াতে সক্ষম হন। তার উল্লেখযোগ্য মৌলিক নাট্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে কালবেলা (প্রথমে লেখেন ইংরেজিতে), মাইল পোস্ট, তৃষ্ণায়, সারভাইবাল, প্রতিদিন একদিন, শেষ নবাব। প্রবন্ধ-নিবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে আর্ট ইন বাংলাদেশ, ফাইভ পেইন্টারস, পেইনটিং ইন বাংলাদেশ, কনটেম্পরারি আর্ট, কনটেম্পরারি গ্রাফিক আর্টস অব বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গীতের দিকপালদের জীবনগাথা রচনা করেছেন 'বাংলাদেশের সুর স্রষ্টারা' শিরোনামে।
তার বাংলায় অনূদিত বিশ্বনাটক, টেকো অভিনেত্রী, দ্য থিং মাইল পোস্ট, সারভাইবাল উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশে বিদেশি নাটক জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রেও উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন সাঈদ আহমদ। আশির দশকে বিটিভিতে 'বিশ্বনাটক' নামের একটি চমৎকার অনুষ্ঠান উপস্থাপন করতেন তিনি, যেখানে বিশ্বখ্যাত নাট্যকারদের পরিচিতি এবং তাদের মহাকাব্যিক মেজাজের অ্যাবসার্ড নাটক তুলে ধরার পাশাপাশি তার অনূদিত বিশ্বনাটক প্রচার হতো।
নাট্যকার হিসেবে দেশে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, সুফি মোতাহার হোসেন পুরস্কার এবং ফ্রান্সের লিজিয়ন দ্য অনার ও জার্মানির ট্রাস্টেল অ্যাওয়ার্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। তার নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ কয়েকটি চেয়ার আর গ্যালারিও প্রতিষ্ঠিত রয়েছে বিশ্বনাট্যাঙ্গনে অবদানের গৌরব হিসেবে।
(সমকাল প্রতিবেদক)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।